সাতক্ষীরা তালায় একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য চিত্রশিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর এর ৮৯ তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। রবিবার সকালে তালা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমীর হলরুমে এক আলোচনা সভা ও চিত্রাঙ্কন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা ১ (তালা-কলারোয়ার) সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ।
সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক শেখ মোসফিকুর রহমান মিলটনের পরিচালনায় সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী চিত্রশিল্পী পরিবারের সদস্য সৈয়দ দিদার বখ্ত, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাফী আহমেদ, তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ট ইন্সটিটিউট এর অধ্যাপক শেখ আফজাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চিত্রশিল্পী পরিবারের সদস্য তালা উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য সৈয়দ জুনায়েদ আকবর। এসময় বক্তব্য রাখেন প্রয়াত শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর এর ভ্রাতুষ্পুত্র সৈয়দ ফিরোজ কামাল শুভ্র, শারমিন আকবর হাশেমী প্রমুখ। এসময় উপস্থিত ছিলেন তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুরশীদা পারভীন পাপড়ী, তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান।
আলোচনা শেষে চিত্রাংকন প্রতিযোগিদের মাঝে চারটি ক্যাটাগরিতে ১ম, ২য়, ৩য়দের মাঝে ক্রেচ ও শুভেচ্ছা সনদ প্রদান এবং অংশগ্রহণকারীদের মাঝে শুভেচ্ছা সনদ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, সৈয়দ জাহাঙ্গীর ১৯৩৫ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার তেঁতুলিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত হাশেমী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর সৃষ্টিশীল শিল্পী প্রতিভার কারণে ১৯৮৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৯২ সালে চারুশিল্পী সংসদ তাঁকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে। ২০০০ সালে মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে শশীভূষণ সম্মাননা সহ অন্যান্য সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইকবাল রোডের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর।
আলোচনায় তার কর্মজীবনের নানা দিক তুলে ধরে আলোচকবৃন্দ বলেন শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তাঁর হাত দিয়েই চালু হয় শিল্পকলা একাডেমিতে চারুকলা বিভাগ। দক্ষিণ অঞ্চলের একমাত্র আর্ট কলেজ খুলনা আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠায় ছিল তার অনন্য ভুমিকা। যা বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট। এছাড়া তিনি তার কর্মজীবনে শিল্পকলা একাডেমির দ্বিবার্ষিক আন্তর্জাতিক এশিয়ান চিত্রকলা প্রদর্শনী শুরু করেন। তার উদ্যোগে জেলা উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজনও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।
শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর তাঁর ক্যানভাসে তুলে এনেছেন গ্রাম বাংলার প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা, নির্মাণ শৈলীতে ছিল বিচিত্র ব্যাঞ্জনা যা তাঁর সৃষ্টিকে করে তুলেছে বৈশিষ্ট্যময়। তিনি ছিলেন প্রকৃতি ও নিসর্গ নির্ভর সম-বাস্তববাদী শিল্পী। মূর্ত ও বিমূর্ত উভয় ক্ষেত্রেই রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। তাঁর এই ভিন্নধর্মী শিল্পকর্মের কারণে তিনি হয়ে উঠেছেন সমসাময়িক শিল্পীদের একজন।