সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শনিবার , ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে চলছে হরিলুটের কারবারঃ মূল হোতা রমজান আলী ধরা ছোয়ার বাইরে | চ্যানেল খুলনা

স্টেশন পরিষ্কারে পাউডার বিল ৯৫ লাখ, বারান্দার টিন ও টয়লেট মেরামত বিল ৭৩ লাখ টাকা

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে চলছে হরিলুটের কারবারঃ মূল হোতা রমজান আলী ধরা ছোয়ার বাইরে

ফকির শহিদুল ইসলামঃপশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশন পরিষ্কার করতে ভিম পাউডার কেনা হয়েছে ৯৫ লাখ টাকার। একটি ছোট্ট শৌচাগার মেরামতে খরচ দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। আরেকটি শৌচাগারসহ বারান্দার টিন বদলে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৩ লাখ টাকা। ভৌতিক খরচ দেখানো হয়েছে বিভিন্ন স্টেশন রং করা, লাইন সংস্কার, রেলসেতু রং করা, ছাউনি-প্ল্যাটফর্মের টিন বদল এমনকি স্যানিটারি উপকরণেরমত ছোট ছোট কাজে। কোথাও ছিটেফোটা কাজ হয়েছে। কোথাও কাজের কোনো অস্তিত্বই নেই। কিন্তু গায়েবি এসব কাজ দেখিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকার বিল।

ছোট ছোট কাজে বড় ধরনের  ব্যয় অবিশ্বাস্য । অবিশ্বাস্য এই ব্যায়ের হিসাবের পুরো চিত্রই বলে দিচ্ছে এ যেন লুটপাটের সুনামি চলছেপশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে । এছাড়া কোথাও নামে মাত্র কাজ হয়েছে। আবার কোথাও কাজের অস্তিত্বই নেই। গায়েবি এসব কাজের বিপরীতে বিল তোলা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন এসব কাজের নথি রেলভবন থেকে জব্দ করে অনুসন্ধান করছে। বিভিন্ন নথি বলছে- দুর্নীতির এ সিরিজ প্যাকেজের মূল্য ৭০০ কোটি টাকা।

সূত্রে জানা যায়, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে এমন শত শত কাজ টেন্ডার ছাড়াই পেয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার। এক্ষেত্রে কোনো নিয়মই মানা হয়নি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এসব দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হওয়ায় পশ্চিম রেলওয়েতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতির এ সিরিজ প্যাকেজের মূল্য ৭০০ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। পশ্চিম রেলের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েক কর্মকর্তা সিন্ডিকেট দুর্নীতির এ মহাযজ্ঞের নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র মতে, একটা ছোট অফিসের টয়লেট মেরামত করে এক ঠিকাদার বিল নিয়েছেন প্রায় ২৮ লাখ টাকা। বারান্দার টিন বদল ও অফিসের টয়লেট মেরামত করে আরেক ঠিকাদার বিল নিয়েছেন ৭৩ লাখ টাকা।

অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিম রেলের এমন দুই শতাধিক গায়েবি খাতে ৭০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিভিন্ন স্টেশন রং করা, লাইন সংস্কার, রেলসেতু রং করা, টয়লেট মেরামত, ছাউনি-প্ল্যাটফর্মের টিন বদল, স্টেশন প্রাঙ্গণ সংস্কার, ওভারব্রিজ সংস্কার, মাটি ভরাট, জেটি সংস্কার, হাঁটাপথ সংস্কার, দরজা মেরামত, শীত ও গরমের পোশাক ক্রয়, স্যানিটারি উপকরণ ও ভিম পাউডার ক্রয়, বন্যার সময় ইট-খোলা কেনা, সেতু মেরামত, বাউন্ডারি ওয়াল মেরামতের ছোট কাজে বিপুল অর্থ ব্যয় দেখানো হয়েছে। রাজশাহী রেলভবনে এসএসএই দফতরের বারান্দার টিন পরিবর্তন ও একটি টয়লেট সংস্কার কাজে ৭২ লাখ ৩১ হাজার ৫০২ টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ রাজশাহীতে রেলের এ দফতরটি একটি ছোট্ট টিনশেড অফিস। ২০১৭ সালের ৭ জুলাই এই কার্যাদেশ পায় ‘মোমিন ট্রেডার্স’। বিধিবদ্ধ দরপত্র ছাড়াই তৃতীয় শ্রেণির ওই প্রতিষ্ঠান লোকাল টেন্ডার মেথডে (এলটিএম) প্রতিযোগিতা ছাড়াই কাজটি পায়। একই বছরের ১ অক্টোবর ঠিকাদারকে পুরো বিল পরিশোধ করা হয়।

