খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)’র চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: মাহবুবুল ইসলাম বলেছেন, আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোনভাবেই অত্যাধুনিক ও বহুতল ভবন নির্মাণ করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলেই নির্মিত ভবন ভেঙে ফেলার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া, যা নিয়মিত প্রতিপালন করে আসছে কেডিএ। বুধবার (১০ ফেব্রæয়ারি) সকালে নগরীর কেডিএ এ্যাপ্রোচ রোডে নকশা বহির্ভূত এক বহুতল ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদকের কাছে এই কথা বলেন তিনি।
কেডিএ’র চেয়ারম্যান জানান, ডেভেলপার ও স্থাপত্যবিদ (নকশা প্রণয়নকারী) এমন দুই ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের সাথে গত সপ্তাহেই এনিয়ে বৈঠক হয়েছে। তখন তাদেরকেও উল্লেখিত বিষয়ে কড়াকড়ি হুশিয়ারি দেয়া হয়। তাদের উদ্দেশ্যে তখন বলা হয়, আমরা যদি সুন্দর খুলনা গড়তে চাই, তবে সবাইকে সরকারের আইন ও নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হবে, মানতে হবে। আর যারা মনে করছেন, সরকারের আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন, তাদের জন্যই এই (বহুতল ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলা) বন্দবস্ত। যারা আইন মানেন, যারা খুলনার ভালো পরিবেশ গড়তে চান, তাদের সাথে আমরা কেডিএ হাত মেলাই। তাদের পাশে থেকে সকল সহযোগিতা করি।
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: মাহবুবুল ইসলাম জানান, এলইডি হোল্ডিং কোম্পানীর এই ভবন মালিকদের পরপর চার দফায় নোটিশ দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। তারপর তারা নকশা বর্হিভূতভাবে ভবনের সামনের অংশ বর্ধিত করে। বারবার নোটি দিয়েও আমলে না নেয়ায় শেষমেষ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে কেডিএ। এরই অংশ হিসেবে ভবনের বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া খুলনায় আইন না মেনে ভবন নির্মার্ণকারীদের একটি তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা ধরে শীঘ্রই ঝটিকা অভিযান চলবে বলে জানান তিনি। এজন্য আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। আমরা যদি সুন্দর খুলনা চাই তবে আমাদের সরকারের বিধি-বিধান মেনেই ভবন করতে হবে। এক প্রশেক্ষ জবাবে তিনি বলেন, নকশা প্রণয়ন ও পাস ছাড়া যারা ভবন করেছে তারা আইনের কাছ বড় অপরাধী। এমন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তড়িৎ পদক্ষেপ নেবে কেডিএ, এমন নিশ্চয়তা প্রদান করেন এই সেনবাহিনীর এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ১৭নং ওয়ার্ডের কেডিএ এ্যাপ্রোচ রোডে ২৭নং হোল্ডিং’র মালিক তুষার কান্তি দোবে। কেডিএ তাকে কয়েক দফায় কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে জানায়, ১৯৫২ সালের বাংলাদেশ গৃহ নির্মাণ আইন (১৯৫৩ সনের ইবি আইন) সংশাধিত আইন ১৯৮৭ এর সংশ্লিষ্ট ধারা লংঘন করেছেন তিনি। অনুমোদিত নকশায় ইমারতের পিছনে ২ মিটার জায়গা ছেড়ে নির্মাণ কাজ করার কথা। তবে বাস্তবে তিনি সেমিবেজমেন্টর প্রান্ত থেকে শূন্য দমিক ৫০ মিটার জায়গা ছেড়েছেন। আবার ইমারতের সামনে দেড় মিটর জায়গা ছাড়ার কথা ছিল, সেখানে কোন জায়গা ছাড়া হয়নি, সাটারিং কাজ করেছেন ভবন মালিক। এছাড়া অনুমোদিত নকশায় ইমারতের দক্ষি পার্শ্বে রাস্তা সম্প্রসারণের জায়গার পর এক দশমিক পঁচিশ মিটার জায়গা ছেড়ে র্নিাণ কাজ করার কথা। বাস্তবে কোন জায়গা না ছেড়ে রাস্তা সম্প্রসারণের প্রান্ত থেকে সেমিবেজমেন্টের নির্মাণ কাজ করা হয়েছে।
কেডিএ’র অথরাইজড অফিসার মো: মজিবুর রহমান বলেন, ভবন মালিকপক্ষকে বারবার বলা স্বত্তে¡ও তারা বর্ধিতাংশ অপসারণ করেনি। তাই হঠাৎ এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। তা-না-হলে নানান ধরণের প্রভাব-তদবিরের কারণে অভিযানের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এসয় তিনি জানান, এলইডি ভবনে বর্ধিতাংশ অপসারণ কাজে ব্যয় করা সব অর্থ ভবন মালিকপক্ষই কেডিএ’কে পরিশোধ করবে। তার ব্যত্যয় ঘটলে তাদের সার্টিফিকেট মামলাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ওই ভবনটির মালিকের ছেলে সঞ্জয় দোবে বলেছেন, তারা এক ডেভেলপার কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে নির্মাণ কাজ করছেন। কেডিএ নোটিশ তারা পেয়েছেন, তবে চুক্তি করা এলইডি হোল্ডিংস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মীমাংসায় কাজ করছেন বলে তাদের পক্ষ হতে কেডিএ’র সাথে যোগাযোগ করা হয়নি।