বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারি। এই তিন দিবসে দেশের ফুলচাষিদের সবচেয়ে ভালো সময় যায়। ফুল সংগ্রহ আর বিক্রিতে ব্যস্ত থাকেন তারা। তবে এবারের চিত্রটি ভিন্ন। গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে ফুল বিক্রির পরিমাণ।
ফুলচাষিদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দেশের ফুলচাষিরা এখনো করোনা মহামারি ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কাটিয়ে ওঠতে পারেনি ।
দীর্ঘ সময় সারাদেশের ফুল চাষ ও বিপণন নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে আবদুর রহিম বলেন, গত বছর ওই তিন মৌসুমে আমরা ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম প্রায় ৭০ কোটি টাকার। বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফুল। কিন্তু এবার আমাদের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ কোটি টাকা হলেও বিক্রি হয়েছে মাত্র প্রায় ২৫ কোটি টাকার ফুল।
দেশের ফুলের রাজ্য খ্যাত যশোরে প্রায় ৭০ ভাগ ফুল চাষ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দাম শুধু কৃষকের বিক্রির। বাজারে ফুল বিক্রির টাকার পরিমাণ অনেক বেশি। পুরো বছর জুড়ে কেবল গত কয়েকদিনই ফুলচাষিদের মনে কিছুটা আনন্দ ছিল। মোটামুটি ভালো দামে বিক্রিও করেছেন।
করোনার প্রভাবে ফুলচাষিরা বেশ বিপাকের মধ্যে সময় পার করেছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষত শুকাতেও ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে ফুলচাষিদের। বীজ সঙ্কটেও পরেছেন অনেকে। ফলে চাষও কম হয়েছে।
ফ্লাওয়ার সোসাইটির দেওয়া তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে ১০০ রজনীগন্ধা এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, ১০০ গোলাপ এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা, স্টিক গোলাপ দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা, ১০০ গ্ল্যাডিওলাস ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, ১০০ জারবেরা ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, ১০০ গাঁদা ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সোসাইটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি মৌসুমে ফুলের আবাদও তুলনামূলক কম হয়েছে। এ মুহূর্তে ফুলচাষিদের পাশে দাঁড়ানো খুব জরুরি। দেশের ২৩টি জেলায় দেড় লাখ মানুষ সরাসরি ফুলের সাথে জড়িত রয়েছে। এছাড়া পরোক্ষভাবে আরও কয়েক লাখ মানুষ ফুলের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
এদিকে দেশে কী পরিমাণ ফুল বিক্রি হয়ে থাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার উইংয়ে এর কোনো তথ্য নেই। প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত উপপরিচালক (ফুল ও ফল) মো. আহসানুল হক চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে জানান, তাদের কাছে শুধু চাষের তথ্য রয়েছে।
তিনি জানান, গত ২০১৬-১৭ সালে দেশে দুই হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয় ফুল। আর ২০১৮-১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে ২০২০-২১ এ কিছুটা কমেছে চাষাবাদের পরিমাণ।