চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ শ্বশুরকে চা পান করার জন্য মামার সাথে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে স্ত্রী মিনুফাকে পিটিয়ে হত্যা করে কারারক্ষি জামাই লোকমান। এরপর গলায় রশি পেচিয়ে ঘরের ডাবায় ঝুলানোর চেষ্টা করা হয়। এসময় শ^শুর ফিরে এসে দেখে ফেলায় তাকেও হত্যার জন্য তাড়া করে লোকমানের সহযোগীরা। এমনকি শ^শুরকে জীবননাশের হুমকি ও ভয়ভীতি দিয়ে থানায় মেয়ের আত্মহত্যার বয়ান দেওয়ানো হয়। গত ১৪ নভেম্বর তেরখাদা উপজেলার ইছামতি গ্রামে সংঘটিত গৃহবধূ মিনুফা হত্যাকান্ডে এ প্রতিবেদককে এভাবে বর্ণনা দেন তার বাবা মোস্তফা শিকদার। তিনি বলেন, পরনারী আসক্ত জামাই লোকমান ছুটিতে বাড়ীতে আসলেই যৌতুকের জন্য মিনুফার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতো। হত্যার হুমকি দিতো। কিন্তু সেই হুমকি যে এভাবে বাস্তবায়ন করবে আমরা বুঝিনি।
গত বছর ১১ এপ্রিল উপজেলার ইছামতি গ্রামের খলিলুর রহমান শেখের পুত্র লোকমান শেখ (২২) এর সাথে বিয়ে হয় নড়াইলের নড়াগাতী থানার খাসিয়াল গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা শিকদারের মেয়ে মিনুফার (২৩)। বিয়ের পর পুলিশে চাকরী পেতে ঘুষ দেয়ার কথা বলে স্ট্যাম্পের মাধ্যমে লোকমান শেখ শ্বশুরের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেন। বিয়ের প্রথম দিকে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো চললেও কিছু দিন যেতে না যেতে খুটি-নাটি বিষয় নিয়ে স্ত্রীর ওপর অত্যাচার চালাতে থাকে স্বামী লোকমান। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধীক যুবতীর সাথে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক।
গত ৬মাস পূর্বে লোকমান শ্বশুর বাড়িতে আবারো যৌতুক হিসেবে মোটর সাইকেল দাবি করে। কিন্তু মিনুফার পিতা মোস্তফা শিকদারের হাতে টাকা না থাকায় কিছু দিন পরে দেয়ার কথা বলায় সে আরো ক্ষিপ্ত ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মিনুফার ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। কথায় কথায় মারপিট করার পাশাপাশি তালাক দেয়াসহ হত্যার হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে স্ত্রী মিনুফা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিত্রালয়ে গিয়ে ওঠে। মিনুফার পরিবারের লোকজন বিষয়টি সামাজিকভাবে মিমাংসা করার নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে সম্প্রতি লোকমানের কর্মস্থল যশোর কারাগারের জেলারের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন মোস্তফা শিকদার। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলার এ বিষয় মিটিয়ে আসার জন্য লোকমানকে ৭দিনের ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।মিনুফার বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, লোকমান ছুটিতে এসে গত ১৩ নভেম্বর আমাদের আসে মিনুফাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এসময় লোকমানের আচারণে সন্দেহজনক হওয়ায় মেয়ের সাথে আমিও যাই। রাতে আবরো মিনুফার ওপর চড়াও হয় লোকমান। হুমকি দেয় জীবনাশের। পরদিন ভোরে মেয়ের সাথে কথা বলতে থাকলে লোকমানের ইশারায় তার মামা আমাকে চা পান করার কথা বলে রাস্তায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর চা পান না করে ফিরে এসে মেয়ে মিনুফাকে ডাকাডাকি করতে থাকলে লোকমানের বাবা-মা ও ভাবিসহ বাড়ির অন্যান্যরা বলেন আপনার মেয়ে ঘরে আছে। ওর সাথে পরে কথা বলবেন আগে নাস্তা করেন। তাদের কথায় আমার সন্দেহ বাড়ে। ঘরের দরজা দিয়ে ভিতরে উকি দিয়ে দেখি লোকমাননহ ৩/৪ জন মিনুফার গলায় রশি পেচিয়ে ঝুলানোর চেষ্টা করছে। তখন আমি চিৎকার দিয়ে উঠলে আমাকেও হত্যার হুমকি দিয়ে ধাওয়া করে লোকমানের সাঙ্গ-পাঙ্গরা। তখন দৌড়ে পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে আবারো ফিরে এসে দেখি মেয়ের নিথর দেহ গড়ে রয়েছে বারান্দায়। পরে আমাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বলে, থানায় গিয়ে বলবেন আপনার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার ভাই পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর। আমি পুলিশ বিভাগের কারারক্ষি। থানায় গিয়ে উল্টাপাল্টা বললে আমার কিছুই হবেনা। বরং আপনার চৌদ্দগুষ্টিকে জেল খাটাবো। ফিরে যেতে দেবো না বাড়িতে।
মিনুফার মা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, সকালে মিনুফা আমাকে ফোন করে বলে, মা তোমার জামাই আবারো সেই তাল শুরু করেছে। ও আমাকে বাঁচতে দেবেনা। তখন আমি বলি তুই তোর বাবার সাথে বাড়ি ফিরে আয়। এরপরে জানতে পারি ওকে মেরে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, লোকমান একজন লম্পট চরিত্রের মানুষ। ১৭ বছর আগে ওর বড় ভাই পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান বাচ্চুর স্ত্রী শ্যামলী আক্তারকে একই কৌশলে হত্যা করে আত্ম হত্যা হিসেবে চালিয়ে দেয়। আমরা মিনুফা হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।