আরিফুর রহমান: সাম্প্রতিক আলোচিত চরিত্র, দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত পি কে হালদারের মতো আরেকজন ব্যক্তির খোঁজ মিলেছে রাজউকে। যার কাহিনী সিনেমাকেও হার মানায়। যিনি পাঁচজন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলীর পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। এজন্য তার খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। পদে বসেই সে টাকা তিনি সুদে-আসলে তুলে নিয়েছেন। এ করিৎকর্মা ব্যক্তির নাম উজ্জল মল্লিক। যিনি রাজউক তথা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী। এই নব্য ‘পি কে হালদার’ উজ্জল মল্লিক এখন আমলাপাড়ায় বেশ আলোচিত নাম হয়ে উঠেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্থাটির সিনিয়র প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালীকে প্রধান প্রকৌশলী পদে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে পদায়ন করা হয়। তবে মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সাইদ নুর-আলম বড় অঙ্কের বিনিময়ে হেলালীর পরিবর্তে দফতরে জুনিয়র প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিককে পদায়ন করেন। যা প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিকের জাদুকরী গুণের অন্যতম নিদর্শন বলে মনে করা হচ্ছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অধিষ্ঠিত হবার পর উজ্জল মল্লিক রাজউকের প্রকৌশলীদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে গঠন করেন ‘মাস্তান’ বাহিনী। যাদের মাধ্যমে সিনিয়র প্রকৌশলীদেরকে হেনস্থা করে কোনঠাসা করে রাখেন এবং তার অনিয়ম দুর্নীতিকে নির্বিঘ্ন করেন। তার প্রথম মিশন শুরু হয় সিনিয়র প্রকৌশলী নুরুল ইসলামকে দিয়ে। তার রুমে মাস্তান পাঠিয়ে টেবিল চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। প্রকৌশলী নুরুল ইসলামকে জামায়াতে ইসলামী সমর্থক আখ্যা দিয়ে গালিগালাজও করেন তার বাহিনী। এসময় নুরুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার ঘটনাও তারা ঘটায়।
এছাড়াও উজ্জল মল্লিকের মাস্তান বাহিনী সম্প্রতি রাহাত মুসলেমীন নামে অন্য একজন প্রকল্প পরিচালককে বিএনপির সমর্থক বানিয়ে তার রুমে ভাঙচুর করা হয়। রুমের কম্পিউটার ভাঙ্গাসহ তাকেও শারীরিকভাবে হেনেস্তা করা হয়। তার হাত থেকে রেহাই পাননি মহিলা কর্মকর্তারাও। উজ্জল মল্লিকের বাহিনী রাজউকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে বিরোধীতাকারীদের নানা ধরনের হুমকি দিয়ে থাকে। বহুল প্রচারিত হুমকিটি হচ্ছেÑ প্রধানপ্রকেীশলী (বাস্তাবায়ন) উজ্জল মল্লিকের কথা যারা না শুনবে, তাদেরকে রাজউকে চাকরি করতে দেওয়া হবে না। যা দফতরটিতে কর্মরত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কে এই উজ্জল মল্লিক: উজ্জল মল্লিকের উত্থান ঘটে বিএনপির ছত্রছায়ায়। রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুর ইসলামের (বিএনপির মন্ত্রী নোমানের জামাই) হাত ধরেই উজ্জল মল্লিকের চাকরিতে যোগদান। শোনা যায়, বিএনপির আরেক নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর আর্শিবাদ পেয়ে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। এ সময় সহকারী প্রকৌশলী পদ খালি না থাকায় উজ্জল মল্লিক একজন কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে মাস্টার রোল-এ যোগ দেন। অতঃপর ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত সকল সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে বিশেষ ব্যবস্থায় তৎকালীন বি.এন.