শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আব্দুল মুকিম মিয়া। আর দশজনের মত শেষ স্বাভাবিক চলা ফেরা করতে পারেন না তিনি। তার পরেও জীবন ও জীবিকার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা অন্যের কাছে হাত না পেতে সরাসরি কৃষিতে নিয়োজিত করেছেন নিজেকে। কৃষিকাজ করেই ছয় সদস্যের পরিবারের নির্বাহ করেন মকিম। এসবের পরেও সব বাধা পেরিয়ে ছেলেমেয়েকে পাঠিয়েছেন বিদ্যালয়ে।
মকিম মিয়া সাতক্ষীরা জেলার সদর উপজেলার বাঁশদাহ ইউনিয়নের ভাবানিপুর গ্রামের বাসিন্দা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একখন্ড জমিতে সবজি চাষ করে তিনি এখন সফল কৃষক।
আব্দুল মকিম মিয়া জানান, তার একখন্ড জমিতে পর্যায়ক্রমে ধান, গম ও সরিষার চাষ করেন। নিজেই প্রায় সব কাজ করেন। তার এই কাজে স্ত্রী তাকে সাহায্য করেন। জন্মগতভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দিনের আলোতে সব কিছু ঝাঁপসা দেখলেও রাতে মোটেও দেখতে পায় না তিনি। এছাড়া তার শরীরেও রয়েছে নানা সমস্যা। এমনকি বিভিন্ন সময় নানান রোগে ভোগেন তিনি। মকিম মিয়া শারীরিক অক্ষমতায় ভারী কোনো বস্তু মাথায় তুলতে পারেন না। তবে কোমরে ভর দিয়ে সার, বীজ, শস্য আনা-নেওয়া করতে পারেন। এভাবেই বাড়ির পাশের ৩০ শতাংশ জমিতে শীতে চাষ করেছেন গম ও সরিষার। নিজে খাওয়ার জন্য আইলের পাশে কিছু অন্য সবজিও চাষ করেছেন। পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এসব বিক্রি করেই চলবে তার সংসার।
বিভিন্ন সময় কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজ দেওয়া হলেও তার ভাগ্যে কখনো তা জোটেনি। তার পরেও থেমে নেই তার এই সংগ্রাম। তবে সহজে চালানো যায় এমন কীটনাশক ছিটানো, ধান মাড়াই করা যন্ত্রপাতি পেলে কারও সহায়তার দরকার হবে না মকিমের। তখন পরিবার নিয়ে আরো স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।
সচেতন মহল মনে করেন, সরকার কৃষিতে আধুনিকায় যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করেছে। এই আওতায় প্রতিবন্ধী কৃষকদের সহায়তা করা গেলে তাদের জীবন মানের আরো উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে। তাই কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য তাদের বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করা হলে অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের আর্থিক সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে।