চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসুন্দরবনে জলদস্যু-বনদস্যু আত্মসমর্পনের পর স্বাভবিক জীবনে ফিরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। হত্যা ও ধর্ষণ বাদে বিচারাধীন ও তদন্তাধীন অন্যান্য মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি ছিলো। অবশেষে সেই প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন হতে চলেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফেরা আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যুদের ২১টি বাহিনীর ৭৩ জন সদস্যের মোট ১০৫টি মামলা প্রথম দফায় প্রত্যাহারের সুপারিশ ইতোমধ্যে খুলনায় এসেছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত ওই তালিকার বিষয়ে খুলনার সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে। এর মানে খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরা বনদস্যুদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন।
প্রথম দফায় প্রত্যাহারের তালিকায় থাকা খুলনা জেলার মামলাগুলো হলো কয়রা থানার ৪৩টি, দাকোপ থানার ৪০টি, বটিয়াঘাটা থানার ৩টি, সোনাডাঙ্গা থানার ২টি, পাইকগাছা থানার ১টি, খানজাহান আলী থানার ১টি, ডুমুরিয়া থানার ২টি, খুলনা সদর থানার ৯টি, রূপসা থানার ১টি ও ফুলতলা থানার ১টি এবং কোর্ট এসটিসি ২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ অস্ত্র, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজির অভিযোগ সংক্রান্ত ধারার মামলা।
প্রথম দফায় তালিকায় থাকা সাবেক দস্যুবাহিনী ও সদস্যরা হলো মাস্টার বাহিনীর ২ জন সদস্য, মজনু বাহিনীর ৯ জন, ইলিয়াস বাহিনীর ২ জন, শান্ত বাহিনীর ১ জন, খোকাবাবু বাহিনীর ২ জন, সাগর বাহিনীর ৩ জন, নোয়া বাহিনীর ২ জন, জাহাঙ্গীর বাহিনীর ৩ জন, ছোট রাজু বাহিনীর ৬ জন, আলিফ বাহিনীর ৫ জন, কবিরাজ বাহিনীর ১ জন, মজিদ বাহিনীর ৩ জন, মানজু বাহিনীর ২ জন, বড় ভাই বাহিনীর ৪ জন, ভাই ভাই বাহিনীর ৫ জন, সুমন বাহিনীর ৫ জন, ডন বাহিনীর ৫ জন, ছোট জাহাঙ্গীর বাহিনীর ২ জন, ছোট সুমন বাহিনীর ৩ জন, সূর্য্য বাহিনীর ১ জন ও মুন্না বাহিনীর ৫ জন। পর্যায়ক্রমে সকল আত্মসমর্পণকৃত বনদস্যু-জলদস্যুদের নামে পূর্বের মামলা প্রত্যাহার হবে বলে জানা গেছে।
২০১৫ সালের ৩১ মে বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের ফুয়েল জেটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫ হাজার রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দিয়ে মাস্টার বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে সুন্দরবনে দস্যুতায় লিপ্ত থাকা ২৬টি বাহিনীর সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেন। সর্বশেষ ২০১৮সালের ১ নভেম্বর বাগেরহাট স্টেডিয়ামে সাত্তার বাহিনী, শরিফ বাহিনী, সিদ্দিক বাহিনী, আল-আমিন বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও তৈয়ব বাহিনীর প্রধানসহ সদস্যরা আত্মসমর্পণ করে। ওই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জলদস্যু-বনদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪০ বছর পর গোটা সুন্দরবন বনদস্যু মুক্ত হয়। বনজীবী ও উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। আত্মসমর্পণকৃত মোট ৩২টি বাহিনী প্রধানসহ সর্বমোট ৩২৮ বনদস্যু সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তারা র্যাবের হাতে তুলে দেয় ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৩ হাজর ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ।
চলতি বছরের গত ১লা নভেম্বর সুন্দরবনকে বনদস্যু-জলদস্যু মুক্ত ঘোষণার প্রথমবর্ষ পালিত হয়। ওইদিন দুপুরে বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে আয়োজিত দস্যুমুক্ত সুন্দরবনের প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করতে সরকারকে সহায়তা করায় দৈনিক সময়ের খবরের নিজস্ব প্রতিবেদক সোহাগ দেওয়ানকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়।