চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফ্রি। আগে শুধুমাত্র ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকলেও ছুটির দিনসহ দিন-রাত খোলা থাকে প্যাথলজি বিভাগ। তারপরও একের পর এক রোগীকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর জন্য চিকিৎসকরা পাঠাচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক ভালো প্রতিষ্ঠানে টেস্ট করান এই কথা বলে রোগী পাঠাচ্ছে সন্ধানী ক্লিনিকে। যাওয়াও লাগছে না সন্ধানীর দালালরা এসে হাসপাতালে রোগীদের কাছ থেকে রক্ত নিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ফি দিয়ে মানহীন রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের অভিযোগ এরা রক্ত নিয়ে চিকিৎসকদের স্বাক্ষর জাল করে রিপোর্ট প্রদান করছে। ফলে সঠিক রোগ নির্ণয় না করতে পারায় একদিকে অর্থ সংকটে পড়ছে রোগীরা, অন্যদিকে চিকিৎসার নামে জালিয়াতির শিকার হচ্ছে। বৃহস্পতিবার খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রক্ত নিতে আসলে সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুই কর্মীকে আটক করে পুুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা মোঃ রেজাউল হোসেনের (৩৬) রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য ডাক্তার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে এ পরীক্ষাটি হলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আশিষ রায় নামের একজনকে ফোন দিয়ে রক্তের স্যাম্পল দেয়া হয়। সেটি ওই আশিষ রায়ই নিয়ে যান নগরীর বাবুখান রোডের সন্ধানী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। যথারীতি পরীক্ষাটি করার পর রক্তের প্লাটিলেট দেখা যায় মাত্র ১৭ হাজারে নেমে গেছে। অথচ একই পরীক্ষাটি একই দিন খুমেক হাসপাতালের প্যাথলজী বিভাগ থেকে করার পর দেখা যায় রক্তের প্লাটিলেট এক লাখ ৪০ হাজার। এতেই সন্দেহ হয় রোগীর লোকদের। পর পর আরও কয়েক রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় রিপোর্টে ব্যাপক গড়মিল। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওই স্যাম্পল কালেক্টর আশিষ রায় হাসপাতালে গেলে রোগীর লোকেরা তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। আবার আশিষ রায়কে ছাড়াতে গিয়ে আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয় পুলিশ। এভাবেই ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে হাসপাতালের কিছু ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বাণিজ্যের চিত্র ফুটে ওঠে।
খুমেক হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গতকাল সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভর্তি থাকা বাদশা, হাবিবুর রহমান, তামান্নাসহ একাধিক রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এক এক ধরনের রিপোর্ট। অর্থাৎ একই রোগীর একাধিক প্রতিষ্ঠানের একাধিক রিপোর্ট। আবার প্রায় প্রতিটি রোগীর পরীক্ষাই করানো হয় সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। এ প্রসঙ্গে রোগীর ভিজিটররা বলেন, ডাক্তার যখন পরীক্ষার পরামর্শ দেন তখন একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, এই নম্বরে ফোন দিয়ে যোগাযোগ করলেই পরীক্ষাগুলো হয়ে যাবে। তখন চিরকুটের ওই নম্বরে ফোন দেয়া হলে সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্যাম্পল কালেক্টর আশিষ রায় এসে রক্তের স্যাম্পল কালেকশন করে নিয়ে যান। এভাবেই সরকারি হাসপাতালের রোগীর পরীক্ষা বাইরে থেকে করানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধুমাত্র ডেঙ্গু ওয়ার্ড না মেডিসিন সার্জারি প্রত্যেক ওয়ার্ডেই একক আধিপত্য সন্ধানী ক্লিনিকের। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সাথে যোগসাজসে বেশিরভাগ টেস্টই চলে যায় সন্ধানীতে। হাসপাতাল পরিচালক এ সমস্যা সমাধানে প্যাথলজি একবেলার পরিবর্তে দুইবেলা খোলা রাখে। কিন্তু কিছু চিকিৎসক তোয়াক্কা না করে সন্ধানীতে রোগী পাঠাতেই ব্যস্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন রোগীরা।
মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ পার্থ প্রতীম সাহাও গতকালকের ওই স্যাম্পল কালেক্টর আটকের কথা জানেন না বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রোগী কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন সেটি তার ব্যাপার। এখানে ডাক্তারদের কোন পরামর্শ থাকে না।
সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষের পক্ষ থেকে জনৈক গৌতম জানান, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ঠিকই আছে। এমনকি যিনি পরীক্ষার রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন সেই ডাক্তারও বলেছেন সবগুলো স্বাক্ষরই তার। তবে অনেক স্বাক্ষর করতে হয় বলে অনেক সময় স্বাক্ষরে গড়মিল হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মমতাজুল হক বলেন, দু’ধরনের রিপোর্টের কারণে রোগীর লোকদের সন্দেহ হওয়ায় জটলা থেকে আশিষ রায়সহ দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এখন কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রির্পোট লেখা পর্যন্ত রোগীর কয়েকজন ভিজিটর কাগজপত্র নিয়ে রাতে থানায় গিয়েছেন বলেও ওসি জানান।