এদিকে পশ্চিম রেলের প্রধান টেলিযোগাযোগ ও সংকেত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের টয়লেট মেরামতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ টাকা। এ কাজটি করেছে তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার ‘তোফা কন্সট্রাকশন। রাজশাহীতে রেল অফিসার্স মেসের একটি কক্ষের (ইসি-৪) মেরামত ও মেসের ভেতরের হাঁটাপথ সংস্কারে ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮৯ লাখ ৪৮ হাজার ৭৮০ টাকা। ‘সরকার অ্যান্ড ব্রাদার্স’ কাজটি করেছে। রাজশাহীর ভদ্রা ব্যারাকের পুকুরপাড় উন্নয়ন ও ওয়াশপিট (ট্রেন ধোয়ার শেড) সম্প্রসারণে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার টাকা। ‘আশরাফুল কবির’ নামের প্রতিষ্ঠান কাজটি করেন। তবে সরেজমিনে পুকুরপাড় উন্নয়নের কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন কয়েক বছর আগে রি-মডেলিং হলেও জরুরি উল্লেখ করে স্টেশনের বুকিং কাউন্টার, প্রতীক্ষালয় ও কার পার্কিং এরিয়া মেরামতে ঠিকাদার ‘আনোয়ারুল ইসলাম বাবু’ ৫৭ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৪ টাকা বিল পেয়েছেন। অন্যদিকে উল্লাপাড়া স্টেশনের ইয়ার্ডে বালু ভরাট দেখিয়ে ‘মোল্লাহ কন্সট্রাকশন’কে ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৯ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জের রায়পুর স্টেশনে মালামাল ওঠানামার সুবিধা সম্প্রসারণে ঠিকাদার ‘আরটিসি’ ৯৭ লাখ ১৮ হাজার টাকা বিল পেয়েছে। রেলের সাবেক ডিজি আমজাদ হোসেনের শ্যালক পরিচয়দানকারী বদরুল আলম নাটোর, মাধনগর, আত্রাই ও সান্তাহার স্টেশনে রেললাইনের প্লাস্টিকের ওয়াসার সরবরাহ কাজে ৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার টাকার ৫টি প্যাকেজের কাজ পেয়েছেন টেন্ডার ছাড়াই। বদরুল গত আড়াই বছরে এভাবে বিনা টেন্ডারে প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন। কাজ শুরুর আগেই বদরুল বিলও পেয়েছেন বলে রেলওয়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে বদরুল আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে রেলের সাবেক ডিজি আমজাদ হোসেন বলেন, বদরুল তার শ্যালক নয়; এলাকায় বাড়ি। তার প্রভাব খাঁটিয়ে কাজ নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।

একই সময়ে টেন্ডার ছাড়াই ঢাকার ‘আরটিসি’ বিভিন্ন রেললাইন সংস্কারের ১৯টি কাজ পায়। এসব কাজ বাবদ তিনি প্রায় ২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বিল পান। কোথায় কীভাবে কাজ হয়েছে? বিল-ভাউচারের নথিতে কোনো বিবরণ নেই। ২০১৮ সালের ১৮ মার্চে ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশন প্ল্যাটফর্মের ২০০ ফুট সিআই সিট পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ঠিকাদারকে ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকার বিল দেয়া হয়। ফরমাল টেন্ডার ছাড়াই উল্লাপাড়া স্টেশনের ৩০০ ফুট সিআই সিট পরিবর্তনের জন্য ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে।

