চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকোনো ভাবেই পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। দাম নিয়ন্ত্রইে টিসিবি আরও দু’টি বিক্রি স্পট বড়ালেও বাজারে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুলনার মোকামগুলোতে মারাত্মক পেঁয়াজ সংকট রয়েছে বিধায় দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তবে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ খুলনায় আমদানি হলে দাম নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবসায়ী। এদিকে বাজারে দেশি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। এ সুযোগে বার্মা থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বলে বিক্রি হচ্ছে এমনই অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকেজি বার্মার পেঁয়াজ আড়াইশ’ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। যা নিম্ন ও মধ্য আয়ের ভোক্তাদের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে। এতে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা।
গতকাল নগরীর রেলস্টেশন রোডস্থ কদমতলা বড় বাজার মোকামগুলোতে প্রতিকেজি চায়না পেঁয়াজ (বড়) ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, বার্মা পেঁয়াজ (ছোট) ২০০ থেকে ২১০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ (নতুন) ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে একই ধরনের প্রতিকেজি চায়না পেঁয়াজ (বড়) ১৬০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, বার্মা পেঁয়াজ (ছোট) ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বার্মার পেঁয়াজই দেশি পেঁয়াজ বলে বিক্রি করছেন অধিকাংশ ব্যবসায়ী।
টিসিবি খুলনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম যখন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে তখন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত ২১ নভেম্বর থেকে নগরীর ৫টি স্পটে ট্রাক সেলের মাধ্যমে খোলা বাজারে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিদিন ৫ টন করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ডিলারদের মাধ্যমে। প্রত্যেক ডিলারের জন্য প্রতিদিন এক টন করে পেঁয়াজ বরাদ্দ রয়েছে। শুক্রবার বাদে বাকি ছয় দিন পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গতকাল শনিবার থেকে পেঁয়াজ বিক্রির স্পট আরো দু’টি বাড়ানো হয়েছে। স্পট দু’টি হলো নেভি চেক পোস্ট ও রূপসা স্ট্যান্ড রোডস্থ ট্রাফিক মোড়। তবে রূপসা স্ট্যান্ড রোডস্থ ট্রাফিক মোড় স্পটটি ঠিক থাকলেও অপর স্পটটির স্থান পরিবর্তন হবে। পেঁয়াজের দাম যতোদিন নিয়ন্ত্রণে না আসবে ততোদিন টিসিবি’র কার্যক্রম চলমান থাকবে।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়স্থ কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা জহিরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের দাম কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষ একেবারেই ব্যর্থ। টিসিবি খোলা বাজারে ট্রাক সেলের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও কোনো ফায়দা হচ্ছে না।
নগরীর কেসিসি সুপার মার্কেটে আসা ক্রেতা কাঠ ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, টিসিবি খোলা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও দাম কমছে না। পেঁয়াজ তরকারি রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু এই পণ্যটির দাম এত বেড়েছে যা কিনতে গেলে হিমশিম খেতে হয়। পেঁয়াজের দাম যাতে তাড়াতাড়ি নিয়ন্ত্রণে আসে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি। নগরীর ময়লাপোতা মোড়স্থ কেসিসি সন্ধ্যা বাজারে আসা ক্রেতা মোঃ রনজিত কুমার দাস বলেন, প্রতিকেজি বার্মা পেঁয়াজ আড়াইশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে পেঁয়াজ কিনতাম এক কেজি আর এখন কিনি আড়াইশ’ গ্রাম। পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমুখি হওয়ার কারণে এমন করুণ অবস্থা হয়েছে।
নগরীর রেলস্টেশন রোডস্থ কদমতলা বড় বাজারের মেসার্স ফরাজী ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী আমদানিকারক মোঃ মিলন ফরাজী বলেন, পাইকারী বাজারে চায়না পেঁয়াজ (বড়) ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, বার্মা পেঁয়াজ (ছোট) ২০০ থেকে ২১০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, তুরস্ক’র পেঁয়াজ ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, শনিবার খুলনায় কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। গত শুক্রবার খুলনায় চায়না পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল মাত্র ২ টন। যেখানে চাহিদা মেটাতে হলে খুলনায় প্রতিদিন ২০ ট্রাক পেঁয়াজ সরবরাহ করা প্রয়োজন। চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না। খুলনার মোকামগুলোতে পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, সাধারণ চায়না থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্টে রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং বার্মা পেঁয়াজগুলো বিভিন্ন পরিবারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বার্মা পেঁয়াজগুলো অনেকটা দেশি পেঁয়াজের মতো তাই এই পেঁয়াজের চাহিদা খারাপ না। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষের দিকে খুলনায় ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন হয়তো পেঁয়াজের বাজার নামতে পারে। এছাড়া দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করলে দাম অনেকটা কমে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
নগরীর কদমতলা বড় বাজার এলাকার মেসার্স রায়হান বাণিজ্য ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মোঃ আজিজুল হক বলেন, ‘বাজারে বার্মা পেঁয়াজের আমদানি কিছুটা রয়েছে। বার্মা পেঁয়াজ দেখতে অনেকটা দেশি পেঁয়াজের মতো। মোকামে পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। তবে ডিসেম্বরে দেশি পেঁয়াজ বাজারে পুরোদমে আসা শুরু করলে দাম নেমে আসতে পারে।
টিসিবি খুলনা ’র উপ -পরিচালক মোঃ রবিউল মোর্শেদ বলেন, ভোক্তাদের সাশ্রয়ের দিকে বিবেচনা করে গত ২১ নভেম্বর থেকে টিসিবি ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেলেরে মাধ্যমে খোলা বাজারে ৪৫ টাকা কেজিদরে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমদিক নগরীর ৫টি স্পটে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করলেও শনিবার থেকে আরো দু’টি স্পট বাড়ানো হয়েছে। ডিলারদের মাধ্যমে দোকানে টিসিবি’র পেঁয়াজ বিক্রি হবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অফিস আদেশএখানো অফিসে আসেনি।