ভারতের নিষিদ্ধ পল্লীতে স্ত্রীকে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী স্ত্রীর নাম বুরুজা বেগম। তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামের বাসিন্দা। ভারতে বিক্রির পূর্বে তার ওপর শারিরীক নির্যাতন করত বলেও ভুক্তভোগী জানান। এ ব্যাপারে গত শনিবার বুরুজা বেগম তেরখাদা থানায় স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে বুরুজা বেগম উল্লেখ করেন, লস্করপুর গ্রামের মৃত সাত্তার মোল্যার পুত্র মিঠু মোল্যার সাথে গত ২০০৯ সালে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে রাহুল মোল্যা (১১) ও তাসিন মোল্যা (৩) নামে দু’টি সন্তানও রয়েছে। ভালোই চলছিল তাদের সুখের সংসার। একপর্যায়ে স্বামী মিঠু মোল্যা ও তার ভাই সাহেব আলী (৫০) মিলে তার ওপর মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন চালাতে থাকে। ভুক্তভোগী তাদের এই অমানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর তাদের মধ্যে সমঝোতা হলে বুরুজা বেগম মামলা তুলে নেয়। মামলা তুলে নেয়ার পর মিঠু মোল্যা ভারতে চলে যায়। তখন বুরুজা বেগম স্বামীর সাথে দেখা করতে চাইলে সাহেব আলী, শহিদুল ইসলাম ও ময়না বেগম গত বছরের ১৩ নভেম্বর ভারতে স্বামীর নিকট পাঠিয়ে দেয়। ভারতে যাওয়ার পর স্বামী মিঠু মোল্যা স্ত্রী বুরুজা বেগমকে বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে দেশে ফিরে আসে। নিষিদ্ধ পল্লীতে ২১ দিন থাকার পর ভারতের পুলিশের নিকট ধরা পড়ে। ভারতীয় পুলিশ এ বছরের ৪ জুলাই তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিবাদীগণ মানুষ পাচারকারী একটি চক্র। তারা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এলাকার অসহায় মানুষদের নিয়ে ভারতে বিক্রি করে। এমনকি তারা নিজের স্ত্রীকেও পর্যন্ত বিক্রি করতে দ্বিধা করে না। যার বাস্তব প্রমান আমি নিজেই। ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসার পর স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করি। কিন্তু মিমাংসা না হওয়ায় থানায় অভিযোগ করতে বাধ্য হই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী এ প্রতিনিধিকে বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কিছুদিন যাবৎ ঝগড়া বিবাদ চলছিল জমি-জমা নিয়ে। তবে ভারতে বিক্রির বিষয়টি তার জানা নাই। তবে স্বামী মিঠু মোল্যা চিকিৎসার জন্য ভারতে ছিলেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এলাকার মেম্বর পারভেজ রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, বুরুজা এবং তার স্বামী মিঠু দীর্ঘদিন ভারতে থাকত। মাঝে মধ্যে তারা গ্রামে আসত আবার ভারতে যেত। জমি-জমা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। কিন্তু বুরুজা বেগমকে ভারতে বিক্রি করার বিষয়টা সম্পর্কে আমি জানি না। বুরুজা বেগম আগে একটি মামলা করেছিলেন, সে বিষয়ে আমরা স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করে দেই। মিঠুর বিষয়ে জানতে চাইলে মেম্বর বলেন, হ্যাঁ মিঠু চিকিৎসার জন্য ভারতে থাকত। তার স্ত্রী এখানে দেশে থাকত। তবে স্ত্রী ও সন্তানদের কোন খরচাপাতি দিত না বলে তিনি জানান। এটা নিয়েই তাদের মধ্যে মূল দ্বন্দ্ব ছিল। আর মিঠুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভাল না। এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত আছে বলে শুনেছি। কিন্তু কখনো দেখিনি।
এ ব্যাপারে অভিযোগের ২নং বিবাদী মিঠুর বড় ভাই সাহেব আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, অভিযোগের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। তবে এর আগে বুরুজা বেগম আদালতে একটি মামলা করেছিল। অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ভারত থেকে চলে আসার পর বুরুজা বেগম আর ভারতে যায়নি। আর বিক্রি করার বিষয়টা একদমই সঠিক নয়। তবে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে সমস্যা চলছিল। এটা নিয়ে মিমাংসা করার চেষ্টা করেছি বহুবার।
লস্করপুর ফাঁড়ি ইনচার্জ শরিফুল ইসলাম বলেন, যেহেতু তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন তাই অভিযোগের বিষয়টা আমি এখনও জানি না। তবে কয়েক মাস পূর্বে ওসি স্যারের নির্দেশে আমি মিঠুকে থানায় নিয়ে যাই। সেখানে দু’পক্ষের মৌখিকভাবে আপোষ-মিমাংসা হয়। আমি এখানে এসেছি চার মাস হয়েছে। তবে মিঠু এলাকায় অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত আছে বলে শুনেছি। তবে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা নেই।
এ ব্যাপারে তেরখাদা থানার এসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, গত শনিবার বুরুজা বেগম নামে এক মহিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় এসে একটি অভিযোগ করেছেন। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে লস্করপুর গ্রামের ফাঁড়ির ইনচার্জ শরিফুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। যেহেতু শনিবার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাই তদন্ত দু’একদিন পর থেকেই শুরু হবে। তদন্তে মিঠু দোষী সাব্যস্ত হলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।
এ ব্যাপারে মধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ মহসীনকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।