দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস। নির্ধারিত সময় পর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বদলি হয়ে অন্যত্র গেলেও দালালরা রয়ে যায় বহাল তবিয়তে। কোনো কোনো কর্মকর্তা দালালদের বিষয়ে প্রথম দিকে তৎপর থাকলেও কিছুদিনের মধ্যেই অদৃশ্য কারণে সব থেমে যায়। দালাল না ধরে সরাসরি অফিসে গেলে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। এ কারণে কাজ উদ্ধারের স্বার্থে সাধারণ মানুষ দালালদের হাত ধরে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমি অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। দালালদের প্রধান কর্তা হলেন শিরোমনি গ্রামের মোঃ কাশেম, যাকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে ৮ থেকে ১০ জন দালাল। দালালদের অনেকেই ভূমি অফিসের ভিতরে চেয়ারে বসে কাজ করে। ভূমি অফিসের সব ধরনের কাজ নিজ হাতে করতে তাদের কোনো বাধা নেই। এ কারণে সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে অফিসার ও দালালদের আলাদা করতে না পেরে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকেন। শিরোমনি মৌজার ৩৫০ নং খতিয়ানের আর এস ১১৭৪, ১২৪৮, ১২৪৯,১২৫০,১২৫১,১২৫২ নং দাগের ৪ শতক ৬৩ পয়েন্ট জমির রেকর্ড নং ও গিলাতলা মৌজার ৫৫৬ নং খতিয়ানের ২৬৭১ দাগ এর ৪ শতক জমির রেকর্ড কেস নং একই । একই রেকর্ড কেস নং দুই বার করাও সম্ভব এ দালাল চক্রের কাছে।
অন্যদিকে ভূমি অফিসের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কাছে সেবাপ্রত্যাশী মানুষ সহযোগিতা চাইলে তারা দালালদের কাছে পাঠিয়ে দেন। দালালদের সঙ্গে চুক্তি না করে ভূমি অফিসের সেবা পাওয়া দুষ্কর। ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা দালালদের ব্যবহার করে নিজেদের পকেট ভারী করছেন বলে ভুক্তভোগী কয়েকজন অভিযোগ জানান।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘদিন ধরে একই স্টেশনে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই এলাকায় অবস্থানের কারণে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে তাদের একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভূমি কর্মকর্তারা দালালদের ব্যবহার করছেন অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন দালালরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে টাকার পাহাড় গড়ছেন ভূমি অফিসের কর্তারা। খাজনা পরিশোধ, মিসকেস, খাস পুকুর ইজারাসহ নানা বিষয়ে দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগি গিলাতলা গ্রামের হাফেজ মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব জানান, আমার নিজের গিলাতলা মৌজার ৪ শতক জমি যার রেকর্ড কেস নং( ৯৬ আই এক্স -আই ২০১৮-১৯ ) শিরোমনি মৌজার দাগ খতিয়ান বসিয়ে জাল জালিয়াতি করা হয়েছে । অপর ভুক্তভোগি সোহেল রানা জানান, জালিয়াতি করে তহশিল অফিসের মাধ্যমে নকল কাগজ তৈরি করে আমার জায়গা দখলের পায়তারা করে এবং প্রায় লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে নিয়ে যায় । নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভূক্তভোগী জানান, ভূমি অফিসের দেয়ালও ঘুষ খায়। ভূমি অফিসে ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়ে সবারই জানা তারপরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুলি বিশ্বাস বলেন, আমি সবসময় চেষ্টা করছি ভূমি অফিসকে দালালমুক্ত করতে।
ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।