এম.পলাশ শরীফ, বাগেরহাট থেকেঃ বাগেরহাটের ফকিরহাটে দিন দিন বাড়ছে উদ্যোক্তা।চাকরীর পিছনে না দৌড়ে নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য ঘুরানোর জন্য হয়ে গেছেন উদ্যোক্তা। শুধু নিজে সাবলম্বী নই সাবলম্বী করেছেন এলাকার বেকার যুবকদের।সাম্প্রতিক করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের পোল্ট্রি শিল্পে কিছুটা দুর্যোগ নেমে এসেছিল। তবে এই করোনা প্রভাবের মাঝেও ভীত না হয়ে নিজেদের খামারের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ায় আবারো ক্রেতাদের আস্থা ফিরে আসছে পোল্ট্রি শিল্পে। এতে নতুন করে আশার আলো দেখছেন উপজেলার পোল্ট্রি খামারিরা। কিছুদিন আগেও পোল্ট্রি খামারিরা মুরগির দাম না পেয়ে দিশেহারা ছিলেন। ফকিরহাট সহ সারা দেশে লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথে বয়লার মুরগি কেজি নেমে এসেছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। যা পানির দামের চেয়েও অনেক কম। অনেক পোল্ট্রি খামারি উৎপাদিত মুরগি ফেলে দিতেও বাধ্য হয়েছিলেন। ডিম বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে অনেক খামারিই।ফলে অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এখন পোল্ট্রি ও বয়লার মুরগির দাম বাড়ায় খামারিদের মুখে হাসি ফুটেছে।অনেক জায়গায় লকডাউন খুলে দেয়া হয়েছেছিল। ফলে ক্রেতা বাড়ার কারণে মুরগি ও ডিমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। উপজেলার লখপুর এলাকার খামারি মোঃ মোশাররফ হোসেন এর সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের শুরুতে মুরগি ও ডিমের চাহিদা ব্যাপক হারে কমে যায়। এতে খামারিরা লোকসানে কম দামে মুরগি ও ডিম বিক্রি করেন। যে কারণে তারা নতুন বাচ্চা উৎপাদনে যাননি। আগের যে বাচ্চা ছিল সেই বাচ্চা বড় করে বিক্রি করা হচ্ছে। লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলে মানুষের বাইরে বের হওয়ার হার বাড়ে এবং বাজারে কেনাকাটার পরিমাণ বেড়েছে। এতে পোল্ট্রি মুরগি ও ডিমের চাহিদাও বেড়েছে। তবে করোনার কারণে আমরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, তা কাটিয়ে উঠতে কিছু দিন সময় লাগবে। তিনি আরো বলেন,আমি এই ব্যবসায় দীর্ঘ ২০ বছর। আমি অনেকটাই স্বাবলম্বী। তাছাড়া আমার ফার্মে বর্তমানে ২০০০০ এর মত মুরগী আগে। এখানে প্রায় ৩৬ জন কর্মী কাজ করেন।তারাও আগের তুলনায় অনেকটাই স্বচ্ছল হয়েছে। তবে করোনার কারণে আমাদের ক্ষতি হয়েছে কিছুটা।বড় খামারিদের সমস্যার থেকেও বেশি সমস্যায় আছে এই উপজেলার ক্ষুদ্র খামারিরা।তাদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি।তাই সরকার যদি সহযোগিতা ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা করে তবে কেউ এই ব্যবসায় বিমুখ হবেনা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ পুষ্পেন কুমার শিকদার বলেন,ফকিরহাট উপজেলায় প্রায় সাড়ে চারশত এর মত পল্ট্রি খামার রয়েছে। প্রতিদিন এই উপজেলা থেকে ২ লক্ষাধীক ডিম উৎপাদন হচ্ছে। আমরা সব সময় তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি।তাদের খামার পরিদর্শনের ভিত্তিতে আমরা পরামর্শ প্রদান করে আসছি।সম্প্রতি এই খামারিদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য, বিশেষ করে করোনার মহামারীর কারণে আমরা আমাদের অধিদপ্তর থেকে খামারিদের মাঝে বিশেষ নগদ অর্থ সহায়তা প্রনোদনা দেওয়া হবে। আমরা ইতিমধ্যে ৪০০ জন পল্ট্রি খামারীদের মাঝে এই প্রনোদনা দেওয়ার জন্য।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় নামের তালিকা তৈরি করে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।আশা করি খুব দ্রুত তারা সেই প্রনোদনা পেয়ে যাবে। আর এতে করে উদ্যোক্তদের মনোবল বৃদ্ধি হবে বলে ও অনেকেই আগ্রহী হবে বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস আদালত ও পরিবহন, রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এতে খামারিদের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ইতোমধ্যে সরকার কৃষিক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো ডেইরি, পোল্ট্রি এবং মৎস্য খামারিরাও পাবেন। প্রণোদনা পেলে করোনাভাইরাসের কারণে খামারিদের যে ক্ষতি হয়েছে তা তারা পুষিয়ে নিতে পারবেন।