প্রকল্প প্রস্তাবেই ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির পাঁয়তারা চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এক্ষেত্রে একেকটি পালস অক্সিমিটারের (শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা নিরূপণ যন্ত্র) দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যার বাজার মূল্য ১৫শ টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়া প্রতিটি ফেসমাস্কের দাম ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৬০০ টাকা, যার বাজার দর ৫ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধরা হয়েছে অস্বাভাবিক দাম।
‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে এমন আকাশছোঁয়া দাম প্রস্তাব করা হয়। যেটি ‘পুকুরচুরির’ পাঁয়তারা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এসব বিষয়ে আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন। সর্বশেষ কিছু দাম কমিয়ে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত ৫ জানুয়ারি উপস্থাপন করা হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বাস্তবায়নের ধীরগতি দেখে ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী ও একনেকে চেয়ারপারসন। অনুমোদন না দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রকল্পটির ‘গোড়ায় গলদ’ ছিল। কোনো প্রকার সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই এটি গ্রহণ করা হয়। ফলে তিন বছরের প্রকল্পে যাচ্ছে ১১ বছর।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে উল্লিখিত সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদ্য সাবেক হওয়া সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
তবে এটুকু বলতে পারি, এ প্রকল্পে ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। সংশোধনীর প্রস্তাব পাওয়ার পর চূড়ান্ত বিচারে অনেক ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) এ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সভাপতিত্বে বৈঠক করেছি। বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিবকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব সদস্য হিসেবে থাকবেন। সেই সঙ্গে আর কাদের সদস্য করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আইএমইডি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ তদন্ত কমিটি পণ্যের অতিরিক্ত দামসহ সবকিছু বিষয়েই খতিয়ে দেখবে। এক্ষেত্রে শুধু কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই নয়, স্বাস্থ্যের এ ধরনের সব প্রকল্পই খতিয়ে দেখা হবে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অবশ্যই দুুর্নীতির সুযোগ হিসেবে এ ধরনের প্রস্তাব করা হয়েছে। যারা প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত তারা নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে এ ধরনের কাজ করছেন।
যেহেতু মনিটরিং ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল এবং অতীতে এ ধরনের অপরাধে কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই বারবার একই ঘটনা ঘটছে।
সূত্র জানায়, মূল প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে হাতে নেয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ৬ মার্চ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া প্রথম দফায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
পরে ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৬১১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত (তিন বছর বৃদ্ধি) বৃদ্ধি করে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন করা হয়।
এর মধ্যে বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন দ্বিতীয় সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়িয়ে ৭৪২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে।
গত বছরের ১২ মার্চ প্রথম পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপিতে প্রথম পিইসি সভার সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে পালন না করায় গত বছরের ২৬ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর দ্বিতীয় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অবশেষে ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৫৫ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম। অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, মূল প্রকল্পে না থাকলেও প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে দুটি পালস অক্সিমিটার (এফডিএ অনুমোদিত) কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ টাকা। প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ১ লাখ টাকা করে।
এখন দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে একেকটি অক্সিমিটারের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে ধরে দুটির জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয় ৫ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পায় ৩ লাখ টাকা।
এ সূত্র ধরে অনলাইন মার্কেট প্লেস আলিবাবাতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চায়নার তৈরি একেকটি অক্সিমিটার পাওয়া যাচ্ছে ২ থেকে ১৬ ডলারের মধ্যে। এ হিসাবে স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় ১৭০ থেকে ১ হাজার ৩৬০ টাকা।
এছাড়া অপর মার্কেট প্লেস দারাজে ১ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে অক্সিমিটার পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৭ শতাংশ ট্যাক্স, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং সরবরাহকারীর লাভ যোগ করলেও কখনই সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া মূল অনুমোদিত প্রকল্পে অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের জন্য ১১টি পালস অক্সিমিটারের দাম ধরা হয়েছিল প্রতিটি ৮৩ হাজার ১৬০ টাকা। এ হিসাবে মোট বরাদ্দ ধরা হয় ৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৬০ টাকা।
প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে ১১টির জন্য একেকটির দাম ধরা হয় ৮৫ হাজার টাকা করে মোট ৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ওই ১১টির জন্য প্রতিটির দামের প্রস্তাব করা হয় ২ লাখ ২১ হাজার টাকা করে মোট ২৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
এক্ষেত্রে প্রথম সংশোধনীর তুলনায় বৃদ্ধি পায় ১৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এর বাইরে মূল অনুমোদিত প্রকল্পে না থাকলেও ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) আরেক স্থানে প্রথম সংশোধনীতে দুটি অক্সিমিটারের দাম ধরা হয় ১০ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ১০টি অক্সিমিটারের জন্য প্রস্তাব করা হয় ৯ লাখ টাকা।
