এক দফা দাবি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। কোনো শক্তিই সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে পারবে না জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আমরাও এ দেশের জনগণ বিশ্বাস করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতিক প্রতিহিংসার কারণে অন্যায় ভাবে তাকে কারাবরণ করে রাখা হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ, তার সুচিকিৎসা আমাদের দাবি এবং তার মুক্তি আমাদের দাবি। তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষ ভোট দিতে পারে না, দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। তাই মানুষ এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা ক্ষমতায় আসার জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা আন্দোলন করছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকারের জন্য। তাই পরিষ্কার কথা, সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এ সরকারের অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, দেশের মানুষ হতে দেবে না।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি চৌরাস্তায় অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে একদফা দাবিতে ভৈরব থেকে সিলেট অভিমুখে শুরু হওয়া তারুণ্যের রোডমার্চ-পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, যে দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষ ভোট দিতে পারে না, দিনের ভোট রাতে হয়, অর্থ পাচার হয়, তাই বিশ্ববাসী তাদের পক্ষে নেই। গোটা বিশ্ব অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, যা সরকার বুঝতে পারছে না। এখন শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে, আর তা হচ্ছে হরতাল। আমরা আওয়ামী লীগের মতো লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মারিনি, লাশের ওপর নৃত্য করিনি। আমরা ’৭১ সালে শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, সাম্য ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। এখন গণতন্ত্রের জন্য, বাকস্বাধীনতার জন্য এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। গত কয়েক মাসের আন্দোলনে এ পর্যন্ত ২২জন তারা হত্যা করেছে। সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে। তারা সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করেনি। আওয়ামী লীগ কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে ব্যাংকগুলোকে খালি করে দিয়েছে। ডলারের কারণে এলসি করা যাচ্ছে না।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ রিয়াজউদ্দিন রানার যৌথ সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
প্রধান বক্তার দক্ষিণাঞ্চলের রোডমার্চ এর সমন্বয়ক বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ বলেন, শেখ হাসিনার কাছে এদেশ কি নিরাপদ ? শেখ হাসিনার কাছে এদেশের সংসদ কি নিরাপদ? শেখ হাসিনার কাছে কি এদেশের গণতন্ত্র নিরাপদ? শেখ হাসিনাকে কি বিশ্বাস করা যায় যদি না যায় তাহলে তার অধীনে নির্বাচন হবে। বিভিন্ন দেশ তাকে মুনাফিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এক দাবিতে এই রোডমার্চ, তা হলো ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ। এখন সংগ্রামের মধ্যে আছি আগামী নির্বাচন আমরা একতরফা হতে দেব না, দিনের ভোট রাতে হতে দেব না, বিনা ভোটে এমপি হতে দেব না এর জন্যই আমাদের রোডমার্চ। আগামীতে বিরোধী দল ছাড়া কোন নির্বাচন আমরা হতে দেব না। যারা প্রশাসনের ডিসি, এস পির দায়িত্ব পালন করছেন তারা চোর সরকারকে সহায়তা করছেন। নির্বাচন কমিশন অবৈধ এই নির্বাচন কমিশনকে জনগণ মানে না। এই নির্বাচন কমিশন সরকারের দালাল। এই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলে সারা বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনকে আমরা অবরুদ্ধ করবো। বাংলাদেশের ভিসা নীতি প্রক্রিয়া গতকালকে থেকে শুরু হয়েছে। ২/১দিনের ভিতর জানতে পারবেন বড় বড় দায়িত্বপ্রাপ্ত বড় বড় নেতা দরবেশ এই শানশনের মধ্যে রয়েছে। এই রোডমার্চে আমাদের একটা মেসেজ থাকবে শেখ হাসিনা যদি একতরফা নির্বাচন করতে চায় তাহলে আমরা লাগাতার অবরোধ হরতালের মত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। কারণ জনগণের আত্ম অধিকার এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা তা পুনরুদ্ধারে নেমেছি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপি এর ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর (বীর উত্তম), বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ জুয়েল, কাউখালী উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক এস এম আহসান কবির, সদস্য সচিব এইচ এম দীন মোহাম্মদ সহ কেন্দ্রীয় বিএনপি ও কেন্দ্রীয় অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
রোডমার্চকে বরণ করতে বিকেল ৩টা থেকেই কাউখালীর চৌরাস্তায় জড়ো হতে থাকেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার মানুষ। বিকেল ৪টার আগেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাউখালীর শিয়ালকাঠির চৌরাস্তার মাঠ, রাস্তাঘাট কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় অপেক্ষমাণ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে মঞ্চ থেকে বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন জাসাসের শিল্পীরা।
শনিবার সকাল ১১ টা থেকে শুরু হওয়া বিএনপি রোডমার্চ বরিশাল বেলেস পার্ক থেকে শুরু হয়ে পিরোজপুরের কাউখালী চৌরাস্তায় শেষ হয়। এ সময় দলটির নেতাকর্মীরা ৮০ কিলোমিটার সড়কপথ অতিক্রম করন। পথে বরিশাল ঝালকাঠি সহ একাধিক স্থানে পথসভা করে। বিকাল চারটার সময় কাউখালী চৌরাস্তায় এসে পৌঁছে, এ সময় সমবেত জনতা করতালি ও স্লোগান দিয়ে রোডমার্চের গাড়ি বহরকে স্বাগত জানায়।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলা এবং ৪২উপজেলা নেতা ও কর্মীরা কয়েক হাজার গাড়ি নিয়ে এই রোডমার্চে অংশ নেয়।