নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনার খালিশপুরের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী নজরুল তালুকদার (৩০) ও মনিরুল ইসলাম মন্ডল (২৭)এর অস্ত্রের মহড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৬ জুন এই সন্ত্রাসী বাহিনীর অন্যতম সহযোগী সুমন হোসেন বাপ্পি গণপিটুনিতে মারা যায়। এরপর থেকে খালিশপুরে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে সন্ত্রাসী ও মাদক সম্রাট নজরুল-মন্ডল। এই বাহীনির অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও তাদের শাস্তির দাবিতে আজ ২৭ জুন দুপুর ১২ টায় খুলনা প্রেসক্লাবে ১২নং ওয়ার্ডের ৭নং আটকেপড়া পাকিস্থানী ক্যাম্পবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ লিখিত অভিযোগ করা হয় ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৭নং বিহারী ক্যাম্প বাসীর পক্ষে নুসরাত জাহান ।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে নুসরাত জাহান অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ খালিশপুরে সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসায়ীদের পরিচালনা করে আসছে নজরুল ও তার ভাই মন্ডল। তাদের নামে খালিশপুর থানায় একাধিক মাদক ও হত্যা মামলা রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ে পথের কাটা হওয়ায় ২০১৬ সালের অক্টোবরে খালিশপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে নাদিম হোসেনকে। কলেজ ছাত্র বাপ্পি হত্যা সহ একাধিক হত্যা ও মাদক মামলার কারণে কিছুদিন পলাতক থাকার পরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আবারও সক্রিয় এ বাহিনী। স্থানীয় ক্ষমতা ও মাদক ব্যবসা পরিচালনার জন্য খালিশপুরের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং, ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসী গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। যারা এলাকায় নারীদের উত্তক্ত করা, ইয়াবা ব্যবসা, ছিনতাই, চুরি, চাঁদাবাজি সহ নিজেদের অবস্থান সক্রিয় রাখতে ধারাল অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহড়া দিয়ে আসছে। এ গ্রুপে তাদের সাথে রয়েছে সুমন হোসেন বাপ্পি সহ অনেকে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করেন, গত ১৬ জুন এ বাহিনীর অন্যতম সদস্য সুমন হোসেন বাপ্পি গণপিটুতিতে মারা যায়। তার নামে একাধিক মাদক ও হত্যা মামলা রয়েছে। খালিশপুরের বিহারী ৭, ১, ৩ নং ক্যাম্প ও হাউজিং এলাকায় নারীদের উক্তক্ত করা সহ ইয়াবা ব্যবসা, ছিনতাই, চুরি, চাঁদাবাজি ও ধারাল অস্ত্র নিয়ে থাকত বাপ্পি। বেশির ভাগ সময় ৭ নং ক্যাম্পের মধ্যে তার সন্ত্রাসী বাহিনীদের নিয়ে অবস্থান করত। ক্যাম্পের ভিতর মহিলাদের গোসলখানার আশেপাশে অবস্থান করত। মহিলারা এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দিত। বাপ্পির দলনেতা মন্ডলের নেতৃত্বে ক্যাম্পের বিভিন্ন বাসায় লুট করত। এদের অত্যাচারে কোন মহিলা, পুরুষ, যুবক, যুবতীরা নিরাপদে থাকতে পারত না। এরা সবসময় ধারাল অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করত। এদের মদতদাতা নজরুল। যে নিজেই খালিশপুর থানার ১৪ টি মামলার আসামী। যেহেতু এরা সবাই খুনের আসামী তাই ০৭ নং ক্যাম্পবাসী নিরবে এদের জুলুম অত্যাচার সহ্য করে আসছে। বাপ্পির মা ফরিদা বেগম এলাকায় পতিতা ও সুদের ব্যবসায়ী। গত ১৫ জুন রাত সাড়ে ১১ টায় মোঃ সুজন হোসেন তার ঔষুধের দোকান বন্ধ করে আসার পথে মন্ডল, বাপ্পি, সাজ্জাদ ও আকরাম তাকে ঘেরাও করে দেশি অস্ত্র দেখিয়ে দশ হাজার টাকা ছিনতাই ও মারধর করে। ঘটনাটি প্রকাশ করলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। পরদিন ১৬ জুন ৭ নং ক্যাম্প নিবাসী সেলিম হোসেনকে বাপ্পি ও সাজ্জাদ দেশি অস্ত্র নিয়ে ঘেরাও করে পাঁচশত টাকা ছিনতাই ও মারধর করে। একাধিক নির্যাতন ও অত্যাচারের কারণে ৭নং ক্যাম্প এলাকাবাসী বাপ্পি ও সাজ্জাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়। ঐদিন দুপুরে বাপ্পি ও সাজ্জাদ শিয়া মসজিদ মোড়ে দেশি অস্ত্র নিয়ে ছিনতাই করার সময় এলাবাসীর কাছে গণপিটুনি খায়। পরে বাপ্পি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় বাপ্পির স্ত্রী রাণী বেগম খালিশপুর থানায় ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
বাপ্পি মারা যাওয়ার পর নজরুল, মন্ডল ও তার সহযোগীরা ৭ নং ক্যাম্প এলাকাবাসীদের প্রবেশ গেটে ইট, পাথর নিক্ষেপ করে প্রবেশ গেটে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর থেকে ৭ নং ক্যাম্প এলাকা ডিম ব্যবসায়ী রনি, মাহাবুব, গুড্ডু হোসেন সহ কয়েকজনকে মারাত্মক ভাবে আহত করে। এলাকাবাসীকে যেখানে পাচ্ছে সেখানেই মারছে। নজরুল-মন্ডল সন্ত্রাসী বাহিনী প্রতিদিন এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। পাশাপাশি এলাকাবাসীর দাবি, যে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে ঘটনার দিন তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে ছিল। এলাবাসীর জানা মতে, এরা কোন খারাপ কর্মকান্ড বা রাষ্ট্রদ্রোহী কাজে কখনো লিপ্ত ছিল না।