এছাড়া অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের জন্য মূল প্রকল্পে ৪০টি ফেসমাস্কের (১-৫ আকারের) দাম ধরা হয়েছিল প্রতিটি ১ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীতে এসে ব্যয় কমিয়ে ৪০টি মাস্কের জন্য ধরা হয় প্রতিটির জন্য ৬ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
এখন দ্বিতীয় সংশোধনীতে এতে ধরা হয় ৪০টির জন্য প্রতিটি ১৫ হাজার ৬০০ টাকা করে ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। কিন্তু বাজারে ৫ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে রাজস্ব খাতে আরও কিছু ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে- প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে রেজিস্ট্রেশন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ টাকা। সেটি বাড়িয়ে দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। মুদ্রণ ও বাঁধাই অঙ্গে ৩ লাখ টাকার স্থলে ধরা হয় ১৫ লাখ টাকা।
স্টেশনারি অঙ্গে ৬ লাখ টাকা স্থলে ধরা হয় ১২ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ভ্রমণ অঙ্গে ৮ লাখ টাকার স্থলে ২০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রকল্প প্রস্তাবটির ওপর গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব খাতে অস্বাভাবিক অর্থ সংস্থান বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তাই এসব অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য মনিহারি ক্রয় বাবদ ৪০ লাখ টাকার প্রস্তাব বাদ দিতে হবে। এছাড়া প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে ৪০ লাখ টাকা, সাধারণ সরবরাহ খাতে ১৪ লাখ টাকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাতে ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার বরাদ্দ যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী সার্কুলার জারি করলেই আগামী সপ্তাহে এ প্রকল্পটির তদন্ত শুরু হবে। এক্ষেত্রে শুধু যে বাস্তবায়ন বিলম্বের দিকটি দেখা হবে তা নয়।
এর সঙ্গে মূল প্রকল্পে বিভিন্ন অঙ্গে বরাদ্দ, এখন পর্যন্ত ব্যয় এবং কোন কোন খাতে বাজার দরের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে সেগুলো সবই তদন্তে আসবে। পাশাপাশি কে কখন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কেনাকাটায় কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেসবও খতিয়ে দেখা হবে।
গত ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত পিইসি সভার কার্যবিবরণীটি চলে এসেছে যুগান্তরের হাতে। সেটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২৫ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ের প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা যাচাই আবশ্যক। কিন্তু এ প্রকল্পটিতে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ফলে ঘন ঘন মেয়াদ বাড়িয়ে সংশোধন করা হচ্ছে।
এছাড়া পিইসি সভায় আইএমইডির প্রতিনিধি জানান, প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের জন্য নির্ধারিত গাইডলাইন রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক যে, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এ গাইডলাইন অনুসরণ করে না।
আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে মহার্ঘ ভাতার প্রচলন নেই। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার সংস্থান রাখা হয়েছে। এটি বাদ দিতে হবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা অঙ্গে যোগফল ঠিক নেই। সেই সঙ্গে আছে ভুল-ত্রুটিও। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে নতুন অঙ্গ হিসেবে কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠান ব্যয় বাবদ ৩০ লাখ টাকা,
এছাড়া প্রথম সংশোধনীর তুলনায় দ্বিতীয় সংশোধনীতে সাকুল্য মজুরি (সরকারি কর্মচারী ছাড়া) বাবদ যে অর্থ সংস্থান রাখা হয়েছে তা ৮৬ শতাংশ বেশি। আউটসোর্সিং বাবদ যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা ১২৭ শতাংশ বেশি।
এসব ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের সুপারিশ দেওয়া হয়। এদিকে প্রকল্পের আওতায় ফ্লোর টাইলসের সংস্থান থাকা সত্ত্বে¡ও ফ্লোর ম্যাটের সংস্থান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে আসবাবপত্রের তালিকা থেকে ফ্লোর ম্যাট বাদ দিতে হবে।
প্রকল্পের লেকচার ও অডিটোরিয়ামের জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতির জন্য ২ কোটি ৭২ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। আবার যন্ত্রপাতি অংশেও এ ধরনের ব্যয় বাবদ ৮০ লাখ টাকা ধরা হয়। এ অসঙ্গতি দূর করতে বলা হয়েছে। পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্প্রতি অনুমোদিত কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিসট্যান্স প্রকল্পের আওতায় দেশের সবগুলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপনের সংস্থান রয়েছে।
এছাড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০৯ শয্যার ও জেলা হাসপাতালে ১০ শয্যার কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের আওতায় জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের সংস্থান রয়েছে।
এরপরও প্রস্তাবিত প্রকল্পে নতুন করে আইসিইউ সেন্টার স্থাপনে ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনে ১১ কোটি ৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে।
এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এসব অঙ্গ বাদ দিতে হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত মাল্টিপারপাস ভবনের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এটা আশার কথা যে, প্রকল্পটি অনুমোদন পায়নি। তার আগেই এসব ব্যয়ের বিষয় পরিকল্পনা কমিশন ধরতে পেরেছে। এখন সঠিক ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সবকিছু বের করে আনা উচিত।
এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কেননা এগুলো দুর্নীতির উপসর্গ বলা যায়।
পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পরিমাণ ও একক দর প্রাক্কলনের বিষয়টি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে ভালোভাবে পর্যালোচনার জন্য এর আগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে পাঠানো পুনর্গঠিত ডিপিপিতে যন্ত্রপাতির ব্যয় প্রাক্কলনে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে।
বিভিন্ন যন্ত্রের একক দর সংশোধিত ডিপিপির বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। কোনো কোনো পণ্যের একক দর বাজার দরের চেয়ে কয়েকশ গুণ বেশি ধরা হয়েছে। ফলে প্রকল্প প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের স্বচ্ছতার বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক নয়।