পি-র দুনীতিবাজ গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাকে রাজউক-এ সহকারী প্রকৌশলী পদে মাস্টাররোল-ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। যা তার জন্য আর্শিবাদ বয়ে আনে। এসময় তিনি মীর্জা আব্বাসের সুদৃষ্টিতে পড়ে নিজের অবস্থান আরও পাকাপোক্ত করতে সমর্থ হন। ফলে বিএনপির আমলে অনৈতিক সবরকম সুবিধা তিনি ভোগের পাট্টা লাভ করেন। ২০০৮ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে উজ্জল মল্লিক ভোল পাল্টে পুরো আওয়ামী লীগার হয়ে যান। এছাড়া চট্টগ্রামের লোক হিসাবে তিনি অনেকটাই সুবিধা আদায় করে নেন। সংসদীয় কমিটি-র সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী (চিটাগং থেকে নির্বাচিত) এর নাম ভাঙ্গিয়ে নিজ পদ মর্যাদা বাড়িয়ে নেন। পরবর্তীতে ইঞ্জি. মোশারফ হোসেন (চট্রগ্রাম) মন্ত্রী হবার পর উজ্জল মল্লিকের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার স্বেচ্ছাচারিতা তখন চরম আকার ধারণ করে। এই সুযোগে তিনি সিনিয়রদেরকে ডিঙ্গিয়ে একাধিকবার পদন্নোতি নিয়েছেন। বিএনপির ছত্রছায়ায় নিয়োগ ও অনৈতিক সুবিধাভোগী উজ্জল মল্লিক যেমন বিএনপির সময়ে দাপট দেখিয়েছেন, তেমনি আওয়ামী লীগ আমলেও সে দাপট অক্ষুণ্ন রেখেছেন। তার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের আরও অনেক রোমহর্ষক কাহিনী রাজউকে কান পাতলে শোনা যাবে।
প্রকল্পে দুর্নীতির হোতা: ২০০৭-২০০৮ সময়ে বিজয় সরণির মুখে তেজগাঁ রেলক্রসিংয়ের উপর ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক থাকাকালে নিরীহ ১৩ জন শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে আছে। তার চরম অব্যবস্থাপনার কারনে এইসব নীরিহ শ্রমিকদের মৃত্যু হয়। র্যাংগস বিল্ডিংয়ের মালিক এ সংক্রান্ত মামলাও দায়ের করেন। এত বৃহৎ অবকাঠামো অপসারণের কাজে যোগ্য ও অভিজ্ঞ পরামর্শকের প্রয়োজনীতা থাকলেও সে বিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেননি তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক উজ্জল মল্লিক। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার একক দায়িত্ব নিয়ে তিনি এই সব হতভাগ্য শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হন। তার অদক্ষতায় এতবড় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলেও পর্দার অন্তরালে থেকে যান হুকুমদাতা উজ্জল মল্লিক।
পূর্বাচল প্রকল্পের অনিয়ম: বিএনপি ঘরানার হলেও মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনের নাম ভাঙিয়ে রাজউকের দুর্বত্তায়নের নতুন মাহাকাব্য লিখেছেন উজ্জল মল্লিক। এক এক করে সব সিনিয়রদেরকে ডিঙিয়ে পূর্বাচল প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রকল্প ব্যবস্থাপক অতঃপর সহকারী প্রকল্প পরিচালক এবং পরিশেষে প্রকল্প পরিচালক বনে যান তিনি। আশ্চর্যের বিষয় বিভিন্ন সময়ে কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে প্রকল্প ব্যবস্থাপক-সহ অনেককেই ওই প্রকল্পে থেকে বদলি করা হলেও উজ্জল মল্লিককে কখনই বদলি করা হয়নি। তিনি একই পূর্বাচল প্রকল্পে একটানা ১২ (বারো) বছর বিভিন্ন পদে নিযুক্ত থেকে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও পূর্বাচল প্রকল্পে প্রায় ৪৮ (আটচল্লিশ) কি.মি. দীর্ঘ লেক আছে। প্রজেক্ট প্রোফাইল অনুযায়ী সারা বছর এসকল লেক-এ পানি থাকার কথা। এমনকি দেশের ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা চলার বিষয়টি লিপিবদ্ধ রয়েছে। অথচ আনোয়ার হোসেন (সাবেক প্রধান প্রকৌশলী) এর প্রিয়ভাজন এই উজ্জল মল্লিক লুটতরাজের ছিদ্র হিসেবে ডিজাইনের ব্যত্যয় ঘাটিয়ে প্রতিটি ব্রিজের ডেক বাস্তবে নিচু করে দিয়েছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে অনৈতিকভাবে লাভবান করে বখরাবাজির লক্ষ্যে এমনভাবে ব্রিজগুলো নির্মাণ করান যাতে পাল তোলা নৌকা তো দুরের কথা, লেক দিয়ে ছোট ডিঙ্গি নৌকাও চলাচল করতে না পারে। এছাড়াও পূর্বাচল প্রকল্পের বিভিন্ন মৌজায় বিভিন্ন উচ্চতা রেখে প্রকল্পের সৌন্দর্য্য ও ভুমির ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা। যেমন-ইছাপুর মৌজায় ৭.