দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা নাটোরের বাসিন্দা অপু সরকার। সম্প্রতি মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছেন এই ২২ বছর বয়সি তরুণ। তার আগে কৃষি কাজ করতেন তার বাবা ও দাদা।
২০০৮ সালে দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত সবকিছু স্বাভাবিকই ছিল অপুর পরিবারে। কিন্তু এ্নআইডি কার্ড করতে যাওয়ার পর থেকেই তাদের বিপদের শুরু। অপুর বাবা অমল সরকার পরিচয়পত্র নিবন্ধন করাতে গেলে কর্মরত ব্যক্তি বুঝতেই পারলেন না কীভাবে তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিবেন। কারণ তার যে ফিঙ্গারপ্রিন্টই নেই!
অনেক দেনদরবারের পর শেষ পর্যন্ত অমল সরকারকে ‘নো ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ সিল মারা একটি এনআইডি কার্ড দেয়া হয়। এর মাঝেই অপুর পরিবার জানতে পারে, অদ্ভুত জীনগত বৈশিষ্ট ধারণ করছে তারা। সেটা হলো অপুর দাদা, বাবা কিংবা ভাই কারই আঙুলের ছাপ নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার নাম ‘অ্যাডারমেটাগ্লিফিয়া’।
আর বিরল এই বিষয়ের কারণে পরিবারটির খবর স্থান পায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। বিবিসি ওয়ার্ল্ডে তাদের নিয়ে করা একটি ফিচার স্টোরিতে জানানো হয়, ২০১০ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও পাসপোর্টের জন্যও ফিঙ্গারপ্রিন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়। এবার আবার বিপাকে পড়েন অমল সরকার। কয়েকবার চেষ্টা করেও পাননি পাসেপোর্ট। শেষ পর্যন্ত মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে সার্টিফিকেট দিয়ে তাকে পাসপোর্ট নিতে হয়। এছাড়া পারিবারিক কাজের জন্য তাকে মোটরসাইকেল চালাতে হয়। লাইসেন্স পেতে ফি দিয়ে পরীক্ষাও দেন তিনি। কিন্তু পাস করলেও ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট না থাকায় এখন পর্যন্ত লাইসেন্স দেয়া হয়নি তাকে।
লাইসেন্স পরীক্ষায় পাশ করার রশিদ নিয়ে মোটরসাইকেল চালান অমল সরকার। কিন্তু সবসময় এটা সাহায্য করেনা, এখন পর্যন্ত দু’বার তাকে জরিমানা দিতে হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, ২০১৬ সাল থেকে মোবাইলের সিম কিনতেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট বাধ্যতামূলক করে সরকার। এপ্রসঙ্গে বিবিসিকে অপু জানান, সিম কেনার জন্য আমি সফটওয়্যারে আঙুল বসালেই তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই কখনই নিজের নামে সিম কেনা হয়নি। ঘরের সবাই মায়ের ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে কেনা সিম ব্যবহার করি।
একই ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করেন অপুর চাচা গোপাল সরকারও। বহু কষ্টে তিনি পাসপোর্ট পান। অফিসে উপস্থিতি যাচাইয়ে ফ্রিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবস্থা চালুর পর তার জন্যই সাক্ষর করা খাতার পুরনো ব্যবস্থা রাখা হয়।
তাদের ভোগান্তির বিষয়ে বিবিসির কাছে অমল সরকার জানান, ফিঙ্গারপ্রিন্ট না থাকায় আমাকে খুব বেশি সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়নি। তবে আমার ছেলেদের অসহায় অবস্থা দেখে খুব দুঃখবোধ হয়। কিন্তু এখানে তো আমাদের কারও হাতে নেই।
মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখিয়ে সম্প্রতি বিশেষ এনআইডি কার্ড পেয়েছেন অপু ও তার বাবা। কিন্তু এখনও তারা সিম কিনতে পারেন না এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সও পান না।
এ প্রসঙ্গে অপু বলেন, মানুষকে একই বিষয় বারবার ব্যাখ্যা করতে করতে আমি ক্লান্ত। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছি আমাদের করণীয় কী? কেউ সঠিক সমাধান দিতে পারেনি। অনেকে বলেছে আদালতের দ্বারস্ত হতে। যদি আর কোন উপায় না থাকে, শেষ পর্যন্ত আমাকে তাই করতে হবে।