চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ সকলেরই জানা, ডেঙ্গু রোগ ছড়াতে পুরুষ এডিস নয়, স্ত্রী এডিস মশাই দায়ী। আর এর বিস্তারেও ভূমিকা ওই স্ত্রীজাতীয় মশার। তবে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের প্রেক্ষাপটে নতুন এক উদ্ভাবনের কথা জানাচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যাতে দাবি করা হয়েছে, স্ত্রীজাতীয় নয়, পুরুষ জাতীয় মশাকে বন্ধ্যাকরণের মধ্য দিয়ে এই মশার বংশ বিস্তার রোধ করা যাবে। যার নাম দেওয়া হযেছে ‘স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক’ বা এসআইটি। এই পদ্ধতিতে পুরুষ মশাকে বন্ধ্যা করে ছাড়া হবে প্রকৃতিতে। এর ফলে স্ত্রী মশা ডিম পারলেও তা নিষিক্ত হয়ে মশা জন্ম নেবে না।
প্রতিষ্ঠানের খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কীট জীব প্রযুক্তি বিভাগের বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাহফুজা খান।
এই পদ্ধতি ব্যাবহার করে দূর ভবিষ্যতে ব্যাপক আকারে মশা নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন তিনি।
শনিবার (৩ আগস্ট) খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের এই উদ্ভাবন ঘুরে দেখেছেন বিজ্ঞান ও প্রযু্ক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এসময় তিনি এই উদ্ভাবনের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে পছন্দ করি। যারা সরকারে আছেন, দায়িত্বশীল জায়গাগুলোতে যারা আছেন তারা সব সময় চান এমন কিছু করতে যেটি দেশের মানুষের উপকারে আসবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উদ্ভাবন দেশের মানুষের উপকারে আসবে।’
তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে যেভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, এই পদ্ধতিটি অনেকটা সে রকমেরই। পদ্ধতির প্রায়োগিক বিষয়টি গবেষণাগারে কার্যকর বলে প্রমাণ হয়েছে। এখন মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
এসআইটি পদ্ধতিতে পুরুষ জাতীয় এডিস মশাকে গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে বন্ধ্যাকরণ করা হয়। এই মশা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রয়েছে এমন এলাকায় অবমুক্ত করা হলে তা স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে মিলিত হয়। আর ওই স্ত্রী এডিস মশা যে ডিম বা লার্ভা নিষিক্ত না হওয়ায় মশার বংশ বিস্তার কমে যেতে থাকে।
এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র বন্ধ্যা পুরুষ মশাই প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে। যেহেতু পুরুষ মশা ডেঙ্গুর জীবাণু বহনে অক্ষম, তাই এর মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটার কোনো সম্ভাবনা নাই। আবার পুরুষ এডিস মশা মানুষকে কামড়ায় না। কাজেই কমিশনের এসআইটি পদ্ধতিটি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম বলে আশা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি। পাশাপাশি এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, তাই পরিবেশের এর কোনো বিরূপ প্রভাব নেই।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের কাছে এই বিষয়টি বিস্তুারিত তুলে ধরা হয়। এ সময় তিনি শিগগিরই মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীর এই পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক, সদস্য সানোয়ার হোসেন, পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক এম. আজিজুল হক, এনআইবির মহাপরিচালক মো. সলিমুল্লাহ, বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা।