চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃদীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন উপাচার্যের যোগদানের মধ্য দিয়ে গতিশীলতা ফিরে পেয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিনের নানামুখী কার্যক্রমে ক্যাম্পাসে স্বস্তি ফিরেছে। নিয়োগ লাভের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি।এর আগে দীর্ঘ ৬ মাস উপাচার্য শূন্য ছিল দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠটি। ফলে চরম সংকটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। স্থবির হয়ে পড়ে অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। আর্থিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কেউ না থাকায় বন্ধ থাকে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। আটকে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা। এতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। এরপর নতুন উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণ করায় ক্যাম্পাসের দীর্ঘদিনের অভিভাবক শূন্যতা কাটে। অস্বস্তির ক্যাম্পাসে স্বস্তি ফিরে আসে।
গেল ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন। যোগদানের দিনই তিনি ক্যাম্পাসে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বরিশালের সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন। সেশনজট কমিয়ে আনা, শিক্ষা ও গবেষণা এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কর্ম দিবসে তিনি আটকে থাকা বেতন ভাতা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যোগদানের পরদিন তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্থগিত হওয়া ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেন। একই দিন তিনি শিক্ষার্থীদের সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে আবাসিক হল ও ক্যাফেটেরিয়া পরিদর্শন করেন এবং খাদ্যের মানোন্নয়ন, বিশুদ্ধ পানির সংকট সমাধান ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নের আশ্বাস দেন। এছাড়া নতুন গবেষণাগার উদ্বোধন, গ্রন্থাগারের মানোন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণসহ একাধিক ছাত্র বান্ধব কাজের মাধ্যমে তিনি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের মন জয় করে নিয়েছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট সবার।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম শোভন বলেন, ‘নতুন উপাচার্যের কার্যক্রম আমার কাছে ইতিবাচক ও আশানুরূপ মনে হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, চলমান সংকট ও সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে যাবেন।’
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আইরিন নাহার তিথি বলেন, ‘যোগদানের পর থেকেই ভিসি স্যার একের পর এক ছাত্র বান্ধব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় তিনি ১০ নম্বর বিপদ সংকেত উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে আবাসিক হল পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এর আগে কারও কাছে এ ধরনের অভিভাবক সুলভ আচরণ আমরা পাইনি। আমি আশাবাদী, তার এই ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি অতিদ্রুত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’
নতুন উপাচার্য প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সহকারী রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, ‘আমাদের নতুন উপাচার্য মহোদয় অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ মানুষ। যোগদানের প্রথমদিন থেকেই তিনি নানামুখী ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেক্টরের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করে ধারাবাহিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিনের অচলায়তন কাটিয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও দপ্তরগুলো অনেক বেশি সক্রিয় ও গতিশীল। তার সার্বিক কার্যক্রম এই অঞ্চলে সবার কাছে ইতোমধ্যে অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া বলেন, ‘দীর্ঘদিন উপাচার্যবিহীন থাকার পর নতুন উপাচার্যের নানামুখী কার্যক্রমে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ ফিরে এসেছে। আমরা আশাবাদী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।