পিরোজপুর প্রতিনিধি :: পিরোজপুরের কাউখালীতে এ বছর আমড়ার বেশ বাম্পার ফলন হয়েছে। পুষ্টিকর ফল আমড়ার চাহিদা দিন দিনই বাড়ছে। মৌসুমে বাজার ছাড়াও পথে পথে প্রচুর বিক্রি হয় এই আমড়া। এটি একটি অর্থকরী ফল হিসেবেও নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ফলে বেড়ে গেছে আমড়ার চাষ ও উৎপাদন। উপজেলায় চলতি মৌসুমে গত তিন বছরের তুলনায় আমড়ার ফলন ভালো। কিন্তু আমড়া চাষিদের মুখে সেই হাসির রেখাটি নেই। কারণ আমড়ার দাম তুলনামূলকভাবে কম।
বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় এর ফলন বেশি বিধায় বরিশালের আমড়া বলেই পরিচিতি বেশি। বরিশাল বিভাগের পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলাসহ স্বরূপকাঠী ও নাজিরপুরে আমড়া আবাদ হয় বেশি। ওই এলাকায় এমন কোনো বাড়ি পাওয়া যাবে না যে বাড়িতে কম করে হলেও একটি আমড়া গাছ নেই। রাস্তার পাশে বাড়ির উঠানে একটি আমড়া গাছ লাগানো যেন প্রতিটি মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ পতিত জমি কেটে আইল তৈরি করে, আবার কেউ কেউ ফসলি জমিতে আমড়ার বড় বড় বাগান সৃষ্টি করেছেন। কোনো কোনো চাষির বাগান থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় হয়।
শ্রাবণ ভাদ্র মাসে পরিপক্ব আমড়া পাওয়া যায়। গ্রামের বেশির ভাগ এলাকায় আমড়া কেনা-বেচার বেপারী রয়েছে। তারা ফাল্গুন চৈত্র মাসে কুড়ি দেখেই আগাম টাকা দিয়ে বাগান কিনে ফেলেন। আবার অনেক চাষি ভরা মৌসুমে নিজেরাই বাজারে আমড়া বিক্রি করেন। আষাঢ় মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত গাছ থেকে আমড়া পেড়ে বাজারে নিয়ে বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হয়।
কাউখালী উপজেলার প্রধান বন্দর লঞ্চঘাট, দক্ষিণ বাজার, পাঙ্গাশিয়াসহ বিভিন্ন বড় বাজারে রয়েছে আমড়ার আড়ৎ। ওইসব আড়তে বেপারীদের কাছ থেকে আমড়া কিনে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মেঘনাঘাট এলাকায় চালান করা হয়। সেখানে আড়তদাররা বিভিন্ন মোকামের খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারদের কাছে আমড়া বিক্রি করে।
পিরোজপুরে বিভিন্ন উপজেলায় বেপারীরা মাসে গৃহস্থদের অগ্রিম টাকা দিয়ে আমড়া গাছ কেনার পর শ্রাবণ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে গাছ থেকে আমড়া সংগ্রহ করেন। পরে বস্তায় ভরে আমড়া কেনাবেচার সবচেয়ে বড় মোকাম কাউখালীতে বিক্রি করেন। সেখান থেকে লঞ্চে ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আমড়ার চালান পাঠিয়ে দেয়া হয়। পিরোজপুর জেলার আমড়া আকারে বড় এবং সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এর চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক।
উপজেলার পারসাতুরিয়া গ্রামের আমড়া চাষি আব্দুল জলিল হাওলাদার জানান, মধ্যস্বত্ব ভোগীদের অধিক মুনাফার কারণে আমড়া উৎ্পাদনকারী গৃহস্থরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেও আমড়া বেচাকেনার মুনাফার পুরোটা ঢোকে না চাষিদের পকেটে। সে কারণেই আমড়া চাষিরা বাম্পার ফলনে খুশি হয়েও যেন খুশি নন। কাউখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী আজিম শরীফ বলেন, ‘গত দুই বছরের তুলনায় এবছর আমড়ার ফলন শতকরা ১০-১৫ ভাগ বেশি হওয়ায় দামও কিছুটা কম।’