দৌলতপুরে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী অঙ্কিতা হত্যাকারী দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রোববার নগরীর নতুনরাস্তার মোড়ে মানববন্ধন করেছে ৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ, নাইস ফাউন্ডেশন, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারসহ অন্যান্য সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এসময় তারা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ধর্ষণের মূল কারণ। অঙ্কিতা দে ছোঁয়া হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।
কম্বল দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে খুলনার দৌলতপুরের বীনাপানি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ছাদে ওঠায় বাড়িওয়ালা প্রীতম । পরে ধর্ষনের চেষ্টা চালালে চিৎকারের এক পর্যায়ে তার মাথায় ভারিবস্তু দিয়ে আঘাত করলে আট বছরের শিশুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর ধর্ষণ শেষে লাইলোনের দড়ি ও পরনের জুতার ফিতা দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
খুলনা মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রট সারোয়া আহমেদের আদালতে দুপুরে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বীনাপানি ভবনের মালিক প্রীতম। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
দৌলতপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে প্রীতম জানায়, হত্যার পর বস্তায় ভরে শিশুর লাশ প্রথমে গ্যারাজে সিমেন্টের বস্তার পাশে ও পরবর্তীতে গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে বিউটি পার্লারের বাথরুমে লুকিয়ে রাখা হয়। ঘটনার সাথে আর কেউ জড়িত নয় বলে সে স্বীকার করেছে।
গত ২২ জানুয়ারি দুপুরে খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় স্কুল ছাত্রী। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিলো। ২৮ জানুয়ারি শিশুটির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের পর প্রিতমসহ আটজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করে। শুক্রবার রাতে প্রিতমকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। আটক অপর সাতজনকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে ওসি জানান।
উল্লেখ্য,শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে খুলনার দৌলতপুর থানার পাবলা বনিক পাড়া এলাকায় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অংকিতা দে। এ ঘটনায় প্রথমে সাধারণ ডায়েরি ও পরবর্তীতে অপহরণ মামলা করেন অঙ্কিতা বাবা সুশান্ত দে। মামলার পর পুলিশ একই এলাকার জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী রিক্তাকে গ্রেফতার করে। জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী রিক্তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন ওই এলাকার একটি ভবনের নিচতলার শৌচাগার থেকে উদ্ধার হয় অঙ্কিতার বস্তাবন্দি মরদেহ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বীণাপানি ভবনের মালিক প্রভাত রুদ্র, পার্লারের মালিক মুক্তিসহ ছয়জনকে আটক করেছে। তাদেরকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় সৃষ্টি হয় চাঞ্চল্য, নেমে আসে শোকের ছায়া। ওই ভবনের ছাদে পাওয়া যায় রক্তের চিহ্ন। এছাড়া পরিবারটির সাথে কারো দ্বন্দ্ব না থাকায় তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছে পুলিশ।
নিহত অঙ্কিতার বাবা দৌলতপুর পাবলার বণিকপাড়ার বাসিন্দা সুশান্ত দে বলেন, আমার কোনো শত্রু ছিলো না। আমার অবুঝ মেয়েকে কে বা কারা হত্যা করেছে তা আমি বুঝতে পারছি না। মেয়ের মরদেহ যেখানে যাওয়া গেছে আমার বাসা থেকে তা একশত গজ দূরে। আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ও খুব শান্ত সবসময় ঘরে থাকে। ছোঁয়া খুব চঞ্চল ও খেলা প্রিয় ছিল। সারাদিন ছোটাছুটি করতো। মেয়ের হত্যার বিচার চাই।