চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা শহর ছেয়ে যায় পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে। নগরের প্রধান সড়কসহ প্রতিটি অলিগলির আকাশ ঢেকে রেখেছিল পলিথিন মোড়ানো সাদাকালো পোস্টার। গত শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন শেষে শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পোস্টার, ফেস্টুন বর্জ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবেশবাদীরা। বিশেষ করে কাগজের সঙ্গে মোড়ানো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন বেশি ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে। এই বর্জ্য সঠিক ও পরিবেশসম্মতভাবে অপসারিত হওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার থেকেই পোস্টার অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। পলিথিনের পুনর্ব্যবহারে (রি-সাইকেল) কথা ভাবছেন তারা।
নির্বাচনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরসহ মোট ৭৪৯ প্রার্থী অংশ নেন। এসব প্রার্থীর অধিকাংশই লেমিনেটেড পোস্টার লাগিয়েছিলেন। এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের নির্বাচনি পোস্টার থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হবে, যা পরিবেশের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর।
শীতের কুয়াশায় কাগজ দ্রুত নষ্ট হওয়ার অজুহাতে প্রার্থীরা পলিথিন মোড়ানো পোস্টার টাঙানো শুরু করেন। মাঝে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও পলিথিন মোড়ানো পোস্টার ঝোলানো বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন সংস্থার মতে, রাজধানীজুড়ে নির্বাচন উপলক্ষে শতাধিক টন পলিথিন পোস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, প্রার্থীরা পোস্টার লাগিয়ে খালাস। এসব অপসারণে তাদের কোনো দায়িত্ব নিতে দেখা যায় না। দায় গিয়ে চাপে সিটি করপোরেশনের ওপর।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, পলিথিন ব্যবহারই নিষিদ্ধ। এই বর্জ্য যেভাবেই রাখা হোক, তা পরিবেশ দূষণ করবেই। এটা সহজে ধ্বংস হয় না। দুর্ভাগ্য, জনগণের যারা প্রতিনিধি হবেন, এই নগরের পরিবেশ রক্ষা যারা করবেন, তারাই এই নিষিদ্ধ কাজটি দেদারে করেছেন। ভোট শেষে এসব পলিথিনের শেষ ঠিকানা হবে রাজধানীর নালা-নর্দমা ও নদী-খাল। এতে একদিকে জলাবদ্ধতা আরও বাড়বে। অন্যদিকে পরিবেশের ভয়ংকর ক্ষতি হবে।
পরিবেশবাদীরা আরও বলছেন, একটি অপকর্ম হয়ে গেছে। এখান থেকে তো নিস্তার নেই। তাই বাস্তবসম্মত ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পোস্টারের পলিথিন বর্জ্য অপসারণ করা উচিত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নির্বাহী সহসভাপতি ডা. আবদুল মতিন বলেন, পলিথিনের দূষণ রোধের কোনো উপায় নেই। তবে এর পুনর্ব্যবহার কিছুটা পরিত্রাণ মিলতে পারে। এজন্য সরকারের উচিত, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নগরজুড়ে ঝুলে থাকা পোস্টারের পলিথিন যথাযথভাবে অপসারণ করা।
এর আগে ২২ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন করে লেমিনেটেড পোস্টার উৎপাদন ও প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দেন। রুলে সারাদেশে নির্বাচন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে লেমিনেটেড পোস্টার ছাপানো এবং প্রদর্শন বন্ধে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। নির্বাচনের পর এসব পোস্টার অপসারণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
নগরবাসী আশা করছেন, নগরপিতারা নির্বাচনের আগে পরিচ্ছন্ন শহর গড়ার যে ওয়াদা করেছেন, পোস্টার অপসারণের মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করবেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার ভোর থেকেই তাদের পোস্টার অপসারণের কাজ শুরু হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তারা সব পোস্টার সরিয়ে ফেলবেন।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, পোস্টারে ব্যবহৃত পলিথিন মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনে মাটিচাপা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবেশের ক্ষতি হবে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এই কাজ করতে নিষেধ করেছেন।
এদিকে রোববার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দক্ষিণের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস সোমবারের মধ্যে ডিএসসিসি এলাকার সব পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী সরাতে প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোববার নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে দ্রুত নির্বাচনী পোস্টার অপসারণের অনুরোধ করেন। পোস্টারে ব্যবহূত পলিথিন রি-সাইকেল করার প্রস্তাব দেন। ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডের পোস্টার অপসারণ শুরু করেছে।
এদিকে পোস্টার অপসারণে ছোট দলগুলোর কাউকে ব্যতিক্রম দেখা গেছে। রোববার সিপিবির কর্মীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এসব পোস্টার অপসারণ করেছেন। বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম তার ফেসবুক পোস্টে একথা জানিয়েছেন।
নির্বাচনের পোস্টার এখনও অলি-গলি, পাড়া-মহল্লায় শোভা পাচ্ছে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এসব পোস্টার দ্রুত অপসারণ না করলে নগরীর ড্রেন ও ম্যানহোলে গিয়ে জমাট বাঁধার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।