চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবাংলাদেশে সম্প্রতি ‘বোতল বাড়ি’র বেশ আলোচিত হয়েছে। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে রাশেদুল আলম ও আসমা খাতুন দম্পতি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে তৈরি করেছেন অসাধারণ একটি বাড়ি। যা দেখার জন্য এখন অনেকেই সেখানে ভিড় করেন। তবে আরেক ধাপ এগিয়ে এবার পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টের একটি সম্প্রদায়। তারা পরিত্যক্ত বোতল এবং অন্যান্য প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করে সেখান থেকে ইট বানিয়েছেন। সেই ইট দিয়ে বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত এক স্কুল। ইউনিসেফের সহযোগিতায় দেশটিতে প্লাস্টিক বর্জ্যের তৈরি ইট দিয়ে ২৬টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ আইভরি কোস্ট। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে দেশটির ১০ লাখ ৬০ হাজার শিশু স্কুলে যেতে পারে না। তবে ২০১৮ সাল থেকে ইউনিসেফের সহায়তায় প্লাস্টিক বর্জ্যকে ইটে রূপান্তর করা শুরু হয়। ভবন বানাতে যেসব উপকরণের প্রয়োজন হয়, তার তুলনায় প্রায় অর্ধেক দামে বর্জ্য থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ২৬টি শ্রেণিকক্ষ। কেবল একটি হাতুড়ি ব্যবহার করেই স্কুল তৈরি করা হয়েছে।
অ্যাঞ্জেলিনা দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন। তিনি শতাধিক বাচ্চাকে পাঠদান করে থাকেন। শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ আমি এমন একটি শ্রেণিকক্ষ পড়াই যেখানে নিঃস্বাস নেয়াও দুস্কর। বাচ্চারা ঠিকমতো বসার জায়গা পায় না।’ এই সমস্যা সমাধানে ইউনিসেফ ও কলোম্বিয়ার একটি কোম্পানি ‘কনসেপটোস প্লাস্টিকোস’ মিলে প্লাস্টিক থেকে ইট তৈরীর পদ্ধতি কাজে লাগায়। আগামী দু’বছরে তারা ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৫২৮ টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
ইউনিসেফের মুখপাত্র নরম্যান মাহুওয়াজি বলেন, ‘ইটগুলো শতভাগ প্লাস্টিক থেকে তৈরি। এগুলো আগুন ও পানি প্রতিরোধক। এই ইট দিয়ে ঘর বানাতে সিমেন্ট বা বালুর প্রয়োজন হয় না। একটি শ্রেণিকক্ষ বানাতে আমাদের তিন সপ্তাহ থেকে একমাস সময় লাগে।’ দেশটির মাত্র পাঁচ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলিং করে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।
ইউনিসেফ আইভরি কোস্টেই একটি প্লাস্টিক ইট তৈরির কারখানা নির্মাণ করেছে। যাতে দেশেই এই ইট উৎপাদন করা যায়। অ্যাঞ্জেলিনা বলেন, এই উদ্ভাবনের ফলে মানুষ ফেলে দেয়া পলিথিন ব্যাগের গুরুত্ব বুঝতে পারছে। এগুলো পুরায় ব্যবহার করা যাচ্ছে। এতে করে পরিবেশ দূষণও অনেকাংশে কমে গেছে। তাছাড়া এই পরিকল্পনা দেশটির নারীদের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করেছে। কেননা তারা বর্জ্য সংগ্রহের জন্য মজুরি পাচ্ছেন। ফলে দরিদ্র সীমার নিচে বাস করা নারীদের ভাগ্যও খুলেছে।