০০ আর-এল’র বিপরীতে কমতা-হাড়ারবাড়ী রঘুরামপুর মৌজায় ১৩০০ আর-এল থাকবে। অথবা ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে সব মৌজার আর-এল এক সমান করে উপরস্থ মাটি নিচে ভরাট করে উপরোক্ত মাটি ভরাটের বিল হিসেবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন করিৎকর্মা উজ্জল মল্লিক। পক্ষান্তরে প্রকল্পের সৌন্দর্য্য হানি ঘটেছে। পূর্বাচল প্রকল্পে নিযুক্ত থাকাকালে পায় ৫ (পাঁচ) হাজার কোটি টাকা ঠিকাদারী বিল পরিশোধের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ট উজ্জল মল্লিক। লেক ও মাটি ভরাটের পাশাপাশি ৩শ’ কি.মি আশা রাস্তা ও ১৫০ কি.মি ঊর্ধ্বে ড্রেনের কাজ তার হাত দিয়েই সম্পন্ন হয়েছে। নিম্নমানের কাজ হওয়ায় যা এখন ভেঙে পড়ছে। জনশ্রুতি আছে যে এক পূর্বাচল প্রকল্পের উক্ত বিল হতেই উজ্জল মল্লিকের অবৈধ উপর্জন শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এসব টাকা তিনি হুন্ডির মাধ্যমে দেশে না রেখে ভারতে পাচার করেছেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। ভারতে নিজের শ্যালক থাকায় অতি সহজেই তিনি সে দেশে প্রচুর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এদিকে পূর্বাচল প্রকল্পে সার্বিক ব্যত্যয় বাস্তবায়নের শ্লথগতি ও দুনীতি নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি নির্দেশে আই.এম.ই.ডি, প্ল্যানিং কমিশন ও দুদকের একাধিক প্রতিনিধি দল অনুসন্ধান শুরু করলেও কোনটিই আলোর মুখ দেখেনি। গুঞ্জন রয়েছে যে কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে উজ্জল মল্লিক সকলকেই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। বলাবাহুল্য, দুর্নীতির ঢাকনি যোগান দিতে আরও দুর্নীতি প্রয়োজন হয়।
উজ্জল মল্লিকের বিরুদ্ধে আরও যেসব অভিযোগ:
১. ঠিকাদারী কাজের টেন্ডার ডকুমেন্ট এ কারসাজি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন এই উজ্জল মল্লিক।
২. ‘ওয়েস্টার্ন’ নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা মূল্যের কাজ দেওয়ার বিনিময়ে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জি. মোশারফ হোসেন ও তৎকালীন রাজউক চেয়ারম্যানের অনুসারী হিসেবে সামগ্রিক কাজের উপর নিজেই শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
৩. পূর্বাচল প্রকল্পের ‘ওয়াটার সাপ্লাই’ কাজের (পিপিপি) খাত থেকেও ৬ (ছয়) কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
৪. টেন্ডার ডকুমেন্ট-এ তথ্যের ঘাপলা করে অনৈতিকভাবে অযোগ্য ঠিকাদারগণকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। যেমন, প্যাকেজ নং- ১৯ আরসি-০৬-জিআই লট নং ০২, ০৩, ০৪ প্রভৃতির ক্ষেত্রে প্রথমবারের টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত আমূল পাল্টে দ্বিতীয়বারের ‘টিইসি’-এর মাধ্যমে পছন্দসই ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে প্রায় দুই কোটি কামিয়ে নেন।
৫. অজক নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ১০০ (একশত) কোটি টাকার রাস্তার কার্পেটিং কাজে ঘষা-মাজা করে প্রায় ১৭ (সতের) কোটি টাকা হাতিয়েছেন।
৬. পূর্বাচল প্রকল্পে মাত্র ০৩ (তিন) কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়ে প্রভাব খাটিয়ে সেটিকে বদলিয়ে ৮.৫০ কাঠার প্লটে রূপান্তরিত করেছেন। রাজউকের বনানী কোয়র্টারে থাকলেও সেখানে বিশাল বাংলো বানিয়ে প্রায়শঃই অবকাশ যাপন করেন তিনি।
