চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃনগরীর বেশ কয়েকটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিকদের কাছে ফোন করে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সরাদেশে বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে অনলাইনে। আর প্রতারক চক্র এ সুযোগটিই কাজে লাগানোর চেষ্টা চালিয়েছে। তারা এসব নিবন্ধন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পুলিশী তদন্তের ভালো রিপোর্ট দেয়ার জন্য কৌশলে চাঁদা দাবি করছে হাসপাতালগুলোতে। তবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় তাদের তরফে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যেরা কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকের সাথে যোগাযোগ করেনি। এদিকে প্রতারক বা চাঁদাবাজ চক্র থেকে সকল বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিকদের সাবধান থাকতে নির্দেশনা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন বিপিএমপিএ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল নগরীর খালিশপুর ক্লিনিকে আসেন খালিশপুর থানার এসআই শতদল। ক্লিনিকের মালিক ডাঃ মুজাহিদুল ইসলামের কাছে গিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা থেকে এডিসি মারুফ স্যার কথা বলবেন। এ সময় এডিসি মারুফ পরিচয়ে কেউ কথা বললেন ডাঃ মুজাহিদুল ইসলাম এর সাথে। এরপর এস আই শতদল তার দায়িত্ব শেষ করে চলে গেলেন নিজ দায়িত্বে। ডাঃ মুজাহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, এডিসি মারুফ পরিচয়ে সেই ব্যক্তি ডাঃ তার কাছে জানতে চায় তিনি অনলাইনে তার হাসপাতাল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন কি না। ডাঃ মুজাহিদ বললেন হ্যাঁ আমি আবেদন করেছি। তখন অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় আমার কাছে আপনার হাসপাতালের নিবন্ধনের জন্য তদন্ত এসেছে। এক পর্যায়ে অন্যান্য নানা পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কথা শুরু করে। এরই মাঝে ২ লাখ টাকা দাবি করে এডিসি পরিচয়ের লোকটি। পরে এসব খাতে টাকা দেন না জানিয়ে মিষ্টি খাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন ডাঃ মুজাহিদ। যা ম্যানেজার আরিফের মাধ্যমে নিতে বলেন। তবে বিকাশ নাম্বার বন্ধ থাকায় টাকা পাঠাতে দেরি হয় খালিশপুর ক্লিনিকের। এরই মাঝে একই ঘটনা ঘটে যায় খুলনার একজন সিনিয়র প্যাথলজিস্ট ডাঃ মনিমোহন এর মালিকানাধীন ক্লিনিক ও নগরীর গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। খুলনা বিএমএ সহ-সভাপতি ও গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান এর কাছেও একই ব্যক্তি ফোন দিয়ে অনুরুপ কথা বলে টাকা দাবি করেন। সকলকেই তিনি হাসপাতালের নিবন্ধনের তদন্ত রিপোর্টের জন্য চাঁদা দাবি করেন। যা সারা শহরের ক্লিনিক মালিকদের কাছে মুহূর্তেই চাউর হয়ে যায়।
ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার কাছে পুলিশের এডিসি মারুফ পরিচয়ে কথা বলেছে। তবে টাকা চাওয়ার আগে আমি ফোন রেখে দিয়েছি। একই মুহূর্তে নগরীর খালিশপুর ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি ক্লিনিকে টাকা চেয়েছে। পরে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি এটি স্রেফ একটি প্রতারণা। পুলিশের কোন কর্মকর্তা ফোন দেয়নি। একটি প্রতারক চক্র পুলিশকে ব্যবহার করে অত্যন্ত সুকৌশলে চাঁদাবাজি করার চেষ্টা করেছে। যা সফল হয়নি। বিপিএমপিএ এর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
খালিশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাকিবুল আলম বলেন, একটি প্রতারক চক্র থানায় ডিউটি অফিসার-এর কাছে ফোন দিয়ে নিজেকে এডিসি মারুফ পরিচয় দেন। এরপর তিনি এলাকার দায়িত্বরত সাব ইন্সপেক্টর-এর নাম্বার নিয়ে তাকে খালিশপুর ক্লিনিকের মালিকের সাথে কথা বলতে বলেন। শুনেছি এর পরে তার কাছে চাঁদা দাবি করেছে। এ ঘটনায় তদন্ত করা হয়েছে। কোন ধরনের প্রতারক চক্র এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় জিডির প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে বিপিএমপিএ খুলনার সভাপতি ও বিএমএ খুলনার সহ-সভাপতি ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান।