তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে দেশ। রোববার দেশের উত্তরে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও লালমনিরহাটে ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাজশাহীতে ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
মাঘ মাসের মাঝামাঝি দেশের উত্তর-পশ্চিম জনপদে শুরু হওয়া এই তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চলতি মৌসুমে এদিন বগুড়ায় সর্বনিম্ন ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ও মধ্য জানুয়ারিতে দুই দফা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর জানুয়ারির শেষে এসে তৃতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহ বইছে। সেই সঙ্গে পাতা ঝরার দিনও চলছে প্রকৃতিতে। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রির নিচে নামলেই তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে। খবর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের।
রংপুর : রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এছাড়া নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ডিমলায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দেশের সর্ব-উত্তরের উপজেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে।
কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রংপুর জেলার আট উপজেলা ও বিভাগের নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, পঞ্চগড় জেলাসহ উত্তর জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সন্ধ্যার পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. হিরু কুমার রায় জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগীই বেশি।
রাজশাহী : রাজশাহীতে রোববার সর্বনিম্ন ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা ও ঈশ্বরদীতে ৬ দশমিক ২, বদলগাছি ও সৈয়দপুরে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, তেঁতুলিয়া, ডিমলা, যশোর ও শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ছিল ৭ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আর ঢাকায় থার্মোমিটারের পারদ নেমেছে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী অঞ্চলের ওপর দিয়ে এখন তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অন্যান্য এলাকা এবং টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নিকলী, শ্রীমঙ্গল, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ শৈত্যপ্রবাহ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের তাপমাত্রা সোমবারও সামান্য কমতে পারে। বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে চলে এলে মৃদু, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে রংপুর বিভাগসহ গোপালগঞ্জ, সীতাকুণ্ড, কুমিল্লা, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, যশোর এবং চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে এই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়।
বগুড়া : মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বগুড়ায় ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের কিছু সময় সূর্যের দেখা মিললেও প্রচণ্ড শীতে জনগণ বিশেষ করে ছিন্নমূলদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এ মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ আরও ৪-৫ দিন থাকবে। বগুড়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজিব হোসেন জানান, রোববার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ বিকাল ৩টায় ২০.৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি জানান, তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নিচে এলে শৈত্যপ্রবাহ বলে। ৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। মাঝারি এ শৈত্যপ্রবাহ ৪-৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। সকালে ঘন কুয়াশা রয়েছে। রোদ থাকার সম্ভবনা থাকলেও প্রচণ্ড শীত অনুভূত হবে। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।