ইমদাদুল হক:: খুলনার পাইকগাছায় আমন ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকা আক্রমণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বারবার কিটনাশক ব্যবহার করেও কোন কাজ না হওয়ায় কৃষকরা হতাশ। একদিকে কারেন্ট পোকা আক্রমণ তারউপর সম্প্রতি ঘূর্ণীঝড় মিধিলীর ঝড়ো বাতাসে ধান মাটিতে নুয়ে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক কৃষকের আবাদ করার খরচ উঠবে না। হঠাৎ কারেন্ট পোকা আক্রমণে ভালো ফসল ঝলসে ছারখার হয়ে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ ধানগাছের মধ্যে লাল বা পোড়া বাদামি রঙের গাছ রয়েছে। পোকা দমনে কৃষকরা কীটনাশক স্প্রে করছে। তবে তেমন কোন কাজ হচ্ছে না। পোকাটির নাম বাদামি গাছ ফড়িং। তবে কৃষকরা ধানের কারেন্ট পোকা বলায় নামটির ব্যাপক পরিচিতি ঘটেছে। বিদ্যুতে স্পর্শ করলেই সর্বনাশ, এমন ধারণা থেকে পোকাটির নাম হয়েছে কারেন্ট পোকা। দেখতে প্রায় উকুনের মতো। ধানগাছের নিচের অংশে অবস্থান করে প্রথমে রস চুষে খায়। পরে ধানগাছ লাল বা পোড়া বাদামি রঙের হয়ে যায়। দেখলে মনে হবে আগুনে ঝলসে গেছে। অবশেষে আক্রান্ত ধানগাছ মারা যায়।
উপজেলা কৃৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৭ হাজার ৪শ ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে পাঁচ হেক্টর জমির ধান গাছে কারেন্ট পোকা আক্রমণের শিকার হয়েছে।
উপজেলার সোলাদানা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, চার বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। বর্তমানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধানের সর্বনাশ হয়েছে। ফলন ভালো হলেও পোকার আক্রমণের কারণে ২০ মণের জায়গায় ৫ থেকে ১০ মণ মত ধান হতে পারে। পোকা আক্রমণের শিকার বিভিন্ন এলাকার কৃষক জানান, কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে ধান বাঁচাতে কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। তবে যে গাছে পোকা আক্রমণ করেছে, সেগুলো বাঁচানো যাচ্ছে না। যে কারণে এবার ধানের উৎপাদন কম হবে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক লিফলেট ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও কেনো কাজ হচ্ছে না। আবাদ করার খরচ উঠছে না। ক্ষতিগ্রস্তদর সরকারি প্রণোদনার আওতায় আনার
দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার অসিম কুমার দাশ বলেন, কৃষকরা না শুনে না বুঝে গাছের উপরের অংশে স্প্রে করছেন। অথচ এই পোকা গাছের নিচের অংশে অবস্থান করে। আক্রান্ত ধানগাছের নিচের অংশে বিলি করে কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হলেও তারা তা করছেন না। পাশাপাশি ক্ষেতে একজন কৃষক কীটনাশক স্প্রে করছে কিন্তু অন্য জন একই সময় স্প্রে না করায় পোকা ঠিকমত দমন হয়নি।
কারেন্ট পোকা থেকে ধানগাছ বাঁচাতে ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠাক, ক্ষেতে আক্রান্ত পোকার ভিডিও প্রদর্শন করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যাদের ৮০ শতাংশ ধান পেকে গেছে তাদের ধান দ্রুত কেটে ফেলতে বলা হয়েছে। আমন আবাদে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে বোরোতে প্রণোদনার আওতায় অস্তর্ভুক্ত করণের প্রক্রিয়া চলছে।