চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসারা দেশব্যাপী দুর্নীতি প্রতিরোধে আজ দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)র পৃথক পৃথক ৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয় । এবং জেলা প্রশাসক ও ৭টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে অবস্থিত শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে কোনরকম নিয়ম-কানুন না মেনে আমদানি করা স্ক্র্যাপ জাহাজ কাটার অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ -এর সহকারী পরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবীর এর নেতৃত্বে আজ এ অভিযান পরিচালিত হয়। সরেজমিন অভিযানে অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক টিম। টিম দেখতে পায়, জাহাজ কাটার সময় এ থেকে নির্গত দূষিত তেল ও বিষাক্ত তরল বর্জ্য পদার্থ নদী থেকে সাগরে গিয়ে মিশে সমগ্র এলাকার জলজ জীবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। শিপ ব্রেকিং-এর সাথে জড়িত ৪টি প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অনিয়ম পায় টিম। শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত জনবল দ্বারাই শীপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিষ্ঠানসমূহ তা অমান্য করছে এরূপ প্রমাণও পাওয়া যায়। সার্বিক বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের তদারককারিতে ব্যাপক অবহেলা রয়েছে মর্মে দুদক টিমের নিকট প্রতীয়মান হয়। নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে সীতাকুন্ড উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্তৃক পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত দুটি প্রতিষ্ঠানকে যথাক্রমে ৩০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
এরপর দ্বিতীয় অভিযানেপারিবারিক মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় এবং ভাঙ্গানোর ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ এবং গ্রাহক হয়রানির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক । দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শারিকা ইসলামের নেতৃত্বে ঢাকা সদর প্রধান ডাকঘরে আজ এ অভিযান পরিচালিত হয়। দুদক টিম ছদ্মবেশে সেবা গ্রহণ করতে গেলে উপস্থিত দুই কর্মচারী তাদের সাথে কথাই বলতে চাননি। এছাড়াও অভিযানকালে টিম দেখতে পায়, ডাকঘরের সিটিজেন চার্টারের বোর্ডটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সর্বসাধারণ কর্তৃক অভিযোগ জানানোর জন্য যে নম্বরটি রয়েছে তার শেষের ২টি ডিজিট দেখা যায়না। দুদক টিমের পর্যবেক্ষণকে আমলে এনে উক্ত ডাকঘরের ডেপুটি পোস্ট-মাস্টার জেনারেল অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দেন। এছাড়াও দায়িত্বে অবহেলার জন্য অভিযুক্ত দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন মর্মে তিনি জানান। উপস্থিত জনসাধারণ দুদকের এ অভিযানকে স্বাগত জানান।
তৃতীয় অভিযান চালানো হয় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় মহিলা অধিদপ্তরের অধীন টেইলারিং প্রশিক্ষণে নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ফরিদপুর -এর সহকারী পরিচালক কমলেশ মন্ডলের নেতৃত্বে আজ এ অভিযান পরিচালিত হয়। টিম উক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে পৌঁছে প্রশিক্ষণকক্ষ ফাঁকা পান, অথচ প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত সময় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা। টিম প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট নথি খতিয়ে দেখতে পায়, সরকারি ছুটি ছিল এমন ২ দিনেও প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়েছে মর্মে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও একই ব্যক্তির নাম একই সময়ে পরিচালিত দুই প্রশিক্ষণে রয়েছে এমনটিও দেখা যায়। দুদক টিম উক্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রাপ্ত অনিয়মসমূহের বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে। ৪র্থ অভিযান পরিচালিত হয় পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃক বিদ্যুৎ লাইন প্রদানে অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালীর সহকারী পরিচালক মোজাম্মিল হোসেনের নেতৃত্বে আজ এ অভিযান পরিচালিত হয়। টিম পটুয়াখালী জেলার সদর উপজেলার জৈনকাঠি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে ও পল্লী বিদ্যুত অফিস থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। টিম জানতে পারে, উক্ত গ্রাম ও আশেপাশে প্রায় দুই বছর পূর্বে ১২ কিমি বিদ্যুত লাইন টানা হলেও এখনও সংযোগ পাচ্ছেন না ৯৫০ জন গ্রাহক। গ্রামের বাসিন্দাগণ জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক লাইন ডিজাইন করার সময়, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক লাইন টানার সময় এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃক ঘরে ঘরে লাইন সংযোগ প্রদান করার আশ্বাসে ২-৩ টি স্তরে গ্রাহক প্রতি ৪০০০-৫০০০/- করে টাকা নেওয়া হয়েছে। এ অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের সুপারিশপূর্বক কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে দুদক টিম। এ ছাড়াও দুদক টিম
