অং সান সু চি এতদিন বিষধর সাপ নিয়ে ঘুমিয়েছেন! তার সাপ যখন তার সমর্থন নিয়েই রোহিঙ্গাদের ছোবল দিয়েছে, গিলে খেয়েছে, সু চি তখন খুশিতে আত্মহারা হয়েছেন। সু চি ভাবতেও পারেননি এই ‘সাপ’ একদিন তাকেই গিলে খাবে! রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) পর্যন্ত গিয়েছেন তিনি। হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো বীভৎস ঘটনা ঘটিয়েও সু চি পার পেয়ে গেলে সেটা হতো গোটা বিশ্বের জন্যই লজ্জাজনক।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কল্পদৃশ্যের ছবিটা চোখের সামনে ভাসলে কোনো শান্তিপ্রিয় বিবেকবান মানুষ স্থির থাকতে পারবেন না। প্রকৃতির প্রতিশোধ বড়ই নির্মম, এটা এখন সু চি টের পাচ্ছেন। এ মুহূর্তে সু চির দরকার আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সমর্থক। এজন্য অবশ্যই তাকে অতীত ভুলগুলোর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বাহানায় নিরস্ত্র, নিরপরাধ রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের নিধনে সমর্থন দিয়ে সু চি মানবতার অবমাননা করেছেন।
রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারের আচরণ শুধু অমানবিকই নয়, ন্যায়নীতির পরিপন্থীও। রাখাইনে তাদের ভিটেমাটি বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তাদের বসতভিটা এখন অচেনা জনপদে পরিণত হয়েছে। সেখানে কোনো একসময় জনবসতি ছিল, এমনটা অনুমান করাও এখন দুঃসাধ্য।
গৃহবন্দি থাকাবস্থায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সংগ্রাম ও অবস্থান নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন সু চি। তখন রোহিঙ্গা মুসলমানরা তার মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল। অথচ ক্ষমতায় আসার পর সু চি রোহিঙ্গা নিপীড়নে মদদ দেন। সু চির মুক্তির জন্য আন্দোলনকারীরা জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বিশ্বে অং সান সু চির যে জনপ্রিয়তা ও ভালো অবস্থান ছিল, রোহিঙ্গা ইস্যু সামনে আসার পরই সেটি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি সমালোচিত হন; বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সু চিকে দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি ও পদক প্রত্যাহার করে নেয়। শুধু ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নীতি ও নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের বর্বর নির্যাতন ও বাধ্যতামূলক দেশত্যাগের ঘটনাকে সমর্থন দানের কারণে বিশ্বব্যাপী সু চির জনপ্রিয়তায় ধস নামে। তাই সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণ অবৈধ হলেও সু চির গ্রেফতারে অধিকাংশ বিশ্ব জনমত তার পক্ষে নেই বলে প্রতীয়মান।
মিয়ানমারে সেনা নিয়ন্ত্রণের ঘটনা সু চির জন্য একটি বড় শিক্ষা। দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাকে দীর্ঘ ১৫ বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। এ কারণে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অথচ ক্ষমতার প্রলোভনে তিনি সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর চালানো জাতিগত নিধন ও তাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে গেছেন। এ কারণে বিশ্বে তার ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। যে ক্ষমতার জন্য তিনি জেনে-বুঝে এ ক্ষতি মেনে নিয়েছিলেন, এবার সেই ক্ষমতা তাকে হারাতে হলো, নিয়তির এ এক পরিহাসই বটে! মিয়ানমারে মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ফিরে আসুক। সহিংসতা থেকে সব পক্ষকে বিরত থাকতে হবে। মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। জনগণের ভোটে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মী এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার মানসিকতাসম্পন্ন সরকার ক্ষমতায় আসুক. এটাই আমাদের কামনা।