দলিত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার সংরক্ষনে সরকারকে অবিলম্বে “বৈষম্য বিলোপ আইন” দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে; উক্ত আইন বাস্তবায়নে দলিতদের অংশ গ্রহন নিশ্চিত করতে হবে। চাকরি ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৯(৩) অনুযায়ী দলিতদের জন্য কোটা বরাদ্ধ করতে হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানসহ বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমান সরকারী দলের নির্বাচনী মেনোফেস্টেতে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নের ধারায় দলিত জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করার জন্য দলিত প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনে একটি জাতীয় উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করতে হবে। জাতীয় সংসদসহ সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবার জন্য আসন সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারী সেফটিনেট কর্মসুচিতে দলিত জনগোষ্ঠীকে বিশেষ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। দেশের প্রায় ১ কোটি দলিত মানুষের স্বার্থ সুরক্ষায় জাতীয় দলিত কমিশন গঠন করতে হবে। আদমশুমারি বা জাতীয় জরিপে পৃথকভাবে দলিত জনগোষ্ঠীকে গগনা করতে হবে। দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সরকারের ঘোষিত ও গৃহীত উদ্যোগের পূর্ণাঙ্গ ও দ্রত বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারের গৃহায়ন কর্মসুচি এ দলিত জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমাদের বর্তমান আবাসন গুলো মেরামত করতে হবে সেগুলোতে নাগরিক সকল সুুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য খাস জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিতে হবে। বর্তমানে বসবাসরত জায়গায় স্বল্প মুল্যে গৃহ নির্মাণ করে দলিতদের মধ্যে স্থায়ী বরাদ্ধ দিতে হবে। দলিত ও জনউদ্যোগের আঞ্চলিক সেমিনারে বক্তারা এই তোলেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বি এম এ মিলনায়তনে দলিত ও জনউদ্যোগ,খুলনার উদ্যোগে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বনাম দলিত জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্টায় বৈষম্য বিলোপ আইনের প্রাসংঙ্গিকতা শীর্ষক আঞ্চলিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সভা পরিচালনা করেন জনউদ্যোগ,খুলনার সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন। দলিতের নির্বাহী পরিচালক স্বপন দাস । প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা -৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আকতারুজ্জামান বাবু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএমএ’র সভাপতি ডাঃ শেখ বাহারুল আলম, জনউদ্যোগ,খুলনা নারী সেলের আহবায়ক ্এ্যাডঃ শামীমা সুলতানা শীলু ,সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি হুমায়ুন কবির ববি,সম্মিলিত দৃর্নীতি বিরোধী জোটের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও কালের কন্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্র। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মফিদুল ইসলাম, সিপিবি নেতা এস এম চন্দন, আহসান হাবিব,সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম, কানাই মন্ডল, বাংলাদেশ মানবাধিকার সাংস্থা এ্যাডঃ মোমিনুল ইসলাম, এডাবের সাধারন সম্পাদক নাজমুল হক ডেভিড, নিরাপদ সড়ক চাই এর সভাপতি ইকবাল হোসেন বিপ্লব, গ্লোবাল খুলনার শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, বাহালুল আলম,ছাত্রনেতা সনজিত কুমার মন্ডল, ওয়াহিদুজ্জামান সোহাগ এছাড়া খুলনা ,যশোর ও সাতক্ষীরার দলিত জনগোষ্ঠার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
আঞ্চলিক সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় এক কোটি দলিত ও হরিজন জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। বাংলাদেশে এই বিংশ শতাব্দীতেও দলিত হরিজন সম্প্রদায় প্রতিনিয়ত অস্পৃশ্যতার শিকার হয়। দারিদ্র্য, প্রান্তিকতার মাত্রা, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বৈষম্য, অস্পৃশ্যতা, ঘৃণা, সমাজ বিচ্ছিন্নতা, মর্যাদাহীনতা, পেশাচ্যুতি, রাষ্ট্রীয় পরিষেবা না পাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ বঞ্চনার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়।
জন্মগত ও পেশাগত পরিচয়ের কারনে বৈষম্যের শিকার জাতিগোষ্ঠী যথা ঋষি, কায়পুত্র, জলদাস, হরিজন, বেহারা, জেলে, দাই, ধোপা, নিকারী, শিকারী, হাজাম, কলু ইত্যাদি মানুষেরা তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থায় দলিত, নিম্মবর্ণ নামে পরিচিত। আমাদের স্বপ্ন ছিল সদ্য স্বাধীন দেশে আমরা সম্মানের সহিত সকল ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অসাম্য ও অবহেলা থেকে মুক্ত ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। কিন্তু নির্মম হলেও সত্য এই নিম্ম বর্ণের মানুষেরা এখনও সমাজ কর্তৃক নিগৃহীত। তারা এ দেশের নাগরিক হয়েও শুধু মাত্র নিম্মবর্ণে জন্মগ্রহণ করার কারণে অত্যান্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েই তাদের জীবন যাপন করতে হয়। এই বিচ্ছিন্নতা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মানসিক। অন্য জনগোষ্ঠীর সাথে মিশবার, নলকুপ থেকে পানি নেবার, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবার এবং ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা পাবার অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত।
দেশের সার্বিক উন্নয়ন যখন ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এর পতাকাকে সুপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ঠিক তখনই তাদের ন্যায় দলিত হরিজন জনগোষ্ঠী মৌলিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপনের মধ্য তাদের জীবন ও জীবিকা অতিবাহিত হচ্ছে।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি