সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শনিবার , ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
প্রতারকের কারসাজিতে মোবাইল সিমের বৈধ গ্রাহকও ঝুঁকিতে | চ্যানেল খুলনা

প্রতারকের কারসাজিতে মোবাইল সিমের বৈধ গ্রাহকও ঝুঁকিতে

সিলেট শহরের বাসিন্দা ফারুক (ছদ্মনাম) জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে রবির একটি সিম কার্ড কিনেছিলেন। তবে কিছুদিন পরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েন তিনি।

পুলিশের ভাষ্য, একটি নয়, একাধিক সিম কার্ড তুলেছেন এই ফারুক। সেগুলো মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে ব্যবহার হয়েছে। এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ফারুকের।

পুলিশকে তিনি বলেন, বিকাশে টাকা লেনদেন তো দূরের কথা, তার ব্যবহৃত ফোন নম্বর দিয়ে বিকাশ অ্যাকাউন্টই খোলা হয়নি। তার এমন দাবির পর পুলিশ খোঁজ নেয় ফারুকের কাছে সিম বিক্রেতার বিষয়ে। এরপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে সিম নিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) অভিযানে বেরিয়ে আসে অসংখ্য গ্রাহকের এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে সিম তুলে বিকাশ প্রতারক চক্রের কাছে সরবরাহ করার বিষয়টি।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘ফারুকের মতো মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী অনেক বৈধ গ্রাহকই এ চক্রের কারণে নাজেহাল হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। তাদের অজান্তেই তাদের এনআইডি দিয়ে সিম তোলার তথ্য পাওয়া গেছে। সেই সিমগুলো দিয়ে বিকাশের নামে প্রতারণাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সিমগুলো অন্যের নামে তুলে বিকাশ প্রতারক চক্রের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণির অপরাধীদের সরবরাহ করছে- এমন একটি চক্রের পাঁচজনকে সিলেট ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গত ১৬ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের বাকি সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

গ্রেপ্তার পাঁচজন হচ্ছেন, সিলেটের হিমন আহম্মেদ, রুবেল আহমেদ, অপু চন্দ্র দাস এবং যাত্রাবাড়ীর শাহাদাত শিকদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার জুয়েল হাওলাদার। ১৭ আগস্ট তাদের আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

সিটিটিসির জিজ্ঞাসাবাদকারী একাধিক কর্মকর্তা জানান, সিলেটের হিমন আহম্মেদ, রুবেল আহমেদ ও অপু চন্দ্র দাস মোবাইল অপারেটরদের সিম বিক্রিতে জড়িত। এদের বলা হয়ে থাকে ব্যাংক প্রমোটর (বিপি)। এদের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর শাহাদাত শিকদার ও ভাঙ্গার জুয়েল হাওলাদারের সম্পর্ক রয়েছে। মূলত শাহাদাত শিকদার সিলেটের এই চক্রের কাছ থেকে সিমগুলো নিয়ে আসেন। এরপর কখনও সরাসরি বিভিন্ন জেলার প্রতারকদের কাছে সরবরাহ করেন, কখনও জুয়েল হাওলাদারের মাধ্যমে বিক্রি করেন।

১৮০ টাকায় সিম কিনে ৫০০ টাকায় বিক্রি

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেটে এই ধরনের অবৈধ সিম বিক্রির কারবারি চক্রের হোতা হিমন আহম্মেদ। দুই সহযোগী রুবেল ও অপুর মাধ্যমেই হিমন ১৮০ টাকা দরে সিমগুলো সরবরাহ করেন যাত্রাবাড়ীর শাহাদাত শিকদারের কাছে। পরে এই সিমগুলো শাহাদাত শিকদার নিজে বা তার চক্রের অন্য কোনো সদস্যের মাধ্যমে ৪৫০-৫০০ টাকায় ফরিদপুর, নাটোর ও রাজবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতারক চক্রের সদস্যদের কাছে বিক্রি করেন।’