৭. ভ্রমণ পিপাসু উজ্জল মল্লিক রাজউকের সকল কর্মকর্তার বিদেশ সফরের সমষ্টির চেয়েও অধিক সংখ্যক বার একাই সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। সে সময় তার লন্ডন, কানাডা প্রবাসী আত্মীয়-স্বজনদের কাছে অবৈধ অর্থ পাচার করেছেন বলে জনশ্রুতি আছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তার শ্যালক থাকায় তার মাধ্যমে অনেক টাকা হুন্ডিতে পাচার করেছেন। সেখানে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।
সম্প্রতি, রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে ১.৫০০ (পনের শত) ক্ষতিগ্রস্তদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। জানা গেছে, দুটি বরাদ্দে যে স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে তা অ্যাপার্টমেন্ট মিডল জন্য। তা নিম্ন আয়ের লোকেদের জন্য সংরক্ষিত। পূর্বাচল প্রকল্পের লে-আউট উপযুপরি ৪র্থ বার সংশোধন করার পর প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দের কারণে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি ‘বিইএলএ’ কর্তৃক রাজউকের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক প্লট বরাদ্দে জনশ্রুতি রয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাটা-এক্সকে দিয়ে প্লটের বিবর্তন ঘটানোর, যার পিছনে রয়েছেন এই উজ্জল মল্লিক। এসময় প্রায় ৪৫ শত কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয়। উক্ত অপকর্মে জড়িত ছিলেন তৎকালীন বিএনপি দলীয় মন্ত্রী চট্রগ্রামের ইঞ্জিঃ মোশারফ হোসেন, তৎকালীন রাজউক চেয়ারম্যান আ. রহমান, পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক শেখ শাহীন এবং উজ্জল মল্লিক। পূর্বাচলের ৪র্থ সংশোধনীর উপর যেখানে মামলা চলছে সেখানে কিভাবে পুণরায় সংশোধনী করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি এরূপ, ১০০টি বরাদ্দে অনিয়মের আশ্রয়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদেরকে বাদ রেখে টাকা খেয়ে অন্য লোককে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে গণপূর্ত মন্ত্রী, রাজউকের অধুনা-প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাঈদ নুর, পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক শেখ শাহীন, পরিচালক প্রশাসন হাসানসহ এই কার্যক্রমে জড়িত অন্যান্যরা প্রায় ১০০ (একশত ত্রিশ) কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে। যার নেপথ্যের নায়ক এই উজ্জল মল্লিক।
এদিকে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলীর পদের জন্য শর্তপূরণ ব্যতিরেকেই তিনি প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পেয়েছেন। চাকরির নিয়োগবিধি অনুযায়ী প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ‘তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে ন্যূনতম ০৫ (পাঁচ) বছর চাকুরির অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। উজ্জল মল্লিকের সে অভিজ্ঞতা নেই। আবার তিনি সিনিয়র একাধিক কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে প্রধান প্রকৌশলী হয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্লিক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। এমন কি যিনি অভিযোগকারী তিনিও সঠিক নন।’ নিজের কোন অবৈধ সম্পদ নেই বলেও দাবি করেন উজ্জ্বল মল্লিক।
সবকিছু অস্বীকার করে এসব নিয়ে কোনো রিপোর্ট না ছাপতেও অনুরোধ জানান তিনি এই বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমি গত কিছু দিন হলে এসেছি তেমন কিছু জানিনা। আপনি বলেছেন তাই জানলাম। আমি এই বিষয়ে খোঁজখবর নেব।’