দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি :: খুলনার দাকোপে সাত বছরেও চালু হয়নি ভদ্রা নদীর উপর নির্মিত কালিনগর সেতু। মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন হলেও এর সংযোগ সড়কের সুরক্ষা দেয়াল ভেঙে দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রয়েছে। কবে আবার কাজ শুরু হবে তা কেউ জানেনও না। ফলে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার সেতুটি জনসাধরনের কোন কাজে আসছে না। সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে মোংলা পোর্ট ও উপজেলা সদরের সাথে সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হবে। এ ছাড়া পাশর্^বর্তী উপজেলা পাইকগাছা, কয়রা থেকে মোংলা বন্দরের সঙেও যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা সুগম হবে। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ উপকৃত হবেন।
স্থানীয় সরকার উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ ৯টি সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কালিনগর জিসিÑখুটাখালী জিসি রাস্তায় শুন্য চেইনেজে শিংজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে ভদ্রা নদীর উপর পিসি গার্ডার সেতু টি নির্মিত হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩০১ দশমিক ৪০ মিটার এবং প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। এ ছাড়া সংযোগ (ভায়াডাক্ট) সড়ক ১৪০ দশমিক ১৬ মিটার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সেতুটি নির্মানের জন্য দরপত্র আহবান করা হলে পুরানো পল্টন ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পিটিএসএল মৈত্রী (প্রাঃ) লিমিটেট কাজটি বাস্তবানের দায়িত্ব পায়। কাজটির প্রাক্কলিত মূল্য ছিলো ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৫ টাকা। ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট সেতুটি নির্মান কাজ শুরু হয় এবং ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী মধ্যে কাজটি শেষ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত সময় কাজটি শেষ করতে না পারায় কয়েক বার বর্ধিত সময় অনুমোদন করেন এলজিইডি। তারপরও কাজটি শেষ না হওয়ায় ঐ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল হয়। পুনরায় সেতুর অসমাপ্ত কাজের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে দরপত্র আহবান করলে বরিশালের নতুন ঠিকাদার মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের মেহেদি হাসান চৌধুরী কাজটির দায়িত্ব পায়। কাজটি প্রক্কলিত মূল্য ধরা হয় ১২ কোটি ১১ লাখ ৯২ হাজার ৩৮৮ টাকা। এদিকে নির্মাণাধীন সেতুর সংযোগ সড়কে বালু ভরাটের সময় দুই পাশের সুরক্ষা দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল) ভেঙে পড়ায় দীর্ঘ এক বছরেরর বেশি কাজ বন্ধ রয়েছে। কবে আবার কাজ শুরু হবে কবেই বা শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে মোট ৪৯ কোটি ৫৫ লাখ ২৯ হাজার ২৪৩ টাকার সেতুটি জনসাধারনের কোন কাজে আসছে না।
কামারখোলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর স্বপন কুমার মন্ডল জানান, পৃথক তিনটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই উপজেলা। দ্বীপ তিনটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১, ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডার নামে পরিচিত। এখানে একটি পোল্ডার থেকে অন্য পোল্ডারে যেতে হলে খেয়া পারাপারে সংখ্যাই বেশি। সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে। এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের গতিও বাড়বে। কৃষকের ফসলের দামও বৃদ্ধি পাবে। ফলে কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন। তা ছাড়া সেতুটির পশ্চিম পাড়ে ৩২ নম্বর পোল্ডারে রয়েছে কামারখোলা ও সুতারখালী ইউনিয়ন এবং পূর্ব পাড়ে ৩৩ নম্বর পোল্ডারে রয়েছে দাকোপ, লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, বাজুয়া ও বানীশান্তা ইউনিয়ন।
শ্রীনগর নব জাগ্রত যুব সংঘের সভাপতি সমাজ সেবক শিক্ষক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, উপজেলার ঐতিয্যবাহী কালিনগর বাজার সংলগ্ন ভদ্রা নদীর উপর সেতুটি সচল হলে উপজেলার পোল্ডার সমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে। ব্যবসায়ীদের মালামাল পরিবহন সহজতর হবে ও নানাবিধ সুযোগ তৈরি হবে। দ্রুততম পরিবহন ব্যবস্থা সৃষ্টির ফলে এলাকায় আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে নানামুখি কৃষিজ উৎপাদনের সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। এলাকার সার্বিক পরিবেশ আধুনিকায়নসহ সেতুটি উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বহুমাত্রিক সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, নকসা ত্রুটির কারণে বর্তমানে সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ সাময়িক স্থগিত রয়েছে। নকসার ত্রুটি সংশোধন হয়ে গেছে এবং সেগুলো উপরে পাঠানো হয়েছে। আগামী জুলাই বা আগস্টে নতুন করে টেন্ডার হলেই আবার কাজ শুরু হবে।