প্রবল জনবিক্ষোভের মুখে নতি স্বীকার করে সরকারি বাসভবন ত্যাগ করা লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে আত্মগোপন করেছেন। জাহাজটি বর্তমানে দেশটির সমুদ্রসীমার ভেতরে কোনো একটি এলাকায় রয়েছে।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
শনিবার (০৯ আগস্ট) দুপুরের দিকে গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে তার সরকারি বাসভবন ঘেরাও করতে হাজির হন একদল বিক্ষোভকারী; কিন্তু গোয়েন্দাসূত্রে এই তথ্য জেনে একদিন আগেই বাসভবন ত্যাগ করেছিলেন গোতাবায়া।
প্রাথমিকভাবে শোনা গিয়েছিল, তিনি সামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরে আশ্রয় নিয়েছেন; কিন্তু পরে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সূত্রের কাছ থেকে তার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় বিবিসি।
চরম আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় চলতি বছর মার্চ থেকে। শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার বড় ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবি করে আসছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
প্রবল জনরোষের মুখে গত মে মাসে মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও গোতাবায়া এতদিন নিজের পদে অনড় ছিলেন।
রোববার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার জানিয়েছেন, আগামী ১৩ জুলাই পদত্যাগ করবেন প্রেসিডেন্ট, গোতাবায়া অবশ্য এখন পর্যন্ত এ বিষয়ক কোনো বিবৃতি দেননি।
এদিকে বাসভবন ঘেরাও করতে এসে গোতাবায়া রাজাপাকসের আত্মগোপনের সংবাদ জানার পর বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সেখানে প্রবেশ করেন এবং অবস্থান নেন। একই দিন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সরকারি বাসভবনও দখল করেন বিক্ষোভকারীরা, সেই সঙ্গে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তার ব্যক্তিগত বাসভবন।
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তারা এই পদত্যাগের ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চান। যতক্ষণ তা না ঘটবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন থেকে নড়বেন না বলেও জানিয়েছেন তারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি বিলাসবহুল বাসভবন থাকলেও সেখানে নিয়মিত থাকতেন না শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট। তিনি সাধারণত ঘুমাতেন প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছেই ছোট একটি বাসায়।
প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ব্যবহার করতেন কেবল দাপ্তরিক কিংবা সরকারি কাজে। নিজের পরিবারসহ কলম্বোর একটি বেসরকারি বাসভবনে থাকেন তিনি।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বলতে আর কিছুই নেই। ফলে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত শ্রীলঙ্কা খাবার, ওষুধ, জ্বালানির মতো অতি জরুরি আমদানিও করতে পারছে না।