অন্যের এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সিম উত্তোলন

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, শহর বা গ্রামের কম শিক্ষিত মানুষ সিম কিনতে গেলে অবৈধ কারবারিরা তাদের সরলতা বা অজ্ঞতার সুযোগ নেয়। কৌশলে তাদের এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে একাধিক সিম তোলে। বৈধ গ্রাহকের কাছে একটি বিক্রি করে বাকিগুলো অপরাধীদের দেয়। অনেক সময় গ্রাহকের কাছ থেকে এনআইডি নম্বর ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে বলে সার্ভারের সঙ্গে মিলছে না। এ জন্য সিম দেয়া যাচ্ছে না। এরপর সেই গ্রাহকের সিম তুলে অপরাধীদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এসব কারণে অনেক সময় নিরপরাধ মানুষ হয়রানিতে পড়েন, অনেকে ফেঁসেও যান।

সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, অসাধু কারবারিরা বৈধ গ্রাহকদের এনআইডি বা স্মার্ট কার্ড দিয়েই অবৈধভাবে সিম তুলে থাকে। একজন গ্রাহক যেহেতু ১৫টি সিম তুলতে পারেন- সেই সুযোগটিই নেয় এসব কারবারি। এ ছাড়া স্মার্ট এনআইডি ও পুরোনো এনআইডি- এই দুই আইডি দিয়েই একই ব্যক্তির ৩০টি পর্যন্ত সিম তোলার সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনার সুযোগ নিয়ে এসব সিম অপরাধীদের কাছে চলে যাচ্ছে। যার এনআইডির মাধ্যমে এসব সিম তোলা হয়, সেই এনআইডির নম্বর ব্যবহার করেই বিকাশ অ্যাকউন্ট খোলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।

প্রতারকদের পছন্দের শীর্ষে রবি

সিটিটিসি জানায়, গ্রেপ্তার পাঁচজনের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ৫০৪টি সিম বিশ্লেষণ করে ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য বলছে, প্রতারকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে রবি অপারেটরের অবৈধ সিম। এরপর রয়েছে এয়ারটেল, বাংলা লিংক ও অন্যান্য অপারেটরের সিম।

এর কারণ হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতরা কোনো তথ্য না দিলেও তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, সংশ্লিষ্ট অপারেটরের ডিস্ট্রিবিউটর বা ব্যাংক প্রমোটররা সরাসরি এসব সিম সরবরাহে যুক্ত। এ জন্যই এই সিমগুলো সহজেই প্রতারক চক্রের হাতে চলে যাচ্ছে।

সিটিটিসির ভাষ্য, পাঁচজনের কাছ থেকে যে ৫০৪টি সিম উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলোয় বিকাশ অ্যাকাউন্টও খোলা। অর্থাৎ ভুয়া সিম তুলে ভুয়া অ্যাকাউন্টও করে প্রতারকরা।

প্রতারণায় ভাঙ্গাকে ছাড়িয়ে গেছে শ্রীপুর

ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারকদের ঘাঁটি হিসেবে অতীতে পরিচিত ছিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলা। এর পাশাপাশি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার চরমহেষপুর গ্রামে এ ধরনের প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে। তাদের তৎপরতা এখন ভাঙ্গা ও মধুখালীর প্রতারকদের চেয়ে বেশি।

