খুলনার কয়রায় ইয়াসের প্রভাবে নদীর দুর্বল বাঁধ ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার মানুষের মাঝে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ নামক খাদ্য সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলা প্রসাশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মহারাজপুর ইউনিয়নের দেয়াড়াস্থ বেড়ের খাল নামক স্থানে স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন পশ্চিম দেয়াড়া একতা সংঘের সহায়তায় দেয়াড়া পশ্চিমপাড়া (মাদিয়া) এলাকার ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার’ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম দেয়াড়া-জয়পুর মসজিদের ইমাম প্রভাষক মোঃ নজরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী মোঃ মফিজুল ইসলাম গাজী, আওয়ামী লীগ কর্মী আজিজ গাজী, সাইফুজ্জামান লান্টু, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আল আমিন হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ হাসান বাপ্পী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ তৈয়েবুর রহমান প্রমুখ।
বিতরণ করা শুকনো খাবারের বস্তায় উন্নত ও মানসম্মত খাবার পেয়ে অসহায় মানুষ খুবই সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের প্যাকেট খুলে দেখে অনুভুতি ব্যক্ত করতে যেয়ে চায়ের দোকানদার মোঃ মুজাহিদ মালী বলেন, ‘মিনিকেট চালের নাম শুনেছি কিন্তু জীবনে কখনও কিনে খাওয়ার সুযোগ হয়নি। আজ পেয়ে আমি মহাখুশি।’ তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়াকরা সহ ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
উপহার পাওয়া আরেক ব্যক্তি জিয়াউর রহমান টুটুল বলেন, ভাবতে পারিনি এত উন্নতমানের খাদ্য পাবো? আমাদের গ্রামে এমন সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে এত উন্নত ত্রাণ আগে কখনও দিতে দেখিনি। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
ভ্যান চালক হযরত আলী বলেন, এত বড় ও সুস্বাদু চিড়া আমাদের এদিকে কোথাও বিক্রি হতেও দেখিনি। আমাদের মা জননী প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। এমপি বাবু ভাই ও ইউএনও স্যারকেও ধন্যবাদ।
বিধবা রাহেলা খাতুন জানান, আমি খুবই খুশি হয়েছি। আমার কেউ না থাকায় অনেকেই আমাকে ত্রাণ দেয়, তবে এত ভালো তেমন কেউ দেয় না।
দিনমজুর আকরাম হোসেন বলেন, চাল, তেল, চিড়াসহ সবগুলো মালামাল অত্যন্ত ভালো পেয়েছি।
শুধু মুজাহিদ, টুটুল, হযরত, রাহেলা ও আকরাম নয়, উপহার পাওয়া ৩৫ জনই উন্নত খাবার পেয়ে অত্যন্ত খুশি। সকলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া করেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি কয়রার দশহালিয়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ সকল স্থানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিও জানান।
এ এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ ও অসহায় প্রতিটি পরিবারকে ১০ কেজি উন্নতমানের মিনিকেট চাউল, ২ কেজি চিড়া, ২ কেজি মসুরের ডাল, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি সয়াবিন তেল, ১ কেজি লবণ, ১ প্যাকেট নুডুলস্ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসের সৈকত বলেন, দ্বিতীয় দফায় খুবই উন্নতমানের এক হাজার বস্তা খাদ্য সামগ্রী কয়রার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেগুলোর বিতরণ চলমান রয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় সাতশ’ পঞ্চাশ বস্তা বরাদ্দ পেয়েছিলাম। এছাড়া ৫ মেট্রিক টন চাল, দেড় লাখ টাকার শুকনা খাদ্য, এক লাখ টাকার শিশু খাদ্য, এক লাখ টাকার গো-খাদ্যসহ নগদ ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়রার করোনা আক্রান্ত, দূর্গত ও অসহায় বানবাসী মানুষের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারসহ অন্যান্য সরকারি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ৪ জুন বিকেল ৫টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে খাবার বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক ( ত্রাণ শাখা ) মোঃ আনিছুর রহমান। উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস, জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দ্দার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকতসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মিডিয়া কর্মিবৃন্দ।