ড্রেজিং করা বালু বা পলি মাটি রাখার জায়গার (ডাইক) জটিলতা কেটে যাওয়ায় মোংলা বন্দরের ইনার বারের নৌ চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় এ ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। চারটি কাটার সাকশন ড্রেজারের মাধ্যমে মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ বন্দরের বেসক্রিক এলাকার সেকশন-২ এবং সেকশন- ৪ এ কাজ শুরু হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালে শুরু হয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ কাজ করা হয়। ড্রেজিংয়ের কাটামাটি ফেলার জায়গা না থাকায় ২০২২ সালে ড্রেজিং কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। উক্ত সময়ে সম্পন্নকৃত ড্রেজিং এর ফলে মোংলা বন্দরে ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আনা সম্ভব হয়। কিন্তু প্রায় এক বছর যাবৎ ড্রেজিং বন্ধ থাকায় চ্যানেলের কিছু স্থানে পলি জমার কারনে নিয়মিতভাবে ৮.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এ বন্দরে আসতে পারছিলো না। অবশেষে বন্দর কর্তৃপক্ষের তপরতায় এখন ড্রেজিং মাটি ফেলার জমির ব্যবস্থা হওয়ায় গত সোমবার থেকে পুরনায় ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সমুদ্র বন্দর বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে নিয়মিত ‘নৌ চ্যানেল’ ড্রেজিংয়ের বিকল্প নাই। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ শুরু হওয়া ইনার বারে ড্রেজিংয়ের খননকৃত পলি মাটি রাখার জায়গার অভাব দেখা দিলে মাঝপথে বন্ধ থাকে। তবে আপাতত খননকৃত পলি মাটি রাখার জায়গা নির্ধারণ হওয়ায় শুক্রবার থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই ড্রেজিংয়ের মাটি রাখা হচ্ছে জয়মনি এলাকায়। এবার থেকে ইনার বারের ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহম্মেদ খাঁন বলেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খননকৃত পলি মাটি রাখার জায়গার অভাব দেখা দিলে ইনার বারে ড্রেজিং বন্ধ থাকলেও নৌ চ্যানেল স্বাভাবিক ছিল। জাহাজ চলাচলে সমস্যা হয়নি। তবে নিয়মিত ড্রেজিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা না গেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হবে। এজন্য পুরোনো জায়গা জয়মনিতে মাটি ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুক্রবার থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর আগে এই ড্রেজিং কার্যক্রম শুরুর আগে সার্ভে করে দেখা হয়েছে যে কতটুকু পলি জমেছে। সেই সার্ভে শেষ করে এই ড্রেজিং শুরু করা হয়।
তবে ভবিষ্যতে এই ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এই চ্যানেলে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রাখতে নৌ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, মোংলা বন্দরের পশুর নদের (নৌ চ্যানেল) হাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত এলাকার নাম ‘ইনার বার’। ইনার বারের ২৩ দশমিক চার কিলোমিটার এলাকায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্ধোধন কনরা হয় ২০২১ সালের ১৩ মার্চ। ওই বছরের ১০ এপ্রিল ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৭৯৩ কোটি টাকা।
ড্রেজিং করা বালু বা পলি মাটি ফেলার জন্য মোংলা উপজেলায় ৭০০ একর জমি ও খুলনার দাকোপ উপজেলায় বানিশান্তা এলাকায় ৩০০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার জমিতে বালু ফেলা হয়। কিন্তু পশুর নদের পাশে খুলনার বানিশান্তার তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলা ঠেকাতে আন্দোলন করেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির মুখে সেখানে বালু ও মাটি ফেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজিং বন্ধ ছিল।
এ অবস্থায় মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের শানবান্ধা মৌজায় ২৬২ একর জমিতে বালু ফেলানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ভূমি মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২২ সালের জুন মাসে। এ পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৩৪ শতাংশ। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৯৯২ কোটি টাকায়, যা গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী বলেন, ইনার বারের গভীরতা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিটার। ড্রেজিং করে সাড়ে আট মিটার করার কথা। ড্রেজিং করা স্থানগুলো থেকে যে পরিমাণ পলি অপসারণ করা হয়েছিল, গত প্রায় দুই বছরে তার ৭০ ভাগ পলি আবার জমা হয়েছে। এ অবস্থা ড্রেজিং প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ড্রেজিং কাজ বন্ধ থাকায় এতদিনে পলি পড়ে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ড্রেজারের তেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। বালু ফেলা জায়গা সংকটের বিয়য়ে তিনি বলেন, নতুন করে কোন জায়গা না মেলায় পুরোনো জায়গা জয়মনি এলাকায় আপাতত বালু ফেলা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সেকশন-৪ আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে অন্য একটি বাল্কহেডে তোলা হচ্ছে। পরে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে পুরোদমে ড্রেজিং করা হবে। খননকৃত সেই পলি মাটি রাখা হবে তাদের অধিগ্রহণ করা জয়মনি এলাকায়।