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় দেউলী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা কর্তৃক অবৈধ অর্থ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে (টোল ফ্রি হটলাইন- ১০৬) অভিযোগ আসে, উল্লিখিত ভূমি অফিসে খাজনা প্রদানের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে হয়। সরেজমিনে অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক টিম। উপস্থিত সেবাপ্রার্থীগণ দুদক টিমকে জানান যে, বাড়তি টাকা প্রদান না করলে উক্ত ভূমি অফিসে খাজনা গ্রহণ করা হয় না এবং নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অভিযুক্ত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গত জুন মাস হতে অদ্যাবধি খাজনা বাবদ আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করেননি এমন প্রমাণ পায় দুদক টিম। আগত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধানের অনুমোদন চেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে অভিযান পরিচালনাকারী টিমের পক্ষ থেকে।
অপরদিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে আগত এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বরিশাল –এর সহকারী পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান –এর নেতৃত্বে আজ এ অভিযান পরিচালিত হয়। সরেজমিন অভিযানে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক টিম। টিম দেখতে পায়, উক্ত কার্যালয়ের বেশ কিছু ওষুধে লেবেল নেই, এছাড়া কয়েকটি ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়াও অভিযান পরিচালনাকারী টিম কার্যালয়ের রেজিস্টারগুলো হালনাগাদ অবস্থায় পায়নি। এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি এ অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন মর্মে নিশ্চিত করেন।
একই টিম গতকাল বিকালে (২৭/০৮/২০১৯ খ্রি.) ভোলা লঞ্চঘাট টারমিনালে একটি অভিযান পরিচালনা করে। দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে আগত এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে টিম দেখতে পায়, উক্ত ঘাটে টার্মিনাল চার্জের তালিকা সম্বলিত ব্যানার নেই, এছাড়াও যাত্রীদের কাছ হতে মালামাল নিয়ে ওঠার সময়ে রশিদ ছাড়াই টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ অনিয়মসমূহের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালককে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে দুদক টিম।দুদকের আরেকটি টিম সাধারণ বীমা কর্পোরেশন কর্তৃক বিমান বাংলাদেশের পুনর্বিমা করার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে দুদক। সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ হতে গতকাল এ অভিযান পরিচালিত হয়। টিম অভিযোগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করে। তথ্যাবলি বিশ্লেষণপূর্বক কমিশনে বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া দুদক এনফোর্সমেন্ট দুটি জেলার জেলা প্রশাসক ও ৭টি উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়েপদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পত্র প্রেরণ প্রেরন করেন
এছাড়াও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামজারি, ডিসিআর ও খাজনা বাবদ ঘুষ গ্রহণ ও গ্রাহক হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক কমিশনকে অবহিত করার জন্য জেলা প্রশাসক, গোপালগঞ্জ ও হবিগঞ্জ-কে পত্র প্রেরণ করেছে দুদক এনফোর্সমেন্ট ইউনিট। এদিকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলনপূর্বক আত্মসাতের অভিযোগে, বিদ্যুতের মিটার প্রদানে ঘুষ দাবীর অভিযোগে, জমির খাজনার টাকা আদায়ের নামে ঘুষ দাবীর অভিযোগে, জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ থেকে ডেজ্রারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের অভিযোগে, ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ক্লিনিকে অনুপস্থিত থেকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে, এবং স্কুলে ক্লাস না করিয়ে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে যথাক্রমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বাঘাইছড়ি (রাঙ্গামাটি), বকশিগঞ্জ (জামালপুর), চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম), চরফ্যাশন (ভোলা), ভুয়াপুর (টাঙ্গাইল), হাতিয়া (নোয়াখালী) এবং সদর উপজেলা, যশোর-কে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।