চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ধেয়ে আসছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এর প্রভাবে রাজধানীর আকাশ সারা দিনই ছিল মেঘাচ্ছন্ন, আর সকাল থেকেই ছিল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শনিবার (৯ নভেম্বর ) বিকালে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের আশঙ্কায় টার্মিনাল এলাকায় বেশির ভাগ লঞ্চ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লঞ্চ না পেয়ে নৌপথের বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা মালামাল ও পরিবার–পরিজন নিয়ে টার্মিনালে বসে আছে। কেউ কেউ টার্মিনালে পাটি, চাদর বিছিয়ে রাত্রিযাপন করেছে। তারা লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
শুক্রবার থেকেই সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ।গতকাল সন্ধ্যা সাতটা থেকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে কোনো যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। এতে নদীপথের যাত্রীরা বিপাকে পড়ে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পরিবার–পরিজন ও মালামাল নিয়ে টার্মিনাল এলাকায় রাত্রিযাপন করেছে। সন্ধ্যা সাতটার পর ২২ ঘণ্টা ধরে ঢাকা নদীবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ রুটের কোনো যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি।
রাজধানীর মহাখালীতে থাকেন কালাম মিয়া। শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে সদরঘাট থেকে পারাবত লঞ্চে বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশে সদরঘাট টার্মিনালে আসেন। লঞ্চ ছাড়ার কথা ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে লঞ্চমালিকেরা লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেছে। দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে টার্মিনালে শুয়েছিলেন।
তিনি বলেন, লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষায় আছি। আর বাসায় ফিরি নাই।
রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকা থেকে আসা আয়শা বেগম বলেন, আমতলী যাওয়ার উদ্দেশে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে টার্মিনালে আসি। এসে শুনি লঞ্চ চলাচল বন্ধ। ভেবেছিলাম আজ লঞ্চ ছাড়বে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লঞ্চ না ছাড়ায় পরিবার–পরিজন নিয়ে টার্মিনালে বসে আছি।
ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালের নৌযান পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান বলেন, আজ কোনো লঞ্চ টার্মিনাল ছেড়ে যায়নি এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে কোনো লঞ্চ টার্মিনালে আসেনি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের আশঙ্কায় নৌযানগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা নদীবন্দরের উপপরিচালক কায়সারুল ইসলাম বলেন, বন্দর কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন, যাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা না ঘটে।
এদিকে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড়টি মোংলা বন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। এটি এখন ১৫/২০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছে। উপকূলে আঘাত হানার সময় ঝড়ের গতি বেগ হতে পারে ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মতো। ধারণা করা হচ্ছে রাত ৮টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে।
ঘুর্ণিঝড়টি বর্তমানে উত্তর দিকে এগোচ্ছে। যদি এ গতিতে এগোতে থাকে তবে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানবে। এখন জোয়ারের সময় তাই ঝড়ের সঙ্গে ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।