চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস এখন ‘হিংস্র বাঘ থেকে বুনো বিড়ালে’ রূপান্তর হয়েছে। ভ্যাকসিন ছাড়াই ভাইরাসটি নিজ থেকেই শেষ হয়ে যাবে। করোনায় ইউরোপে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া ইতালির শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাত্তিও বাসেত্তি এমন মন্তব্য করেছেন।
ইতালির সংক্রামক ব্যাধি ক্লিনিক পোলিক্লিনিকো স্যান মার্টিনোর প্রধান অধ্যাপক মাত্তিও বাসেত্তি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, গত মাসে ভাইরাসটি তীব্রতা হারাতে শুরু করেছে। আগে যে রোগীরা এই ভাইরাসে মারা যেতেন এখন তারা সুস্থ হয়ে উঠছেন।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার এই বিশেষজ্ঞ বলেন, রোগীর সংখ্যা কমে আসার অর্থ ভাইরাসটির পুনরায় ফিরে আসা ঠেকাতে ভ্যাকসিনের আর দরকার নাও হতে পারে। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার চ্যাডক্স-১এনকোভ-১৯ নামের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি পাওয়ার লক্ষ্যে ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার একটি চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
অধ্যাপক মাত্তিও বাসেত্তি বলেন, আমার কাছে ক্লিনিক্যাল যে ধারণা রয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে ভাইরাসটির তীব্রতায় পরিবর্তন এসেছে। মার্চ এবং এপ্রিলের শুরুর দিকে ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য পুরোপুরি ভিন্ন ছিল। ওই সময় জরুরি বিভাগে যারা এসেছিলেন তাদের চিকিৎসা দেয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাদের অক্সিজেন, ভেন্টিলেশনের দরকার ছিল। অনেকে নিউমোনিয়ায় ভুগতেন। তিনি বলেন, গত চার সপ্তাহে ভাইরাসটির প্যাটার্নের ভিত্তিতে এই চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বর্তমানে শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক্টের ওপর কম চাপ ফেলছে ভাইরাসটি। হয়তো ভাইরাসটির কোনও জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এটি হচ্ছে। যদিও এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রমাণিত হয়নি। আমরা এখন রোগটি সম্পর্কে আগের চেয়ে বেশি সচেতন ও সামলাতে সক্ষম হয়ে উঠেছি।
বাসেত্তি বলেন, মার্চ এবং এপ্রিলে ভাইরাসটি ‘আগ্রাসী বাঘের’ মতো ছিল, বর্তমানে এটি বুনো বিড়ালে পরিণত হয়েছে। এমনকি ৮০-৯০ বছর বয়সীরাও এখন বিছানায় উঠে বসতে পারছেন। তারা কোনও ধরনের সাহায্য ছাড়াই শ্বাস নিতে পারছেন। আগে এই রোগীরা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মারা যেত।
ইতালির এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আমার মনে হয় ভাইরাসটি মিউটেশন ঘটিয়েছে। কারণ, ভাইরাসটির বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা সাড়া দিচ্ছে। লকডাউন, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় এখন ভাইরাল লোড কমে গেছে। এটি কেন ভিন্ন ধরনের আচরণ করছে সেটি নিয়ে আমাদের গবেষণা করতে হবে।
তিনি বলেন, হ্যাঁ, সম্ভবত ভ্যাকসিন ছাড়াই ভাইরাসটি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। আমাদের সংক্রমণ এবং সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা কমে এসেছে। এর ফলে ভাইরাসটি নিজ থেকেই বিদায় নিতে পারে।
ব্রিটেনের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং রুথারফোর্ড হেলথের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা অধ্যাপক কারল সিকোরা বলেন, ব্রিটিশ জনগণের শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের চেয়ে বেড়েছে। নিজ থেকেই ভাইরাসটি নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ।