খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে মুজগুন্নি মহাসড়ক অন্যতম। সোনাডাঙ্গা আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল থেকে নতুন রাস্তা মোড় পর্যন্ত এ সড়কটির অবস্থান। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ককে কেন্দ্র করে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে বৃহৎ দু’টি হাসপাতালসহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু এ সড়কটির বর্তমান অবস্থা এতই বেহাল যে, বড় বড় খানা-খন্দ ও গর্ত হয়ে চলাচলের অযোগ্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এ মহা সড়কটির বিভিন্ন স্থানে বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ডেবে বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির সময় এসব স্থানে পানি জমে থাকে। এ অবস্থায় সড়কটি দিয়ে জনসাধারণের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে যাতায়াতকারী রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীর সোনাডাঙ্গ আন্ত:জেলা বাস টার্নিমাল থেকে খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড় পর্যন্ত সড়কের আশপাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত শেখ আবু নাসের হাসপাতাল, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি’র সেক্টর সদর দপ্তর, নৌ-বাহিনী ঘাঁটি (বানৌজা তিতুমীর), বিএনএন স্কুল এন্ড কলেজ, এ্যাংকরেজ স্কুল, নৌ-বাহিনী ভর্তি কেন্দ্র, নাবিক কলোনী, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন, মুজগুন্নী শিশু পার্ক, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, রায়েরমহল (অনার্স) কলেজ, নগরস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ সরকারি-বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহজ যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যমই হচ্ছে মুজগুন্নি মহাসড়ক। কিন্তু সড়কটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি দীর্ঘদিন। যার ফলে সড়কটি বর্তমান বেহাল অবস্থা। বিভিন্ন স্থানে বিটুমিন উঠে গেছে। আবার কোথাও কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি স্থানে ডেবে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃস্টি হয়েছে। বৃষ্টির সময় পানি জমে থাকছে। যার ফলে প্রায় ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। আর জনসাধারনের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনেও এ সড়কটি মেরামত না করায় গর্ত আর খানাখন্দে দেখলে বোঝাই যায় না; এটা বিভাগীয় শহর খুলনা। বর্তমানে বর্ষার পানিবদ্ধতায় সড়কগুলোতে পানি জমে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে ড়েছে। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব সড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। নাকাল খুলনাবাসীর সড়ক যোগাযোগের দুরাবস্থার চিত্র ফুটে উঠছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্র জানায়, মহানগরীতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)’র ১ হাজার ২১৫টি সড়ক রয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ৬৪০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রধান সড়ক রয়েছে আড়াই শতাধিক। যার দৈর্ঘ্য ২০০ কিলোমিটারের মতো। নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক হিসেবে মুজগুন্নি মহাসড়কটিও কেসিসি’র আওতাধীন।
নগরীর বাসিন্দা মোঃ তহিদুল ইসলাম ও রিয়াজুল ইসলামসহ কয়েকজন চালক জানান, এ সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় উঁচু টিলার মতো তৈরি হয়েছে। ফলে মোটরসাইকেল আরোহী ও অন্যান্য গাড়ি চালকরা রাস্তা সমতল ভেবে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে গেলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তারা এর প্রতিকার চেয়েছেন।
খুলনা সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা সাংবাদিকদের বলেন, কর্পোরেশনের পূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের গাফিলতি রয়েছে। সড়কগুলোর যথাযথভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে না। এছাড়া জলাবদ্ধতায় সড়ক নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে সড়ক সংস্কারে বাজেট কম রাখা ও অল্প খারাপ হলে মেরামত করা হয় না। ফলে বেশি খারাপ হলে সংস্কার ব্যয় বেড়ে যায়। অর্থের অভাবে আর সহজে সড়ক সংস্কার হয় না। যার ভোগান্তি পোহাতে হয় জনসাধারণের।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর ওয়াসিউল ইসলাম মন্তব্য করেন, ‘ভাবতে খুব আবাক লাগে যে এটি একটি বিভাগীয় শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সামনের মূল ফটকের সামনের রাস্তা। দীর্ঘ দিন হতে এই রাস্তার এই বেহাল অবস্থা দেখে মনে হয় এই রাস্তার কোন অভিভাবক নেই! বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটার পূর্বেই এই রাস্তাসহ শহরের অন্যান্য রাস্তা (বিশেষ করে একই রাস্তাটি যা বয়রা, মুজগুন্নী হয়ে নতুন রাস্তা পর্যন্ত; সোনাডাঙ্গা-রূপসা সেতু লিংক রোড; গল্লামারী-জিরো পয়েন্ট রোড; বয়রা-রায়েরমহল-রূপসা সেতু লিংক রোড) অতি দ্রুত সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবেন আশা করি।
গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা খুলনার দুর্ভাগ্য, খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানের সামনের রাস্তায় এই ভাঙাচোরা অবস্থার কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। হাসপাতালে আগত রোগী এবং তাদের আত্মীয় স্বজনরা হাসপাতালের সামনে এসেই দুর্ঘটনা এবং ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, এটা যেন দ্রুত সমাধান করা হয়। সাথে সাথে সিটি করপোরেশনের কাছে দাবী জানাচ্ছি, নাগরিকদের ভোগান্তি এবং দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে, স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে তারা যেন সাময়িক সংস্কার করে দেয়।
এ ব্যাপারে কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ এজাজ মোর্শেদ চৌধূরী গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে সড়কের বেশির ভাগ স্থানে বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক বৃষ্টির মৌসুমের পর ৬৫০ কোটি টাকা প্রকল্পের আওতায় সংস্কার করা হবে।
সূত্র- দৈনিক প্রবাহ