চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই শীর্ষ নেতাসহ অনেককেই মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতেন সম্রাট। যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব এ তথ্য পেয়েছে। অভিযানের সঙ্গে যুক্ত র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ কথা জানিয়েছেন।
গত রোববার ভোরে যুবলীগের নেতা সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সেখানে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়ায় আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কুমিল্লার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সম্রাটের তথ্যের ভিত্তিতে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রোববার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযান চালান। বন্য প্রাণীর চামড়া রাখার দায়ে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অস্ত্র এবং মাদক রাখায় সম্রাট ও আরমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা করা হয়।
অভিযানে যুক্ত র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে অভিযানের সময় সম্রাট কেঁদে ফেলেন। কখনো ভাবেননি তিনি গ্রেপ্তার হবেন। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বলেন, ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারটি তিনি দখলে নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রসহ ঢাকার এক ডজন ক্লাবের জুয়া ও ক্যাসিনো নিয়ন্ত্রণ করতেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাঈদকে দিয়ে তিনি ক্যাসিনো চালাতেন। এ ছাড়া তিনি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এসব খাতের টাকা সম্রাটের ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত আরমানের কাছে জমা হতো। ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির টাকার একটি বড় ভাগ যেত যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার পকেটে। সম্রাট মাঝেমধ্যে ক্যাসিনো খেলতে সিঙ্গাপুরে যেতেন। একাধিক দেশে টাকা পাচার করার কথা স্বীকার করেন তিনি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সম্রাট তাঁর টাকার উৎস সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছেন। সম্রাট যাঁদের টাকা দিতেন, তাঁদের নাম বলেছেন। সম্রাটের বিরুদ্ধে করা অস্ত্র ও মাদকের মামলা দু-এক দিনের মধ্যে তদন্তভার পাবে র্যাব-১। রিমান্ড পাওয়া গেলে এঁদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০১২ সালে সম্রাট ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি হন। এরপর তাঁকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। দক্ষিণ যুবলীগের নিজস্ব কোনো কার্যালয় না থাকলেও সম্রাট কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টার দখল করে কার্যালয় হিসেবে ব৵বহার করেন।
সম্রাট এখনো হাসপাতালে
দুদিন ধরে জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) আছেন সম্রাট। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভর্তির পর যতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, তার সব কটি প্রতিবেদনই ভালো এসেছে। তবে শনিবারের আগে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য মহসিন আহমেদ বলেন, সম্রাটের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা মিলিয়ে বর্তমানে তিনি ভালো আছেন। তবে গতকাল তাঁর হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত ছিল। তাই তাঁকে আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁর কোনো ঝুঁকি নেই এবং তাঁকে বিদেশে নেওয়ারও প্রয়োজন নেই।
গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়কের কাছে সম্রাটের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চিকিৎসকেরা বলছেন তিনি সুস্থ আছেন। তাহলে কেন তাঁকে কারাগারে আনা হচ্ছে না। তখন কারা তত্ত্বাবধায়ক বলেন, হাসপাতাল তাঁকে না ছাড়লে কারা কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসকেরা আমাকে জানিয়েছেন, হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত। তবে অসুস্থ না হলে রোগের ছুতোয় কোনো আসামি হাসপাতালে গিয়ে আরাম করতে পারবে না। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’
গতকাল সম্রাটের স্ত্রী ও ভাই, যুবলীগের কিছু নেতা এবং আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চিকিৎসক সংগঠন স্বাচিপের কয়েকজন নেতা–কর্মী সম্রাটকে দেখতে হাসপাতালে যান। পরে সম্রাটকে সিসিইউর অন্য বিছানায় সরিয়ে নেওয়া হয়।