সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা মঙ্গলবার , ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
পদ্মা সেতু - সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা | চ্যানেল খুলনা

পদ্মা সেতু – সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা

ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম :: ৮০’র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় কয়েক বছর মিরপুর কোটবাড়ী থাকতাম। সে সময় প্রতিদিন ঢাকা-আরিচা রুটের মুড়ির টিন খ্যাত বাসে চড়তাম। তখন ঢাকা শহরের সবগুলো বাস রুটে উঠার কোন নিয়ম কানুন ছিল না। ভিড়ের ভিতর ঠেলাঠেলি করে বাসে চড়তে হতো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে আমি সিঙ্গাপুরের জাতীয় শিপিং কোম্পানী নেপচুর ওরিয়েন্ট লাইনস (এনওএল) এ কর্মজীবন শুরু করি। চাকুরীর সুবাদে ১৯৯৬ সালে প্রথম সিঙ্গাপুর সফর করি। সিঙ্গাপুর গিয়ে ওখানকার নিয়মকানুন শহরের পরিস্কার পরিছন্নতা দেখে খানিকটা বিস্মিত হই। সবাই লাইন দিয়ে টেক্সি, বাস ও ট্রেনে উঠছে। চলাফেরা সব কিছুতেই অনাবিল স্বাচ্ছন্দ। বয়স্ক বা শাররিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ-সম্মান দেখে মুগ্ধ হই।
ঠিক তখনই আমার মানসপটে ভেসে ওঠে ঢাকার গণপরিবহনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কঠিন চিত্র। তখন মনে হচ্ছিলো আমাদের দেশের মানুষ কেন নিয়ম কানুন মানে না বা মানতে চায় না। দেশের মানুষ সম্পর্কে আমার এ ধারণা ভুল ছিল! ১৯৯৭-১৯৯৮ সালের দিকে ঢাকা শহরে চালু হলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রিমিয়াম বাস সার্ভিস, তখন ঢাকা শহরে বাসে চড়ার দৃশ্যপট পাল্টে গেল। এসব বাসের সকল যাত্রীগণ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে সুশৃঙ্খলভাবে বাসে উঠে আসন গ্রহণ করছে। পরবর্তীতে অধিকাংশ পরিবহন এ নিয়মে বাস পরিচালনা শুরু করে। অর্থাৎ আমরাও ইচ্ছে করলে বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের মত নিয়ম কানুন আরোপ করে বাস্তবায়ন করতে পারি। এ প্রসঙ্গে আরেকটি কঠোর উদাহরণ দিতে চাই, ঢাকা শহরের প্রত্যেক গাড়ীর চালক যখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভিতর প্রবেশ করে তখন শতভাগ নিয়মকানুন মেনে গাড়ী চালায়, অথচ সেই চালকই যখন ক্যান্টনমেন্টের বাইরে গাড়ী চালায় তখন নিয়ম কানুনের কোন তোয়াক্কা করে না। কারণ সে জানে এখানে অনিয়ম করে ধরা পড়লে হয়ত কিছু আর্থিক জরিমানা হবে তবে কোন শারীরিক বা কঠোর শাস্তি নেই। সুতরাং কিছু ক্ষেত্রে কঠোর আইন প্রয়োগ সুশৃঙ্খল পরিবেশের জন্য সহায়ক।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, পদ্মা সেতু নিয়ে এদেশের মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। মেঘনা, গোমতী, যমুনার পর পদ্মাতে সেতু হবে, বাংলাদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নতুন মাত্রা পাবে এ স্বপ্ন বাংলাদেশী প্রতিটি মানুষের। সেতুর সফল উদ্বোধন নিয়ে দীর্ঘ সময় অসংখ্য কমিটি মিটিং করে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জুন ২০২২ উদ্বোধনী পর্ব চমৎকারভাবে সম্পন্ন করেছে। অথচ দুঃখের বিষয় সেতু যানবাহনের জন্য উন্মুক্ত হবার পর কিভাবে সেতুটি পরিচালিত হবে, যানবাহনের লেন, টোল প্লাজার সক্ষমতা, সেতুর উপর প্রশাসনিক নজরদারী, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে খুব বেশী অলোকপাত করা হয়েছে বলে মনে হয় না। সেতু বিভাগের আচরণে মনে হয়েছে সফল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, প্রচার প্রচারণা এবং সেতু নির্মাণের মহত্ব-কৃতিত্ব নিয়েই সবাই ব্যস্ত। দেশের সাধারণ নাগরিকের অর্থে সেতু নির্মাণ করেছে সরকার, এটা তাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করে মহত্ব দেখাবার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেতু ব্যবহারকারী নাগরিকদের প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করা।
