অশ্লীল অঙ্গ-ভাঙ্গি আর শারিরীক কসরতের পর রোগীর অতীত-ভবিষ্যৎ বাণীতে বাঘের মত গর্জনে কাপিয়ে তুলছেন কক্ষ, ভীত-তটস্থ্য রোগীকে চড়-থাপ্পড় মারছেন। জ্বীনের বাদশা মুন্নার মাঝে এখন জ্বীনের অবস্থান, তাই অদৃশ্য শক্তি-বলে পাকা বিল্ডিং আঘাত হানছেন বারবার। রোগী ছাড়া অন্য কেউ কক্ষে ঢুকলেই গ্রাস করার উপক্রম জ্বীনের বাদশার! মুসকিলে আহসানে আগত বাড়ীর আঙ্গিনায় শতাধীক মানুষের অধীকাংশই নারী। ভীড় সামলাচ্ছেন ৩/৪ জন কর্মচারী। আগতদের কেউ কঠিন রোগগ্রস্থ্য, কারো সংসারে অশান্তি, জ্বীনের মাধ্যমে নাকি ক্যান্সারের মত রোগও ভালো হয় শুনে এসেছেন শত শত মানুষ। কথিত জ্বীনের বাদশা মুন্নারাজের নাকি জ্বীন ভারণ ও তৎবির -তাগাদা করার লাইসেন্স দিয়েছে সরকার, তাই দুর-দুরান্ত থেকে শেষ চিকিৎসায় আশায় লোকজন এসেছেন তার আস্তানায়।
সরেজমিন,তালা উপজেলার জালালপুর গ্রামে শেখ শওকত আলীর পুত্র আজব জিনের বাদশা মোহাম্মদ মুন্না ওরফে মুন্নারাজ খান (৪০), এর আস্থানায় গিয়ে এসকল দৃশ্য চোখে পড়ে। মুন্নারাজ জানায়, তার লাইসেন্স আছে। কিসের লাইসেন্স জানতে চাইলে, বিশাল এক প্যানা ব্যানার দেখিয়ে হুংকার দিয়ে মুন্না বেশ কয়েকজন বড় বড় সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতার নাম জানায়, তারাও নাকি সমস্যা নিয়ে তার কাছে আসে । মুন্নাকে প্রশ্ন করতেই হুংকার ছেড়ে বলে, সরকার আমাকে লাইসেন্স দিয়েছে, এখন তোরা চলে যা নইলে জ্বীন তোদের ক্ষতি করবে। জ্বীনের বাদশা মুন্না দিনভর ব্যাস্ত জ্বীন ভারণে, তাই সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলার সময় নাই । কথিত জ্বীনের বাদশা মুন্না রাজের পিতা শেখ শওকত আলী জানান, তার ছেলের লাইসেন্স আছে। বলে বাড়ীর সামনে টানানো বিশাল একটি প্যানা ব্যানার দেখান তারা,তাতে নিবন্ধন নম্বর সম্বলিত সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে দেওয়া অনুমতির কপি পেষ্ট। তাতে আপদ-মস্তক কিছুই বোঝার উপায় নেই। এ সময় রোগীদের কে দেওয়া সরকারী লগো সম্বলিত একটি ভিজিটিং কার্ড খোন তারা।
এলাকাবাসী জানায়, এটাও তার প্রতারণা, সমাজসেবার নামে জ্বীন ভারনের প্রতারণা করছে মুন্না। এলাকবাসী আরও জানায়, কথিত জিনের বাদশা মুন্নারাজের “আল্লাহর দান” নামে জিনের বাদশা’র আস্তানা খুলে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণার দায়ে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ভ্রাম্যমান আদালতের ২ মাসের কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। জেল থেকে বেরিয়ে, সেই প্রতারনার ব্যবসা করতে ২০১৭ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে একটি রজেষ্ট্রিশন করিয়ে ছিলেন সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য। তারপর আর আদৌ নবায়ন করার সময় হয়ে ওঠেনি।
তালা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সুমনা শারমিন জানান, আমরা তো কবিরাজি বা জ্বীন ভারণের অনুমতি দিতে পারি না। যদি সে এমনটি করে, তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রাজির সরদার জানান, ডিজিটাল যুগে জ্বীনের দ্বারা চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষ ঠকানো ছাড়া আর হতে পারে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিবো।
তালা ওসি মেহেদী রাসেল জানান, প্রতারণার দায়ে তাকে আগেও গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল দেওয়া হয়, সে আবার এমনটি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।