চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃজাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলায় একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে চক্ষু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের আওতায় চারতলা ভবন নির্মাণে এ দুর্নীতি তথ্য সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত হলে ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করা হয়। এ অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য মন্ত্রণালয় ও প্রধান প্রকৌশলী সুপারিশ করলেও অডিট বিভাগ নারাজি দিয়েছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১২তম বৈঠক থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ২০১১-১২ আর্থিক বছরের নিরীক্ষায় এ দুর্নীতি ধরা পড়ে।এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী বৈঠক শেষে টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলায় প্রতিষ্ঠান নির্মাণও দুর্নীতির বাইরে নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেলা। প্রধানমন্ত্রীর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান। দুর্নীতিবাজদের লজ্জা থাকা উচিত। এ জন্য কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনার মাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নার্সদের জন্য ইউনিটের ৮০০ বর্গফুটের কোয়াটার নির্মাণকাজে দ্বিতীয় দরপত্রদাতাকে রেস্পন্সিভ করে প্রথম দর দাখিলকারীকে সংশোধন করে দ্বিতীয় নিম্নদর অপেক্ষা উচ্চমূল্যে চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৪১ হাজার ৯৬৫ টাকা।
নিরীক্ষায় দেখা যায়, বর্ণিত কাজে মো. আব্দুল খালেক ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪২ টাকা সর্বনিম্ন দরদাতা ছিলেন। দ্বিতীয় দরদাতা ইহা ডেল্টা অ্যান্ড বেনজির কনস্ট্রাকশনের দরপত্র মূল্য ৯ কোটি ৭৯ লাখ ৬৩ হাজার ৮০ টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অনিয়মিতভাবে দ্বিতীয় দরপত্র নন রেস্পন্সিভ করে দরপত্রের মূল্য সংশোধন করে উচ্চ দরে মোহাম্মদ আব্দুল খালেক এর সাথে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭ টাকা চুক্তি সম্পাদন করে। তবে দরপত্রসমূহ নিরীক্ষায় তা উপস্থাপন হয়নি।
পিপিআর/২০০৯ এর বিধি ৯৮(৬) ও ৯৮(১২) অনুযায়ী অতি গুরুত্বপূর্ণ আপত্তিকর বলে গণ্য হবে যদি কোনো কার্যক্রমে কাজের পরিমাণ বা হিসাব সম্বলিত বিবরণীর কোনো আইটেমের মূল্য প্রদান না করা হয়, তাহলে ক্রয় মূল্য অন্যান্য আইটেমের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করবে এবং উক্ত কারণে দরপত্র মূল্য পরিবর্তন করা যাবে না। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর আইন (৬৪)(১) অনুযায়ী ক্রয় কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী এ আইন বিধি লংঘন করে কোনো কার্যক্রয় করতে পারবে না। কিন্তু তারা এ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন।
এ নিয়মের জবাব চাইলে যে জবাব পাওয়া যায় নিরীক্ষা বিভাগ তা প্রত্যাখ্যান না করে বলে- জবাব গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ জবাবের সমর্থনে রেকর্ড পত্রাদি নিরীক্ষা উপস্থাপন করা হয়নি। উক্ত অনিয়মের বিষয়ে ২০০৩ সালের ৪ আগস্ট সচিব বরাবর অগ্রিম অনুচ্ছেদ জারি করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ১ অক্টোবর তাগিদপত্র ইস্যু করা হয় এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর আধা সরকারি পত্র জারি করা হয়। সর্বশেষ জবাবে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রধান গণপূর্ত অধিদফতরের কার্যালয় এ অডিট নিষ্পত্তির আবেদন করে। সেই সূত্র ধরে মন্ত্রণালয়ও অনুরোধ করে। কিন্তু অডিট অধিদফতর তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
নিরীক্ষার সুপারিশে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ পূর্বক সংশ্লিষ্টদের নিকট থেকে এ টাকা আদায় করা প্রয়োজন।
জানা যায়, বৈঠকে এ অডিট আপত্তিসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদফতরের ৭টি অডিট আপত্তির ওপর আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। অনিষ্পন্ন আপত্তিগুলোর ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। এছাড়া দায়ীদের কাছ থেকে দ্রুততার সাথে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে সভাপতি বলেন, চলমান প্রকল্পগুলোতে যেন দুর্নীতি না হয় সে জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ঘোষণা করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মা যেন শান্তি পায় এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ যেন উজ্জ্বল হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
মো. রুস্তম আলী ফরাজীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ, মো. আফছারুল আমীন, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জহিরুল হক ভূঞা মোহন, আহসানুল ইসলাম (টিটু), মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, মো. জাহিদুর রহমান বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী, সিএজি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।