তালায় মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মুসলিম নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজী) পদে এক বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বিতর্কিত ঐ ব্যক্তি হলেন তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শিরাশুনি গ্রামের শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে ফরিকুল ইসলাম ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কতিপয় ব্যক্তির যোগ সাজসে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। তবে, দায় এড়িয়ে নিয়োগ বোর্ড কর্মকর্তারা বলেন, রাজকারের বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত নন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
জানা গেছে, তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জন্য একজন মুসলিম নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজী) পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই পদে নিয়োগ পেতে ১২জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স মঞ্জুরীর একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৫ সদস্যের কমিটির সভাপতি হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (তালা-কলারোয়া) এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। এছাড়া তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইসলামকাটি সাব-রেজিস্ট্রার উপদেষ্টা মঞ্জুরি কমিটিতে রয়েছেন। এই কমিটি গত ১৩ এপ্রিল বেলা ১১টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক সভার আয়োজন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আবেদনকারী জানান, শুধুমাত্র নিয়ম পালন করার জন্য তাদেরকে সেখানে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিলো। কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনো পরীক্ষা। তারা বলেন, আবেদন কারীদের মধ্যে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছে। আবেদনকারী ফরিকুল ইসলামের বাবা শেখ লুৎফর রহমান একজন রাজাকার । প্রায় ১৪ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ওই ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। মোটা টাকার বিনিময়ে এধরণের সাজানো নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে নিরপেক্ষভাবে মেধা অনুযায়ী কাজী নিয়োগের আহবান জানিয়েছেন একাধিক আবেদনকারী।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নজির উদ্দীন মোড়ল জানান, শিরাশুনি গ্রামের গহর আলীর ছেলে লুৎফর শেখ একজন তালিকাভুক্ত রাজাকার এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এমএম আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রায় ৪০ বছর আগে ফরিকুলের বাবা লুৎফর মারা যায়। তার বাবা রাজাকার ছিলেন কিনা আমার জানা নেই। এখন শুনছি রাজাকার তালিকায় নাম আছে।
এ বিষয়ে নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার লাইসেন্স মঞ্জুরি কমিটির সদস্য সচিব ও ইসলামকাটি সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ মইনুল হক বলেন, গত ১৩ তারিখ উপস্থিত আবেদনকারীদের ভাইভা নেওয়া হয়েছে। তবে, কোনো প্রার্থীকে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এছাড়া কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্যই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন। কারণ মুসলিম নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার (কাজী) পদের নিয়োগে কোনো পরীক্ষা নেয়ার বিধি বিধান না থাকায় কমিটি যাকে মনোনীত করবেন, তিনিই নিয়োগ পাবেন। কয়েক লাখ টাকায় এক রাজাকার পুত্রের নিয়োগের বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আবেদনকারীদের মধ্যে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি জানার পর তার সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কবে নাগাদ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে এমন জিজ্ঞাসায় সদস্য সচিব বলেন, এমপি সাহেব ভারতে আছেন। তিনি আসার পর নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, ম্যারেজ রেজিষ্ট্রারের নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হয়েছিল তবে চূড়ান্ত কিছু হয়নি। এরপর তালিকা যাচাই বাছাই করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। আমি ওই কমিটির একজন সদস্যমাত্র।’ এ সময় রাজাকার পুত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
তবে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ফরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খুব ছোট থাকতে আমাদের পিতা মারা গেছেন। পিতা রাজাকার ছিল আজ পর্যন্ত কোনো দিন জানতে পারিনি। এখন শোনা যাচ্ছে।