সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ও মাহমুদা খানম মিতু দম্পতির দুই শিশুর জবানবন্দী গ্রহনকালে তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোঃ ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন বাবুল আকতারের ছোট ভাই এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান।
সোমবার(৪ জুলাই) সকাল ১০টায় মাগুরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে হাজির হয়ে মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোঃ ওমর ফারুক শিশুদের তিন ঘন্টা সময় ধরে জবানবন্দী গ্রহন করেন।
সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই শিশু সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৩ জুন ২০২১ তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্রুনাল নম্বর ০৭, শিশু আদালত চট্রগ্রাম এর জেলা ও দায়রা জজ জনাব ফেরদৌস আরা বাবুল আক্তারের দুই শিশু সন্তানকে মাগুরা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে এসে শিশু আইন মেনে জবানবন্দী গ্রাহনের নির্দেশ দেন। এক বছর আগে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা না এসে শিশুদের চট্রগ্রামে হাজির করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। যা পরবর্তীতে শিশুদের চাচা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মহামান্য হাইকোর্টে রিভিশন করেন। মহামান্য হাইকোর্ট ৮ জুন ২০২২ তারিখে আবারও তদন্ত কর্মকর্তাকে বাবুল আক্তারের শিশু পুত্র ও কন্যাকে মাগুরা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ে এসে জবানবন্দী গ্রহনের নির্দেশ প্রদান করেন বলে শিশুদের চাচা এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান দাবি করেন।
এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বলেন, হাইকোর্টের আদেশ ছিল ভয় ভীতিহীন পরিবেশে বাচ্চাদের জবানবন্দী গ্রহন করতে হবে। জবানবন্দী গ্রহণকালে তদন্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টের আদেশের বাইরে অতিরিক্ত একজন লোক নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন। জবানবন্দী গ্রহণকালীন সময় তদন্ত কর্মকর্তা কক্ষের বাইরে এসে উর্দ্ধতন একজনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে সমাজসেবা কার্যালয়ের ছাদে চলে যান। এছাড়া ঝিনাইদাহ থেকেও পিবিআই’র একটি টীম সকালে এসে সমাজ সেবা কার্যালয়ে অবস্থান নেন। এর মাধ্যমে শিশু বাচ্চারা মানসিকভাবে চাপে পড়ে। তিনি বলেন, এটি আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লংঘন। এ ব্যাপারে আমরা মহামান্য আদালতকে অবহিত করবো।
তিনি আরোও জানান, বাবুল আক্তার এর শিশু সন্তান আক্তার মাহমুদ মাহিরকে এর আগেও জবানবন্দী গ্রহন করেছিল সিএমপি মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান। এই তদন্ত কর্মকর্তা মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন, শাহিদা মোশারফ, শায়লা মোশারফ, কাজের মেয়ে ফাতেমা বেগম @ বাপ্পি মনোয়ারা ও সিকিউরিটি গার্ড আব্দুস সাত্তার এর জবানবন্দী গ্রহন করেন। এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বলেন, এখন নতুন করে আবার তাদের জবানবন্দী গ্রহণ করা হচ্ছে। তদন্ত সংস্থা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বাবুল আকতারকে ফাঁসানোর জন্য এটি করছে। এ ছাড়া তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে আমরা দেখেছি এহতেশামুল হক ভোলা নামের একজনকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এতে প্রমান হয় বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ সাজানো এবং বানোয়াট। উর্ধ্বতন এক পিবিআই কর্মকর্তার নির্দেশে বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে এ সব করা হচ্ছে। গত দেড় বছর যাবৎ অন্যায়ভাবে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ আনতে পারে নি। আমরা বাবুলের মুক্তি দাবী করছি এবং সমপূর্ণ নতুন তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দবি করছি। এই মামলার মুল পরিকল্পনাকারী কামরুল শিকদার মুছা কে পুলিশ গ্রেফতার না করে আড়াল করে রেখেছে। আমরা সরকারের কাছে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী জানাচ্ছি।
বাবুল আক্তারের পিতা অবসরপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ পরির্দশক আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া জানান, শিশু বাচ্চাদের বিরতিহীন ভাবে ৩ ঘন্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ চলকালে ওয়াসরুমে যাওয়ার কথা বলে বাইরে চলে আসে। এবং ১০ মিনিট পর মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করে আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। মহামান্য হাইকোর্ট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা, একজন মহিলা পুলিশ অফিসার মাগুরা সমাজ সেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা ও শিশু দুইটির দাদাকে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা সেখানে অতিরিক্তি পুলিশ সদস্য চট্টগ্রাম পিবিআই’র এএসআই রাজিবকে সাথে রাখেন। এছাড়া মেজবাহ নামে পিবিআই চট্টগ্রামের এক জন পরিদর্শক সকাল সাড়ে ৯ টায় সমাজ সেবা কার্যলয়ে উপস্থিত হয়ে বা”চাদের সাথে আসা চাচী ফুফিদের সাথে অসজন্যমুলক আচরন করেন।
মিতু হত্যা মামলার পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোঃ ওমর ফারুক জানান, মাহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা মাগুরা জেলা সমাজ সেবা কার্যলয়ে এসেছি মিতু হত্যা মামলায় তার শিশু সন্তানের স্বাক্ষ্য গ্রহনের জন্য। আমাদের যতটুকু প্রয়োজন আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আক্তার মাহমুদ মাহিরের এর আগেও জবানবন্দী গ্রহন করেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে একাধিকবার স্বাক্ষ্য গ্রহন করতে পারি।
উল্লেখ্য, ৫জুন ২০১৬ তারিখে শিশু সন্তানকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে জিউিসির মোড়ে নির্মম ভাবে খুন হয় মাহমুদা খানম মিতু। ঐ সময়ে আক্তার মাহমুদ মাহিরের বয়স ছিল ৬ বছর এবং কন্যা তাবা”ছুমের বয়স ছিল ৪ বছর।