কর্মকর্তাদের তথ্য বলছে, শ্রীপুর উপজেলার চরমহেষপুর গ্রামটি গড়াই নদীর পাড়ে। থানা থেকে গ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার হওয়ায় পুলিশ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারকরা গড়াই নদী পার হয়ে রাজবাড়ীতে আত্মগোপন করে। বর্তমানে এই চরে প্রায় ৪০০ প্রতারক সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় দুই হাজার প্রতারক আছে। মধুখালী উপজেলার ডুমাইন গ্রামে সক্রিয় আছে ২০০-৩০০ প্রতারক। এসব প্রতারকের অধিকাংশই সিলেটের অবৈধ কারবারিদের মাধ্যমে সিম সংগ্রহ করে। এর বাইরে নাটোরের বিলমারিয়া গ্রামে ইমো প্রতারক চক্রের ২০০-৩০০ সদস্য রয়েছে, যারা এসব অবৈধ সিম ব্যবহার করে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদকারী কর্মকর্তাদের তথ্য বলছে, অপারেটরদের ডিস্ট্রিবিউটররা সিম সরবরাহ করে ব্যাংক প্রমোটরদের (বিপি)। তারা সিম বিক্রির মাসিক টার্গেট পূরণ না করলে তাদের বেতন আটকে দেয়া হয়। এ জন্য অনেক বিপি অবৈধভাবে সিম তুলে রাখেন এবং সুবিধামতো সময়ে অপরাধীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

যা বলেছেন বিকাশের হেড অফ পিআর

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিকাশের হেড অফ পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘বিকাশের নামে যারা প্রতারণা করে থাকে তাদের ব্যাপারে বছরজুড়েই আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে ক্যাম্পেইন চালাই। গ্রাহকদের সচেতন করে থাকি। আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই বলে দেয়া হয়, বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন কিংবা ওটিপি কখনোই আরেকজনের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। প্রতারকরা মূলত কথার জালে মোহাচ্ছন্ন করে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেয়।’

এতে বিকাশই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ আমাদের গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের ইমেজ তারা নষ্ট করছে। অথচ গণমাধ্যমে বিকাশ প্রতারক চক্র নাম দিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে মনে হতে পারে, বিকাশ নিজেই প্রতারক। এটি মোটেও ঠিক নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘যত ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটে সব ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে আমরাই সহযোগিতা করে থাকি তাদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে।

‘তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিশেষ করে “বিকাশ প্রতারক চক্র” নাম দিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে অনেকের কাছে মনে হতে পারে- বিকাশ নিজেই প্রতারক চক্র! কাজেই এভাবে উপস্থাপন না করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করা উচিত।’

বৈধ গ্রাহকদের এনআইডি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করে তাদের অজান্তে বিভিন্ন বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটদের ডিস্ট্রিবিউটর ও খুচরা বিক্রেতারা সিম তুলে অপরাধীদের কাছে বিক্রি করছে। বিষয়টি বৈধ গ্রাহকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছেও এসেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। অপারেটরদের সিম বিক্রির জন্য যারা নিয়োজিত তাদের কাছে কোন কোন গ্রাহকের কয়টি করে সিম বিক্রি হচ্ছে সেসব তথ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি গ্রাহকের এনআইডি কার্ড ও ছবি সংরক্ষণ করতে হবে বিক্রেতাদের। ‘এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করতে হবে। একই ব্যক্তি তার পুরোনো এনআইডি ও নতুন স্মার্ট কার্ড দিয়ে পৃথকভাবে যাতে সিম কার্ড তুলতে না পারেন সে বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সূত্র: নিউজবাংলা

https://channelkhulna.tv/

আইন ও অপরাধ আরও সংবাদ

ডুমুরিয়ায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২০২৪ র‍্যালী ও আলোচনা সভা

তালায় অপরিপক্ক আম জব্দ : ব্যবসায়ীকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা

পাইকগাছায় গাঁজাসহ মহিলা আটক

খুলনায় দু’টি দেশী অস্ত্রসহ আটক ২

খুলনা সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পা’র সাফল্যগাঁথা কর্মময় জীবন

খুলনায় অবৈধভাবে প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটার প্রতিষ্ঠানে বিএসটিআইর সার্ভিল্যান্স অভিযান

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
উপদেষ্টা সম্পাদক: এস এম নুর হাসান জনি
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: শেখ মশিউর রহমান
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২২ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
ঢাকা অফিসঃ ৬৬৪/এ, খিলগাও, ঢাকা-১২১৯।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্তির জন্য আবেদিত।