মন্দ দশা কাটেনি সরকারি পাটকলে। লোকসান। লোকসান। আর লোকসান গুণে চলেছে। চিরদিনের জন্য লাভের মুখ দেখা বন্ধ হচ্ছে। এবার চূড়ান্ত সর্বনাশের অপেক্ষায় শ্রমিকরা। দেশে সরকারি পাটকল ২৬টি। সাত বছরে এসব মিল সরকারের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খেয়ে ফেলেছে। ১০ বছরে সরকারের বিনিয়োগ ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। তিন বছরের হিসাব পাওয়া যায়নি। গচ্চার বিবরণঃ ২০১১-১২ অর্থবছরে বিজেএমসির লোকসান ৭৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৯৬ কোটি ৯৭ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫১৩ কোটি ৮ লাখ, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৭২৯ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৬৬৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৮১ কোটি ৫০ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪৯৭ কোটি ১৮ লাখ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫৭৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয়েছে। এ কারণে জুট মিল এখন বোঝা। শ্রমিকরা ভারি বোঝা। আর টানা সম্ভব হচ্ছে না। এবার বিদায় দেয়ার পালা। গোল্ডেন হ্যান্ডশেক। স্থায়ী শ্রমিকদের জন্য। তাদের সংখ্যা ২৫ হাজার। বদলী ও হাজিরা ভিত্তিক আছে ২৬ হাজার। স্থির হয়নি তাদের ভাগ্য। শ্রমিক না থাকলে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে মিল। সরকার বন্ধ রাখতে চায় না। সিদ্ধান্ত বদলে বেসরকারি খাতে ছাড়তে চায়। সরকার আর দায় নিতে রাজি নয়। একটু পেছনে ফেরা যাক। বিএনপি ক্ষমতায় এসে সরকারি পাটকল বন্ধ করে দেয়। বিরাষ্ট্রীয়করণ করে কয়েকটি। লীজও দেয়া হয় পাবলিকের কাছে। তখন শ্রমিকরা রাস্তায় নামে। আওয়ামী লীগ তাদের সাথে যোগ দেয়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি আসে মিল চালুর। প্রধানমন্ত্রী নিজে খুলনায় এ ঘোষণা দেন। ক্ষমতায় এসে রক্ষাও করেন। লীজ বাতিল করে মিল চালু হয়। এখন আসল চিত্র ধরা পড়েছে আওয়ামী লীগের চোখে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা এবার বিএনপি পথে হাঁটছে! মিল বন্ধ করতে চায় আওয়ামী লীগ। এটি হলে দেখা যাবে বিএনপি শ্রমিকদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেবে। এই হলো আমাদের দেশের রাজনীতি। বাস্তবতা আসলে কী? সরকারি মিলে লোকসান। বেসরকারি মিলে লাভ। দাম চূড়ায় না উঠলে সরকারি মিলে পাট কেনা হয় না। যন্ত্রপাতি সেকেলে। প্রয়োজনের চেয়ে শ্রমিক-কর্মচারি অনেক বেশি। বেসরকারি মিলে পাট কেনা হয় কম দামে। উৎপাদন হয় আধুনিক মেশিনে। শ্রমিক কর্মচারি হিসেবের বাইরে নেয়া হয় না। সরকার এসব জানে। তারপরও মূল জায়গায় হাত দেয় না। মাথাব্যথার জন্য মাথা কাটার মতো অবস্থা। অথচ লাভে ফেরানো সম্ভব এসব পাটকল। বেসরকারি আদলে চালালে ফিরবে সম্ভাবনা। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
লেখক : আতিয়ার পারভেজ
গণমাধ্যমকর্মী ও সমসাময়িক বিশ্লেসক