খুলনার দাকোপে অধিকাংশ নদী ও খালগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কচুড়িপানা জমে থাকায় এবং দখল দূষণে খালগুলো পানি প্রবাহে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। এতে দিন দিন খালগুলোর নাব্যতা কমে আসছে। ফলে পানি নিষ্কাশনসহ নানা প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবৎ এমন অবস্থা চলে আসলেও নদী খালগুলো রক্ষায় নেওয়া হয়নি উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ। এসব কারণে আগামীতে কৃষি কাজও মারাত্মক ভাবে ব্যহতের আশঙ্কায় এলাকার হাজারো কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
সরেজমিন এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারনে পৃথক তিনটি দ্বীপের সমন্বয় বঙ্গোপসাগর তথা সুন্দরবন উপকূলীয় এই উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপকূলীয় এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে ২২৮টি বেশি খাল ও জলাশয় রয়েছে। এসব অধিকাংশ সরকারী খাস খালে দীর্ঘদিন যাবৎ কচুরিপানা জমে আছে। দেখে মনে হবে পুরো খাল জুড়ে সবুজে ঘেরা কোনো মাঠ অথবা চলছে কচুরিপানার প্রদর্শন। কোথাও পানির দেখা নেই। কিছু খালে আবার কচুরিপানা পচে গন্ধ বের হচ্ছে পানি থেকে। এই পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ ছাড়া কিছু খাল নাম মাত্র ইজারা নিয়ে ইজারাদার অথবা গায়ের জোরে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় দখলে রেখেছেন। তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আড়াআড়ি অবৈধ ভাবে বাঁধ, খন্ড খন্ড টোনাজাল, নেটজাল, পাটাজাল, চাকজাল, কারেন্ট জাল ও পাটাতন নেটের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন। তা ছাড়া ছোট ছোট খালগুলো যে যার মতো দখল করে গড়ে তুলেছেন বসত ঘরসহ নানা স্থাপনা এমনকি পাকা প্রচীরও। ফলে দখল দূষণে ও কচুরিপানা জমে থাকায় খালগুলো পানি প্রবাহে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। এতে খালের গভিরয়তা সংকটে একদিকে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দূর্বলে ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আর অন্যদিকে শুকনো মৌসুমে খালে পানি ধারন ক্ষমতা না থাকায় সেচ সংকটের কারনে রবি শস্য ও বোরো চাষ চরম ভাবে ব্যহত হচ্ছে। এসব কারনে এক সময়েকার জলাশয়ে ভরা এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌকা যেমন হারিয়ে যাচ্ছে তেমনি অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, কচুরিপানা অপসারণ এবং খালগুলো খনন না করলে আগামীতে কৃষি কাজে দেখা দিতে পারে চরম বিপর্যয়ে।
প্রভাষক রাধাকান্ত মন্ডল বলেন, আগে সরকারি খালগুলোতে পানি প্রবাহে স্বাভাবিক গতি ছিলো। তখন এলাকার লোকজন নৌকায় করে বিভিন্ন মালামাল আনা নেওয়া করতো। এ ছাড়া কিছু লোক খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কাঁকড়া বুনিয়া ও ভাদলা বুনিয়াসহ অধিকাংশ সরকারি খাস খালে কচুড়িপানা জমে থাকায় এবং দখল দূষণে খালগুলোর পানি প্রবাহে স্বাভাবিক গতি হারিয়ে গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কারণ এখন নৌকাও চলাচলা করে না। এলাকার লোকজন মাছও ধরে খেতে পারে না। আর দিন দিন খালগুলোতে পলি পড়ে গভিরয়তা কমে আসছে। ফলে পানি নিষ্কাশনসহ নানা প্রতিবন্দকতা সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া কচুরিপানা জমে থাকায় অনেক খালের কচুরিপানা পচে পানি দিয়ে দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। গবাদি পশু পানি খেতে পারে না। পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলাকার লোকজন খালে গোসলও করতে পারছে না। প্রধান ফসল তরমুজ খেতেও সেচ সংকটে কৃষিখাত বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। এতে আবার সাপ, মশা ও মাছির উৎপাতও বেড়েছে। কচুরিপানা অপসারণ করে পানি ব্যবহারের উপযোগী করার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগীয় নেটওয়ার্ক কমিটির সদস্য ও জাতীয় কৃষক সমিতির খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি ওয়ার্কাস পাটির নেতা গৌরাঙ্গ প্রসাদ রায় জানান, নদী খালগুলো যাদের দেখার কথা সেই কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। যে কারণে নদী খালগুলোতে কচুরিপানা জমে থাকে এবং দখল হয়ে যাচ্ছে। নদী খাল সংরক্ষণ আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পরিবেশ, চাষাবাদ ও জীব বৈচিত্র্য চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসলেও কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী গোপাল কুমার দত্ত বলেন, এখনো পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি কচুরিপানার অসুবিধার বিষয়ে আমাদের জানায়নি। তারপরও খোঁজ খবর নিয়ে আমাদের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের জানাবো। সেখান থেকে যে নিদ্দের্শনা আসে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।