চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে সাংগঠনিক অবস্থা ছিল নড়বড়ে। দলাদলি, গ্রুপিং, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, পদ-পদবি নিয়ে রেষারেষি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং নিজ দলের কর্মীদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হতো। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক সম্পাদকদের তৃণমূল পর্যায়ে দল গোছানোর নির্দেশ দেন। সে অনুসারে ২০১৯ সালের বেশিরভাগ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব কাজ করেছে দল গোছাতে।
ভ্রাতৃপ্রতিম থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠন ও মূল দলের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করে বছর শেষ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেজন্য ২০১৯ সালের বিদায় লগ্নে বেশ চাঙ্গা ও ফুরফুরে মেজাজে দলের নেতারা।
নির্বাচনের পর জানুয়ারিতে সরকার গঠন করেই আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দল গোছাতে নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশনার পরপরই মাঠে নামেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকরা। মহানগর, জেলা ও উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে যে দ্বন্দ্ব ও কোন্দল চলছিল, তা মিটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে কাজ শুরু করেন তারা। এর অংশ হিসেবে সারাদেশে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পৌরসভা, থানা, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন করা হয়। তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের পর বছরের শেষভাগে হয় জাতীয় সম্মেলন। এতে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি এসেছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের মোট সাংগঠনিক জেলা ৭৮টি। ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই ২৯টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সম্মেলনের নেতৃত্বে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া বিপুলসংখ্যক ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন শাখার পাশাপাশি সম্মেলন হয় তিন শতাধিক উপজেলা শাখায়ও।
যে সম্মেলনগুলো হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ। ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব ঘোষিত হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হন মান্নান কচি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আবু আহাম্মদ মন্নাফি এবং সাধারণ সম্পাদক হন হুমায়ূন কবির।
সম্মেলন হয় সিলেট জেলা ও মহানগর; বরিশাল মহানগর; দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হিসেবে বিবেচিত খুলনা মহানগর ও জেলা এবং বিএনপির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত বগুড়া-ফেনী জেলা শাখায়ও। সবগুলো সম্মেলনেই ঘোষিত হয় নতুন নেতৃত্ব।
শুধু মূল দলের মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন আর ওয়ার্ড শাখা নয়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো গোছানোর কাজও চলে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও মৎসজীবী লীগেও।
এর মধ্যে শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত যুবলীগের নেতৃত্বে আসেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ। তাকে চেয়ারম্যান করার পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে করা হয় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। কৃষক লীগের সভাপতি হন সমীর চন্দ্র চন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান উম্মে কুলসুম। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হন নির্মল রঞ্জন গুহ এবং সাধারণ সম্পাদক হন আফজালুর রহমান।
শ্রমিক লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ফজলুল হক আর সাধারণ সম্পাদক হন কে এম আজম খসরু। মৎসজীবী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পান মো. সাইফুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন শেখ আজগর লস্কর।
সবশেষ অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি পদে শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ওবায়দুল কাদের পুনর্নির্বাচিত হন। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা নবমবারের মতো এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পান। এ দুই শীর্ষ পদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসে আরও নতুন মুখ।
৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ঘোষিত হয় ৭৪ জনের নাম। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে যুক্ত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও শাজাহান খান। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হন ড. হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। এছাড়া এস এম কামাল ও মির্জা আজম সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে এবং বিপ্লব কুমার বড়ুয়া দফতর সম্পাদক হিসেবে পদোন্নতি পান।
সম্মেলনে গঠনতন্ত্রের কিছু সংশোধনী পাস হয়। এর মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদ ৪১ থেকে ৫১ জন করা, সাংগঠনিক ডাটাবেজ তৈরির জন্য সব সদস্যের নাম ও মোবাইল নম্বর সংযুক্তির বিধান, জেলাপর্যায়ে অনুমতিবিহীন খরচ ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকায় উন্নীত করার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
বিদায়ী বছরের প্রাপ্তি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, বছরব্যাপী সারাদেশে জেলা ও উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন শাখা পর্যন্ত সম্মেলন করা একটি বড় সফলতা। এর চেয়েও বড় সফলতা আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করে নতুন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতৃত্ব নিয়ে আসা। আগামীতে দেশের গণতন্ত্র সুরক্ষা এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন হবে বড় চ্যালেঞ্জ।