সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সহকারী কমিশানার (ভূমি) অফিস দূর্ণীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নামজারি, নাম সংশোধন সহ ভূমি সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা সমাধানে গরীবের পকেট কাঁটা হচ্ছে। এই পকেট কাঁটার মূল হোতা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিরাজ হোসেন, বড়বাবু আব্দুল হাই ও নাজির তপন কুমার সরদার। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমানের নাম ভাঙিয়ে প্রতি নিয়ত পকেট কাঁটছেন এই চক্রটি। ঘুষের টাকা হাতানোর জন্য এই চক্রটি একটি দালাল সিন্ডিকেট গঠন করেছেন। এই সব দালালদের মাধ্যমে তারা ঘুষের টাকা গ্রহণ করেন। দালালদের মাধ্যমে ঘুষের টাকা না দিলে মাসের পর মাস ফাইল পড়ে থাকে আর দালালদের দায়িত্ব দিলে হর হামেশায় কাজ হয়ে যায়।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কোনো জমির নামজারি করতে হলে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। এরপরে শুরু হয় ঘুষ বাণিজ্য। আবেদনের পরে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি অফিস থেকে প্রত্যয়ন নিতে হলে দিতে হয় ঘুষ, এরপর সার্ভেয়ারের প্রত্যয়নেও ঘুষ এমন কি বাড়বাবু ও নাজিরের টেবিলে ঘুষের টাকা জমা না হলে এসিল্যান্ডের টেবিলে ফাইল যায় না। এভাবে প্রতিনিয়ত একজন সেবা প্রত্যাশি কে ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিয়ে নামজারি করাতে হয়। বর্তমান বড় বাবু ও নাজির যোগদান করার পরে ঘুষের ফর্মুলারও পরিবর্তণ হয়েছে। তারা উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন নাজির ও বাড়বাবু দুই টেবিলে ভাগ করে নিয়েছেন। সে অনুযায়ী ঘুষের টাকা জমা হয় বলে জানা গেছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, নাজির তপন কুমার সরদার সেবা প্রত্যাশিদের কক্ষের বাইরে বসিয়ে রেখে দরজা আটকিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ন করছেন। আর সেবা প্রত্যাশিরা ঘন্টার পর ঘন্টা স্বাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন। এসময় তারা বলেন, সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে আমরা কোনো মানুষই না। আমাদের বসিয়ে রেখে তারা অতিথি অপ্যায়নে ব্যাস্ত।
নগরঘাটা গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, আমি নামজারি করতে আনছার নামে এক ব্যক্তির কাছে ৮ হাজার টাকা দিয়েছি। এখনো কাগজ হাতে পায়নি। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আগের এসিল্ডের সময় ৩-৪ হাজার টাকায় নাম জারি করা যেত এখন ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা না দিলে কাজ হয় না। অফিসে নতুন কর্মকর্তা আসলেই ঘুষের পরিমান বাড়ে। এখন দেখছি জমিজমা না থাকায় ভালো ছিলো।
তালার আবু জাফর সহ একাধিক সেবা প্রত্যাশী বলেন, নামজারি করতে সরকারী খরচ ১২০০ টাকা। কিন্তু ঘুষ না দিলে কাজ হয় না। নাম জারি করতে প্রতিটি ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে হয়। উপজেলা সহকারী ভূমি অফিস থেকে নামজারি করতে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা নেয় অথচ সরকারী খাতে জমা হয় মাত্র ১২ শত টাকা, বাকি টাকা চলে যায় অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেটে। তারা এসিল্যান্ডের নাম ব্যবহার করে এই টাকা গ্রহণ করেন। নামজারি করতে হলে সরকারী খরচের টাকা বিকাশের মাধ্যমে জমা দেয়ার কথা থাকলেও বড়বাবু ও নাজির নিজের হাতে টাকা নেন। নিয়ম অনুযায়ী কোনো টাকায় অফিসের লোকের হাত দেয়ার সুযোগ নেই।
কয়েকজন দালাল চক্রের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আগের অফিসারদের ১ হাজার টাকা দিলে হতো এখন ফাইল প্রতি দিতে হয় ১৬শ টাকা। অফিসার সহ নতুন কর্মকর্তারা যোগদানের পর ঘুষের পরিমান বেড়েছে। আপনার কাজ থাকলে আমাদের দিলে কম খরচে করে দিব তবে ৫ হাজারের নীচে হবে না।
পরিচয় গোপন করে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সহকারী কমিশনার অফিসের অফিস সহকারী জুয়েল বলেন, যে কোনো জমির নামজারি করতে গেলে সমস্যা না থাকলে ৬ হাজার টাকা লাগবে, আর যদি সমস্যা থাকে তাহলে টাকা আরও বেশী লাগবে। প্রকৃত কত টাকা লাগবে কাগজ না দেখে বলা যাবে না।
আপনাদের কাজের কোনো সমস্যা হবে না। আমি সবসময় স্যারের সাথে থাকি, অন্যদের কাছে কাজ দিলে হয়ত দেরী হবে আমার কাছে দিলে কোনো সময় লাগবে না। আর আমার কাছে টাকা মার যাবার সম্ভবনা নেই।
উপজেলা সহকরী কমিশনার ভূমি অফিসের বড়বাবু আব্দুল হাই বলেন, যে কোনো জমির নামজারি করতে সরকারী খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা। এর বেশী কোনো টাকা নেয়া হয় না। কেউ আমার নাম বলে টাকা নেয় কিনা আমার জানা নেই। সরকারী খরচের বাইরে আমাদের অফিসে কোনো টাকা নেয়া হয় না। আপনি অফিসে আসেন বিস্তারিত বলা যাবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের নাজির তপন কুমার সরদার সকল প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, আপনি এখন কোথায় আছেন? অফিসে আসেন। এখানে বসে নিরিবিলি আলোচনা করা যাবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বলেন, আমার অফিসে সরকারী খরচ বাদে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় না। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ টাকা নেয় কি না আমার জানা নেই। আমি আগামী কাল অফিসে থাকব। অফিসে দেখা করেন, প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ঘুষের বিনিময়ে কোনো কাজ করা হয় বলে আমার জানা নেই। তবে যদি এমন হয়ে থাকে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।