ইমদাদুল হক:: পাইকগাছায় চলতি মৌসুমে ফুলে ফুলে ভরে গেছে সজিনা গাছ। সজিনা লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে এর ভালো ফলন হয়। বর্তমানে অত্র উপজেলায় ১৬ হেক্টর জমিতে আড়াই হাজার সজিনা গাছ রয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন সজিনা চাষীরা। সজিনা একটি লাভজনক পুষ্টি ও ঔষধী গুণ সমৃদ্ধ অর্থকরী সবজি। উপকূলীয় অঞ্চলের জনপ্রিয় সবজির মধ্যে সজিনা অন্যতম। বাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সজিনা একটি অতি পরিচিত এবং সুস্বাদু সবজি। সজিনার উৎপত্তির স্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ হলেও এ গাছ শীত প্রধান দেশ ব্যতীত সারা পৃথিবীতেই জন্মে। আমাদের দেশে ২/৩ প্রকার সজিনা পাওয়া যায়। বসতবাড়ীর জন্য সজিনা একটি আদর্শ সবজি গাছ।
বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইড’ আখ্যায়িত করেছেন। সজিনা গাছে পুষ্টি ও ঔষধী গুণাগুণ রয়েছে। বাড়ীর আঙ্গিনার এটি একটি মাল্টি ভিটামিন বৃক্ষ। এর পুষ্টিগুণ খাদ্যোপযোগী প্রতি ১শ গ্রামে খাদ্য শক্তি ক্যাল ৪৩, পানি ৮৫.২ গ্রাম, আমিষ ২.৯ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা ৫.১ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৪.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মি. গ্রাম, আয়রন ০.২ মি. গ্রাম, জিংক ০.১৬ মি. গ্রাম, ভিটা-এ ২৬ মি. গ্রাম, ভিটা বি১- ০.০৪ মি. গ্রাম, ভিটা বি২- ০.০৪ মি. গ্রাম, ভিটা সি ৬৯.৯ মি. গ্রাম। বিজ্ঞানীদের মতে সজিনার পাতা হচ্ছে পুষ্টিগুণের আঁধার। নিরামিষভোগীরা সজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ ভিটামিন সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ, কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। এছাড়াও সজিনার পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫% ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনেসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ, এবং ২২% ভিটামিন সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপদান রয়েছে।
ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র মতে সজিনা গাছ ৩শ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষ করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার কটি পড সবজি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। সজিনার বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধী গুণাগুন রয়েছে। শরীর ব্যথা, কান ব্যথা, মাথা ব্যথা, ফোড়া, মূত্রপাথরি ও হাপানি, গ্যাস থেকে রক্ষা, কুকুরের কামড়, জ্বর ও সর্দি, বহুমূত্র রোগ, কোষ্ঠকাঠিনা ও দৃষ্টিশক্তি, গেঁটে বাত, কামশক্তিবৃদ্ধি, ক্রিমিনাশক ও টিটেনাস, অবশতা, সায়াটিকা,রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি, হৃদরোগের চিকিৎসা, পোকার কামড়, ক্ষতস্থান নিরাময়, রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, প্রোস্টেট সংক্রমন, শ্বাসকষ্ট, মাথা ধরা, মাইগ্রেন, আর্থাইটিস এবং চুলপড়া রোগের চিকিৎসায় সজিনা কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সজিনা খাবার টেবিলে সবজি হিসেবেই বেশি ব্যবহার হয়। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সজিনা বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়। এ সময় খরিপ সবজির মধ্যে সজিনার যথেষ্ট কদর থাকে। আগাম সজিনা বাজারে নিতে পারলে আর্থিকভাবে প্রচুর লাভবান হওয়া যায়। ডাল দিয়ে সজিনার তরকারি সবচেয়ে জনপ্রিয়। সজিনা শুধু ফল হিসেবে নয় এর কচি পাতা ও ডাটা বা ডাল ভাজি বা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। পালং শাকের বিকল্প হিসেবে সজিনা শাক খাওয়া হয়। মুরগির মাংস রান্নায় কচি সজিনা পাতা সুস্বাদু লাগে। কালিজিরা, কাচামরিচ, রসুনের সাথে সজিনা পাতার ভর্তা একটি মজাদার খাবার। ছোট মাছের সাথে সজিনা পাতার চর্চড়ি খুবই মজাদার। সজিনা পাতার বড়া, সালাদ, পাতা বাটা ও সজিনা পাতার পাউডার দ্বারা খাদ্য সুস্বাদু ও শক্তি বর্ধক হয়। যে কোনো স্যুপের সাথে শুকনা সজিনা পাতার পাউডার মিশালে খাদ্যমান বেড়ে যায়। চা বা কফি তৈরিতে সজিনা পাতার পাউডার ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়াও সজিনার অনেক রেসিপি রয়েছে।
এদিকে প্রতিবছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেই উপকূলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় সজিনার বাম্পার ফলনের আশা করছেন সজিনা চাষীরা। বর্তমানে ক্ষেতের আইল, বাড়ির আঙ্গিনা, লীজ ঘেরের বাঁধ কিংবা রাস্তার পাশে লাগানো প্রতিটি সজিনা গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। মৌ-মাছিরা সজিনার ফুল থেকে মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছে। গড়ইখালী ইউনিয়ন হোগলারচক গ্রামের স্বপন মন্ডল বলেন, আবহাওয়া গত কারণে কোন সমস্যা না হলে আশা করছি এ বছর সজিনার বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসীম কুমার দাস বলেন, সজিনা একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি। লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় সজিনার ভালো ফলন হয়। বর্তমানে অত্র উপজেলায় ১৬ হেক্টর জমিতে আড়াই হাজার সজিনার গাছ রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সজিনা চাষীদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে তাদেরকে সার্বিক পরামর্শ এবং সহযোগিতা করা হয়। সজিনা স্বল্প মেয়াদী একটি সবজি। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় সজিনা চাষ অনেক লাভ জনক। প্রতিবছর সজিনা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর অত্র এলাকায় সজিনার ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।