২৬ জুন ২০২২ সকাল ৬টায় সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। টোল প্লাজার সামনে তৈরী হয় দীর্ঘ যানজট এবং চরম বিশৃঙ্খলা। সেতুর উপর সাধারণ মানুষ গাড়ী রেখে সেলফি তোলা, টিকটক ভিডিও, দৃষ্টিকটু কর্মকান্ড, নিয়ন্ত্রণহীন মোটর সাইকেল চালাতে গিয়ে ২ জনের মৃত্যু, কে প্রথম সেতুতে কি করলো সেটা প্রচার ইত্যাদি মিলে সেতু পরিণত হয় আলোচনা সমালোচনার বিষয়ে। অবস্থাদৃষ্টিতে মনে হয়েছে সরকার ইচ্ছাকৃত জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এগুলো করতে উৎসাহিত করেছে। অন্যথায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এসব বাড়তি যামেলা গুলো সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
বেগতিক অবস্থা থেকে পরিত্রান পেতে ২৭ জুন থেকে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য সেতুর উপর দিয়ে মোটর সাইকেল চলাচলা বন্ধ করতে হয় বাধ্য হয় । মোটর সাইকেল ফেরী দিয়ে পদ্মা নদী পার হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানেও বিপত্তি, সময়মত ফেরী না পাওয়া বা পর্যাপ্ত ফেরীর ব্যবস্থা না থাকায় মোটর সাইকেলের যাত্রীগণ বিক্ষোভ শুরু করেন। মাওয়া-জাজিরা রুটে চলাচল করা যাত্রীরা ফেরী ঘাটের অনিয়ম নিয়ে এমনিতেই অতিষ্ঠ। একজন যাত্রী হিসাবে বলতে পারি, সাধারণ মানুষের প্রতি অবজ্ঞা অবহেলা এসব সমস্যার মূল কারণ। অন্যথায় ফেরী পারাপারে কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে উদাসিনতা বা ব্যর্থ্যতার জন্য কোন শাস্তি বা জবাবদিহিতা নেই। এখানেও চলছে দলীয় নিয়োগ ও লেজুড়বৃত্ত রাজনীতি। তাই সবাই ইচ্ছে ঘুড়ির মত চাকুরী করছে, কোন নিয়ম কানুনকে পাত্তা দিচ্ছে না।
ভাবতে অবাক লাগে আমরা ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে সেতু ব্যবস্থাপনায় এনালগ পদ্ধতি প্রযোগ করে আমরা প্রথমেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। সেতু ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছি। আবার কর্তৃপক্ষ মুলা ঝুলাচ্ছে অটোমেটিক টোল চালু হলে টোল প্লাজার ভোগান্তি কমবে। প্রশ্ন হচ্ছে, টোল প্লাজা তৈরী হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে, তাহলে এসব উন্নত প্রযুক্তি সংযোজন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সবগুলো বুথ উদ্বোধনের দিন চালু করলে সমস্যা কোথায় ছিল? প্রাইভেট গাড়ী, বাস, ট্রাক, লরি-কাগোর্ এগুলোর জন্য টোল বুথ পৃথকীকরণ খুবই জরুরী, সেটা কেন গুরুত্বসহ চালু করা হয়নি? ফেরীতে দেখেছি ভিআইপি যাত্রীদের কোন সমস্যা নেই এমনকি সেতুও তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ সেতু হোক বা ফেরী হোক তাদের যাতায়াতের জন্য সবকিছু অবারিত এবং সব কিছু প্রস্তুত। দূর্ভাগ্য সাধারণ মানুষের, যাদের টাকায় দেশ চলে তাদের প্রতি সর্বত্র চলছে চরম অবহেলা। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত হাই-ওয়ের টোল প্লাজা, পদ্মা সেতু টোল প্লাজার সমস্ত অসঙ্গতি দূর করে সাধারণ যাত্রীদের ঈদের ছুটি বা বাড়ি ফেরা নির্বিঘœ হোক সেটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক: পরিবেশকর্মী
ই-মেইল: : farid.dac@gmail.com

https://channelkhulna.tv/

খোলামত আরও সংবাদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রয়াত শেখ মনিরুল ইসলাম মনি বেঁচে থাকুক আমাদের মনিকোঠায়

জীবনসংগ্রামে সফল এক সাহসি নারী বেগম রাজিয়া নাসের

‘‘বেগম রাজিয়া নাসের” দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আওয়ামী লীগের প্রাণ

“বিনয়, শিষ্টাচার, মানবিকতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যুবনেতা শেখ সুজন”

বয়লার মুরগি এখন স্কীকৃত নিম্ন আয়ের মানুষের খাবার

“বিএনপির হাতে হারিকেন, দেখে হাসে জনগণ”

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
উপদেষ্টা সম্পাদক: এস এম নুর হাসান জনি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: শেখ মশিউর রহমান
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
ঢাকা অফিসঃ ৬৬৪/এ, খিলগাও, ঢাকা-১২১৯।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির জন্য আবেদিত।