চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃপছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মা মাহমুদা বেগমকে (৪৫) প্রেমিক ও তার বন্ধুদের দিয়ে হত্যা করায় মেয়ে জুলেখা আক্তার জ্যোতি। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকালে মানিকগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় গ্রেপ্তারকৃত মেয়ে জ্যোতি, প্রেমিক নাঈম ও তার সহযোগী রাকিব।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে গত ২২ জানুয়ারি সকালে মানিকগঞ্জ শহরের দক্ষিণ সেওতা এলাকায় নিজ বাড়িতে শ্বাসরোধে মাহমুদা বেগমকে হত্যা করা হয়। এই হত্যায় অংশ নেয় জ্যোতির প্রেমিক নাঈম ইসলাম ও তার তিন সহযোগী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই শামীম আল মামুন জানান, মাহমুদা বেগমকে নিজ ঘরে খাটের ওপর লেপচাপায় শ্বাসরোধে হত্যার পর জ্যোতিকে হাত, পা, মুখ বেঁধে স্বর্ণালঙ্কার লুটের নাটক সাজায় তারা। কিন্তু একদিনের মাথায় পুলিশের তদন্তে তা ফাঁস হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, গত বুধবার সকালে হত্যাকাণ্ডের সময় বাড়িতে থাকা নিহতের একমাত্র মেয়ে জ্যোতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই দিনই থানায় ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে সে। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার বিকালে মানিকগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল আদালতে পাঠানো হয়।
হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে অধিকতর তথ্য আদায়ের লক্ষ্যে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। পরে বিচারক ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুক্রবার বিকালে নিহতের স্বামী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় মেয়ে জ্যোতি আক্তার, কথিত প্রেমিক নাঈম ইসলাম এবং তার সহযোগী রাকিব ও অন্য দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তদন্তের স্বার্থে ওই দুই সহযোগীর নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, শুক্রবার রাতে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, জ্যোতি আক্তার তার মায়ের হত্যাকাণ্ডে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই তার কথিত প্রেমিক কেরানীগঞ্জের আরাকুল গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে নাঈম ইসলাম (২৫) এবং তার সহযোগী একই গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে রাকিবকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরও দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
তিনি জানান, জ্যোতির সঙ্গে মোবাইল ফোন-ফেসবুক-ম্যাসেঞ্জারের আলাপচারিতায় ৮ মাস আগে ভোলার নির্মাণ শ্রমিক নাঈমের সঙ্গে জ্যোতির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে তার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না জ্যোতির মা। সে কারণে তিন মাস আগে জ্যোতি ও নাঈম পরিকল্পনা করে মাকে হত্যা করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতেই নাইম ও তার ৩ সহযোগী জ্যোতির ঘরে প্রবেশ করে। রাতে কয়েক দফা চেষ্টা করেও হত্যার সুযোগ পায়নি। পরে সকাল ৭টার দিকে জ্যোতির বাবা ফজরের নামাজ শেষে ঘর থেকে বের হলে তারা মাহমুদা বেগমকে হত্যা করে।