২০১৭ সালের ৩ জুন দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেনের জন্য বেনাপোল স্টেশনে একটি টিনের শেড নির্মাণে ৮০ লাখ ৯০ হাজার ব্যয় দেখানো হয়। একই স্টেশনের ফুটওভার ব্রিজ সংস্কার ও রং বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৬৩ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৭ সালের বন্যায় কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, পার্বতীপুর, কুমারখালী ও মোবারকগঞ্জে জরুরি সেতু প্রটেকশন খাতে ৭১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়। ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের প্লাটফর্ম সম্প্রসারণে ৬০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়। রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের শীতের পোশাক খাতে ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হলেও গরমের পোশাক খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন স্টেশন পরিষ্কার করতে ভিম পাউডার কেনার ব্যয় দেখানো হয়েছে ৯৫ লাখ টাকা।

এসব বিষয়ে দুদকের রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক মোর্শেদ আলম বলেন, রেলে দুর্নীতির পরিসর বিস্তৃত ও মাত্রা ভয়াবহ। সীমিত জনবলে এসব অনুসন্ধানে অনেক সময়ের প্রয়োজন। অনুসন্ধান চলছে। সময় হলে সব জানতে পারবেন।

জানা যায়, সাবেক প্রধান প্রকৌশলীমোঃ রমজান আলীর পুরো মেয়াদে এ ধরনের কাজ ও বিল পরিশোধ করা হয়েছে। রমজান আলী বর্তমানে মোংলা রেল প্রকল্পের পরিচালক। মোংলা রেল প্রকল্পের পরিচালক রমজান আলীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা রয়েছে । তিনি একজন নারী লেভী এমনটাই জানিয়েছেন তার তৃতীয় স্ত্রী । প্রকৌশলী রমজান আলীর বিরুদ্ধে করা তার স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় । মামলাটি বর্তমানে বিচারের জন্য রাজশাহীর মহানগর বিচারিক আদালত-৪ এ বিচারাধীন রয়েছে।

শোভা খাতুন বলেন, লম্পট রমজান আলী আমার সাথে বিয়ের সময় রমজান আলী তার পরিবারকে জানিয়েছিলেন তার প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন। কিন্তু বিয়ের পর জানতে পারি তার প্রথম স্ত্রী বেঁচে আছেন। কয়েকটি সন্তানও আছে। প্রথম স্ত্রীকে রেখে তার সঙ্গে বিয়ের আগে রমজান আলী আরও একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই হিসেবে তার সঙ্গে তৃতীয় বিয়ে করেন তিনি।
শোভা আরও জানান, পশ্চিম রেলের এক নারী কর্মচারীকে যৌন হেনস্তার দায়ে রমজান আলী রেল কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন একাধিকবার । তবে এসব তথ্য তিনি বিয়ের পর জানতে পারেন।

রমজান আলী বিনা টেন্ডারের কাজে বিপুল অর্থ লোপাটের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তাকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে, পরে নিজেই কথা বলতে চান। কিন্তু তিনি পরে আর ফোন করেননি। অন্যদিকে টয়লেট মেরামতের বিল প্রদানকারী সাবেক সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী ও বর্তমানে সৈয়দপুর সহকারী প্রকৌশলী (সেতু) মনিরুজ্জামান ব্যস্ততার অজুহাতে পরে কথা বলতে চান। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে রাজশাহী রেলভবনের সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী (এসএসইএ) বাবুল আকতার বলেন, বিষয়টি আগের কর্মকর্তার আমলের। এ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। সাবেক প্রধান সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রকৌশলী অসীম কুমার তালুকদার বর্তমানে পাকশীর বিভাগীয় ম্যানেজার। তিনিও এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চান না। পশ্চিম রেলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মিহির কান্তি গুহ বলেন, কিছুদিন আগে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা কয়েকবার এসে চাহিদা মতো নথিপত্র নিয়েছেন। তাই দুর্নীতি সম্পর্কে কিছু বলতে পারছেন না।

https://channelkhulna.tv/

সংবাদ প্রতিদিন আরও সংবাদ

ঢাকা মেডিকেল থেকে ‘ভুয়া নারী চিকিৎসক’ আটক

সাবেক আইজিপি ও কেএমপি কমিশনারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আদালত চত্বরে সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্রের ওপর ডিম নিক্ষেপ

আমির হোসেন আমু গ্রেপ্তার

কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের ঢুকতে দেওয়া হবে না তাবলিগ জামাত

কালীগঞ্জে ভারতীয় গরু আনতে গিয়ে যুবক আটক

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।