ইমদাদুল হক:: প্রচণ্ড তাপদাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন। জ্যৈষ্ঠ মাসের তীব্র গরমে তাল শাঁসের চাহিদা বেড়েছে।তাল শাস দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন।তবে বিগত বছরের তুলনায় তালের দাম বেশী। প্রতিদিন পাইকগাছার গ্রামের হাট বাজারে প্রচুর পরিমাণে তাল বিক্রি হচ্ছে। গ্রাম অঞ্চল থেকে তাল জেলা শহর ও রাজধানী ঢাকা শহরে সরবরাহ হচ্ছে। পাইকগাছা থেকে প্রতি সপ্তাহে ২/৩ ট্রাক তাল ঢাকা শহরে সরবরাহ হচ্ছে। এলাকার ব্যবসায়ীরা ঢাকা কারওয়ান বাজারে পাইকারী বিক্রয় করছে।
তালের শাঁস পানি শূন্যতা দূর করে। দেহকে রাখে ক্লান্তিহীন। খাবারে রুচি বাড়িয়ে দেয়। তাল শাঁসে থাকা উপকারী উপাদান লিভার সমস্যা ও রক্ত শূন্যতা দূরিকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টি শক্তি উন্নতি করে। তাল শাঁস বমিভাব আর বিস্বাদ দূর করতে ভূমিকা রাখে। তাল শাঁস জেলীর মত হওয়ায় খেতে খুব মুখোরোচক এবং শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। পাঁকা তালের মজা বের করে রান্না করে খাওয়া যায়। তালের বড়া , হালুয়া সহ নানা ধরনর খাবার তৈরী করা যায়। তাছাড়া তালের আটি কেঁটে আটির ভীতর থেকে সাদা রঙ্গের শাঁস বের করে খাওয়া যায়। যা খেতে খুব সুস্বাধু।
এ বছর পাইকগাছা অঞ্চলে তালের ফলন ভালো হয়নি। বৈরি আবহাওয়া আর অনাবৃস্টির কারণে ফলন কম হয়েছে। ছোট-বড় কাঁদি হিসাবে ১০/৪০ টি পর্যন্ত তাল একটি কাঁদিতে ধরেছে। এ এলাকায় দুই রকম তালের জাত দেখা যায়। একটি কালছে রঙ্গের আর একটি ধুষর হলদে বর্ণের। স্থানীয় বাজারে এক একটি তাল তিন থেকে পাচ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একটি তালে দুই থেকে চারটে আটি হয়। প্রতিটি আটির ভিতরে শাঁস। তাল ছোট-বড় হিসাবে বিভিন্ন দামে বিক্রয় হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাল গাছের মালিকের কাছ থেকে গাছ চুক্তি ৪শত থেকে ১২শত টাকায় তাল ক্রয় করছে। উপজেলার সিলেমানপুর গ্রামের তাল ব্যাবসায়ী মুজিবুর রহমান জানান, প্রতিদিন তিনি ফেরি করে ২ থেকে ৩ হাজার টাকার তাল বিক্রি করেন।একটি তাল ১০ টাকায় বিক্রি করছেন। ভ্যানে করে স্থানীয় বাজার সহ পাইকগাছা বাজারে তাল বিক্রি করেন। গরম বেশী থাকায় প্রচুর পরিমাণে তাল বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন গাজী ও ইনছার আলী বলেন, হাট বাজারে খুচরা বিক্রয়সহ জেলা ও ঢাকা শহরে তাল সরবরাহ করছে। বড় সাইজের তাল গুলো অধিক দামে বিক্রয়ের জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ ট্রাক তাল ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী আব্দুর সাত্তার জানান, বড় গাছের পরিমাণ কমে গেছে। তাছাড়া এ বছর অনাবৃস্টির কারণে তালের ফলন কম হয়েছে।
তাল গাছের সব কিছু মানুষের উপকারে আসে। তাল কাছের গুড়ি থেকে ঘরের কড়ে ও বর্গা তৈরী হয়। তালের পাতা ঘরের ছাউনী ও জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। তা ছাড়া তাল গাছ প্রাকৃতিক ঝড় প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। তাল গাছ ক্ষেতের আইলে, বাগান ও অনাবাদী জায়গায় অবহেলা ও অনাদরে বেড়ে ওঠে। তাল গাছ মানুষের এতো উপকারে আসার পরও প্রতি বছর এলাকা থেকে শত শত তাল গাছ কেঁটে ফেলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ অসিম কুমরি দাশ জানান, প্রতি বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তালের আটি রোপন করা হচ্ছে। তাল গাছ মানুষের উপকারী বন্ধু। তাল গাছ প্রাকৃতিক ঝড় ও ভূমি ক্ষয়ে রোধ করে। তাই কৃষক ও এলাকাবাসীকে তাল গাছ না কেঁটে আরো গাছ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।